দেশে এখন
0

দিশাহারা স্বজন, একটাই চাওয়া হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শাস্তি

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শরীয়তপুরে এক শিক্ষার্থীসহ নিহত হয়েছেন ৫ জন। যাদের গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে এখনও শোকের মাতম। পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিতে হারিয়ে দিশেহারা স্বজনরা। এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন কেউই। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন স্বজনহারা পরিবারগুলো।

প্রিয় সন্তানের রক্তমাখা প্যান্ট, ঘড়ি আর বেল্ট; এই সবই এখন মায়ের কাছে শুধুই স্মৃতি। আদরের সন্তানের এসব জিনিস সযত্নে আগলে রেখে দিন-রাত মায়ের আর্তনাদ।

নিহত ছাত্রের মা বলেন,'ভাইজ্জা যদি কোনোদিন ডিম রান্না করতাম তাহলে ওই খাইতো। ও খাইতো চিংড়ি মাছ ভালো খাবার খাইতে চাইতো । যেই দিন হুদা ভাত রানতাম ও একটুও মুখে নিতো না। আমারে বলে মা আমি না দুইটা প্যান্ট কিনছি আর দুইটি শার্ট কিনছি । আমি বলছি বাবা লাগলে তো কিনতোই হইবো। মা অফিসে যায় ভালো জিনিস না পড়লে মানুষ মন্দ কয় না।'

শরীয়তপুর রাজনগর এলাকার জুনায়েদ। খেটে খাওয়া নিরীহ জুনায়েদের ছিল না রাজনৈতিক পরিচয়। পরিবারের হাল ধরতে কাজের খোঁজে এসেছিল ঢাকায়। যা বেতন পেতেন তা দিয়ে ভাই-বোনের লেখাপড়ার খরচ মেটাতেন। আশা ছিল উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করবেন ভাই বোনকে। তবে তার সেই আশা আর পূরণ হলো না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ১৯ জুলাই প্রাণ হারাতে হয়েছে জুনায়েদ ফরাজিকে।'

স্বজন ও স্থানীয় চেয়ারম্যানরা বলেন যে,'আমি ওর জন্মের পর দেখি নাই ওর নামে কোনো অভিযোগ আছে। মোটামুটি আমার দৃষ্টিকোণ থেকে ভালো আছে।' 'এমন ছিল আমার দাদার চেহারা হাজারকার মধ্যে একজন।'' ১৯শে জুলাই ও দোকান বন্ধ করে নিচে নামছে দেখে যে মারপিট লাগছে ছাত্র জনতা ও প্রশাসক এ্‌ই মুহূর্তে সে গুলিবিদ্ধ হয়।'

জুনায়েদের মতো একই দিন প্রাণ হারায় শরীয়তপুরের শৌলপাড়া চরচিকন্দি গ্রামের মামুন। নিহতের কবরের পাশে স্বজনদের কান্না। সরকারি তিতুমির কলেজের শিক্ষার্থী মামুন পড়াশুনার পাশাপাশি করতেন ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ। অসুস্থ বাবার চিকিৎসা আর দরিদ্র পরিবারের হাল ধরেছিলেন তিনি। পরিবারের সবার মুখে হাসি ফোঁটাতে ২২ জুলাই মধ্য আমেরিকার দেশ বেলিজের ফ্লাইট ছিল তার। হলো না বিদেশ যাত্রা, ঘাতকের গুলিতে চলে গেলেন পরপারে। স্থানীয়দের কাছে মেধাবী ও ভদ্র হিসেবে পরিচিত ছিলো মামুন মিয়া।

স্বজন ও শিক্ষকরা বলেন,'আমারে ডাক্তারের কাছে নিয়া যাইবো দেখাইবো শরীয়তপুর।' 'বয়সে আমার ছোটো কিন্তু ও আমাকে অনেক অনুপ্রেরণা দিয়েছে আর ৭টা রাষ্ট্র ভিজিট করছি এর পিছনে ওর অনেক অবদান আছে। আমাকে বলতো আপনি কোনো টেনশন করবেন না।' 'পড়াশুনার শেষ করে ও বাইরে যাওয়ার জন্য ট্রাই করছিলো। পড়াশুনার পাশাপাশি ও চাকরি করতো ।' 'অনেক টাকা পয়সা খরচ কইরা আমার বাবারে পড়াশুনা করাইছি।'

ঘাতকের গুলিতে একইভাবে প্রাণ হারাতে হয়েছে শরীয়তপুর সদরের আবুরা গ্রামের রিয়াজুল ইসলাম, জাজিরার চরখাগুটিয়া গ্রামের ব্যাংক কর্মকর্তা দুলাল মাহমুদ আর দক্ষিণ বাইকসা গ্রামের মাসুদ বেপারিকে। এসব পরিবারের আয়ের একমাত্র ভরসা ছিলেন তারা। স্বজন হারিয়ে এসব পরিবার এখন অসহায়। তাদের দাবি, হত্যার বিচার আর পরিবারের পাশে সাহায্যের হাত বাড়াবে সরকার।

নিহতের স্বজনরা বলেন,'বাড়ি থেকে বার বার বলে দিছি যাতে ঢাকা না যায় বার বার ওর ফোন আসে । ছোট ভাইকে বলল তুমি ছাত্র মানুষ তুমারে মানুষ সন্দেহ করবে আমারে কেউ সন্দেহ করবে না আমি কাজ কাম করি।' 'রাজনীতি বা গন্ডগোল কোনোদিকেই সে থাকতো না সে তার মতো করে কাজ করতো বাসায় আসতো এই। ৫ মিনিট পর বাসায় আসবে এই কথা বলেইফোন রাখসে তার ১ ঘণ্টা পর আমার কাছে ফোন আসছে সে হাসপাতালে।'

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শরীয়তপুরে ৫ জন হত্যার বিচারের দাবিতে আন্দোলন করেছে ছাত্র-জনতা। দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচারের আওতায় এনে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি তাদের।

tech