দেশে এখন
0

অর্থ পাচারসহ দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক এমপি-মন্ত্রী, পুলিশ কর্মকর্তাসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করবে দুদক

অর্থ পাচারসহ দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক এমপি-মন্ত্রী, পুলিশ কর্মকর্তাসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। যাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তারা হলেন ডিএমপির সাবেক কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া, অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশিদ, সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল, তার স্ত্রী কাশমিরী, মেয়ে নাফিসা কামাল, ফেনী-২ আসনের সাবেক এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারী, ফেনী-৩ আসনের মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী ও ঢাকা-২০ আসনের এমপি বেনজীর আহমেদ।

এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অনুসন্ধানের সার সংক্ষেপ তুলে ধরেছে দুদক। সেখানে বলা হয়, সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের স্ত্রী (১) কাশমেরী কামাল, (২) মেয়ে নাফিসা কামাল, (৩) ফেনী-২ থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী, (৪) ফেনী-৩ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদউদ্দিন চৌধুরী, (৫) ঢাকা-২০ আসনের সংসদ সদস্য বেনজীর আহমেদ ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার চক্রে ঢুকে রমরমা ব্যবসা সংক্রান্ত অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু।

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার চক্রে ঢুকে চার সংসদ সদস্যের রমরমা ব্যবসা সংক্রান্ত অভিযোগটি অনুসন্ধানের জন্য মোহা নূরুল হুদা, উপপরিচালকের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়।

অভিযোগ পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, ফেনী থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী বিদেশে কর্মী পাঠাতে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে স্নিগ্ধা ওভারসিজ লিমিটেড নামে রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স নেন। লাইসেন্স নেয়ার সাড়ে তিন বছরে এজেন্সি থেকে মাত্র ১০০ কর্মী বিদেশে পাঠানো হয়। মালয়েশিয়া সিন্ডিকেট বা চক্রে যোগ দেয়ার পর গত দেড় বছরে দেশটিতে প্রায় ৮ হাজার কর্মী গেছেন নিজাম হাজারীর এজেন্সির নামে। মালয়েশিয়ায় সবচেয়ে বেশি কর্মী পাঠানো এজেন্সির তালিকায় ৪ নম্বর স্থান পেয়েছে স্নিগ্ধা ওভারসিজ।

এছাড়া ফেনী-৩ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদউদ্দিন চৌধুরী ২০১৫ সালে ফাইভ এম ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি রিক্রুটিং এজেন্সি প্রতিষ্ঠা করেন। মালয়েশিয়ায় এককভাবে শ্রমিক পাঠানোর শীর্ষে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে মধ্যপ্রাচ্যে আড়াই হাজারের মতো কর্মী পাঠিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে মালয়েশিয়া চক্রে ঢুকে এই এজেন্সি একাই ছাড়পত্র নিয়েছে ৮ হাজার ৫৯২ কর্মীর।

মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর দিক দিয়ে পঞ্চম অবস্থান রয়েছে ঢাকা-২০ আসনের সংসদ সদস্য বেনজীর আহমেদের প্রতিষ্ঠান আহমেদ ইন্টারন্যাশনাল। মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজার খোলার আগে তাদের তেমন কোনো কার্যক্রম ছিল না। বিদেশে পাঠিয়েছিল মাত্র ২৩৮ কর্মী। তবে মালয়েশিয়া চক্রে ঢুকে তারা শীর্ষ তালিকায় চলে যায়। প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় গেছেন ৭ হাজার ৮৪৯ কর্মী। চক্র গঠনের সময় বেনজীর ছিলেন রিক্রটিং এজেন্সিগুলোর সংগঠন বায়রার সভাপতি।

সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের স্ত্রী কাশমেরী কামালের অরবিটালস এন্টারপ্রাইজ ও মেয়ে নাফিসা কামালের অরবিটালস ইন্টারন্যাশনালের নামে মালয়েশিয়ায় গেছেন মোট ৯ হাজার ৮৬১ জন। চক্র গঠনের সময় আ হ ম মুস্তফা কামাল অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন।

তিন সংসদ সদস্য ও একজন সংসদ সদস্যের পরিবারের সদস্যের এজেন্সির পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতা, সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর এবং এ খাতের নতুন অনেক প্রতিষ্ঠান বিপুলসংখ্যক কর্মী পাঠাচ্ছে। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশ কর্মী পাঠায়। তবে বাংলাদেশ ছাড়া কোনো দেশে এমন চক্র-ব্যবস্থা নেই।

চক্রের সাথে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও জড়িত। চক্রে থাকা এজেন্সিগুলো বসে বসে প্রতি কর্মীর বিপরীতে অন্তত দেড় লাখ টাকা ‘চক্র ফি’ পাচ্ছে। অন্যান্য এজেন্সির মধ্যে অন্যতম হলো ঐশী ইন্টারন্যাশনাল, নিউ এজ ইন্টারন্যাশনাল, ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল, বিএনএস ওভারসিজ লিমিটেড, পিআর ওভারসিজ, সাদিয়া ইন্টারন্যাশনাল, ইম্পেরিয়াল ওভারসিজ, বিএম ট্রাভেলস লিমিটেড এবং অপূর্ব রিক্রুটিং এজেন্সি।

মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠাতে সরকার-নির্ধারিত জনপ্রতি ব্যয় ৭৯ হাজার টাকা। কিন্তু মালয়েশিয়া যেতে গড়ে একজন বাংলাদেশি কর্মী খরচ করেছেন ৫ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। দেড় বছরে সাড়ে ৪ লাখের মতো লোক পাঠিয়ে ২৪ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হয়েছে এ খাতে। সরকার নির্ধারিত ফির চেয়ে বেশি নেয়া হয়েছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জনপ্রতি দেড় লাখ টাকা করে চক্র ফি নেওয়া হয়েছে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি।

tech