দেশে এখন
0

১৯৭৪-২০২৪; ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পঞ্চাশ বছরের গল্প

১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের দুর্ভিক্ষের সময় দারিদ্রতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করেন। সেখান থেকেই দরিদ্র মানুষের জীবনমান উন্নয়নে ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে গ্রামের মানুষকে নিয়ে আসতে গ্রামীণ ব্যাংক শুরু করেন অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। কর্মজীবনে সেই চেষ্টা তাকে এনে দিয়েছে অর্থনীতিতে শান্তিতে নোবেলের অর্জন। ক্ষুদ্র ঋণের মডেল বিশ্বে পেয়েছে সমাদৃত। যা দেশে ছেড়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যক্তি মুহাম্মদ ইউনূস ছাড়াও বাংলাদেশকে নতুন করে পরিচয় এনে দিয়েছে।

প্রান্তিকের মানুষকে স্বনির্ভর করতে ১৯৭৬ সালে চট্টগ্রামের জোবরা গ্রামে শুরু হয় ছোট ছোট অঙ্কের ঋণ দেয়ার কাজ। মাত্র দু বছর আগেই দুর্ভিক্ষ দেখেছিলেন বাংলাদেশের মানুষ।

দারিদ্র বিমোচনে কাজ করা প্রতিষ্ঠানটি একসময় হয়ে ওঠে গরিবের ব্যাংক। প্রান্তিকের মানুষের দ্বারা পরিচালিত। যেখানে নারীদের অংশগ্রহণ ৯৮ভাগ।

ঋণ দেয়ার পদ্ধতি সংহতি দল পদ্ধতি। তাতে সমাজের একজন মানুষ আরেকজনের অর্থনীতি উন্নয়নে দলবদ্ধ অংশগ্রহণ করেন। গ্রামের দরিদ্র মানুষকে আর্থিক সংযুক্তির পরীক্ষামূলক এই উদ্যোগ ১৯৮৩ সালে 'গ্রামীণ ব্যাংক' পরিচয়ে আসে।

প্রতিষ্ঠা করেন, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। যেটি প্রান্তিকের মানুষকে সামষ্টিক অর্থনীতিতে অন্তর্ভুক্তি ও অর্থনৈতিক সক্ষমতা প্রতিষ্ঠায় শক্তি যুগিয়েছে গত ৪০ বছর ধরে।

২০২৩ সালের মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির তথ্য বলছে, ১০.৩৬ লাখ সদস্য রয়েছে গ্রামীণ ব্যাংকের। পরিবারের সদস্য সহ এই সংখ্যা ৪৫ লাখ মানুষ।

২০০৬ সালে যে প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে ক্ষুদ্রঋণের এই অর্থনীতি নতুন মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। যা গ্রামীণ ব্যাংক ও ড. মুহাম্মদ ইউনুসে দেয়া নোবেল পুরস্কার বাংলাদেশকে নিয়ে আসে বিশ্বের কাতারে। ১৯৪০ সালে চট্টগ্রামের এই জোবরা গ্রামেই জন্ম নেন ড. মুহাম্মদ ইউনুস।

চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল-চট্টগ্রাম কলেজ ১৯৫৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে উচ্চশিক্ষা শেষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ডক্টরেট করেন। ১৯৬২ সালে চট্টগ্রাম কলেজে প্রভাষক পদে যোগ দেন।

১৯৬৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ভেন্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করে যোগ দেন মিডল টেনিস স্টেট ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা করেন। ১৯৭২ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে অধ্যাপনা শুরু করেন। আর্থসামাজিক উন্নয়নে অর্ধশতাধিক সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন এই অর্থনীতিবিদ।

১৯৮৭ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার পান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। যুক্তরাষ্ট্রে থাকাকালীন স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় বিদেশে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গড়ে তোলা ও মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করেন।

১৯৯৬ সালে দায়িত্ব পালন করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ও বন ও পরিবেশও বন মন্ত্রণালয়ে। ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন এই অর্থনীতিবিদ।

১৯৯৭ সালে শহর ও গ্রামে প্রযুক্তির মাধ্যমে সেতুবন্ধন তৈরি করতে পল্লীফোন অর্থাৎ গ্রামীণ টেলিকম চালু করেন।

আন্তর্জাতিক ফোরেমে ১৯৯৩-৯৫ সাল নারী কল্যাণের আন্তর্জাতিক ফোরাম ওয়ার্ল্ড কনফারেন্স অব ওমেন এর আন্তর্জাতিক উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ছিলেন।

জাতিসংঘের টেকসই অর্থনীতি উন্নয়ন, গ্লোবাল কমিশন অব ওমেন হেলথ ও জাতিসংঘের 'নারী ও অর্থনীতি' উপদেষ্টা কমিটির সদস্য।

২০১৪ সালে বিশ্বের শীর্ষ প্রভাবশালী ও ২০০৬ সালে ভারতের সেরা বাঙালি তালিকায় স্থান পায় অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের অনুদাতাদের নামের তালিকাও রয়েছে এই অর্থনীতিবিদ।

২০২১ সালে জাতিসংঘ ফাউন্ডেশনের 'চ্যাম্পিয়ন অব গ্লোবাল চেঞ্জ' সহ জাতীয়-আন্তর্জাতিক প্রায় দেড়শ পুরস্কার রয়েছে ব্যক্তিগত।

টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন ছাড়াও ড. মুহাম্মদ ইউনূস সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ও সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদনা ও আজাদি পত্রিকায় কলাম লেখার সাথে যুক্ত ছিলেন।

২০২১ সালের আগস্টে মিরপুরে গ্রামীণ টেলিকমের অফিস পরিদর্শনে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। এছাড়া শ্রমিককল্যাণ তহবিলে ২৫ কোটি টাকার অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আনে দুদক। যা নিয়ে শুরু থেকেই হয়রানি প্রতিহিংসামূলক মামলা ও নিজেকে নির্দোষ বলে জানান এই অর্থনীতিবিদ।

tech

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর