চলমান পরিস্থিতিতে যাত্রী সংকটে বন্ধ রয়েছে লঞ্চ চলাচল। তাই লঞ্চেই অবসর সময় কাটাচ্ছেন বরিশালের স্থানীয় রুটের লঞ্চ শ্রমিকরা। একই চিত্র অন্যান্য লঞ্চ শ্রমিকদেরও। লঞ্চ চলাচলের ওপর নির্ভর করে তাদের আয়। এ অবস্থায় পরিবার নিয়ে চিন্তিত তারা।
কয়েকজন শ্রমিক জানান, লঞ্চ চললেই বেতন পাওয়া যায়। বন্ধ থাকলে বেতন দেয়া হয় না। ফলে পরিবার নিয়ে এখন হিমশিম খেতে হচ্ছে। আরও কয়েকদিন এমন অবস্থা চললে, পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে যাবে।
বরিশাল নদীবন্দরে এখন শুধুই সুনসান নীরবতা। নেই লঞ্চের বিকট শব্দের হুইসেল, নেই শ্রমিকের হাকডাক। শুধু শ্রমিক নয়- এই নদীবন্দর ঘিরে বহু মানুষের জীবিকা। আর বেশির ভাগই নিম্নআয়ের। বর্তমান পরিস্থিতিতে সবাই পড়েছেন বিপাকে।
লঞ্চ মালিকরা বলছেন, তারাও রয়েছেন বিপাকে। লঞ্চে বসে থাকলেও শ্রমিকদের খাবার বাবদ প্রতিদিন খরচ হয় প্রায় ১৭ হাজার টাকা। নানা রকম খরচ হিসেব করলে তা দাঁড়ায় ৪০ হাজার টাকায়। এ অবস্থায় ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন বলছেন মালিকরা।
সারাদেশে যাত্রীবাহী নৌযানের সংখ্যা ছয়শোর মতো। এতে কর্মরত প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক। এর মধ্যে বড় লঞ্চগুলোতে বেতন দেয়া হলেও ছোট লঞ্চের শ্রমিকদের দেয়া হয় দৈনিক মজুরি।
এম. ভি সুরভী লঞ্চের মালিক রিয়াজুল কবির বলেন, ‘আমরা মালিকরা যেমন ভালো নেই, আমাদের শ্রমিকরাও ভালো নেই। সব মিলিয়ে যা বলা যায়, লঞ্চ ব্যবসা এখন ধ্বংসের মুখোমুখি।’
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ যাত্রী পরিবহন সংস্থার সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, ‘বন্ধের সময় শ্রমিকদের বেতন ভাতা দেয়ার জন্য ডিপোজিট ভাঙতে হচ্ছে। এটি খুবই কষ্টকর।’
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, যাতায়াতের জন্য সবচেয়ে কম খরচ নৌপথে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নৌপথ ব্যবহার করে অর্থনীতি সমৃদ্ধ করেছে। এ ক্ষেত্রে যাত্রীবাহী লঞ্চের শ্রমিকদের গুরুত্ব কোনো অংশে কম নয়। তাই তাদের ব্যাপারে যত্নবান হওয়া উচিত।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. বদিউজ্জামান বলেন, ‘প্রাইভেট বা ব্যক্তি মালিকানাধীন পর্যায়ে যেসব ব্যবসা লাভজনক হয় না সেখানে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ করা দরকার। যাতে করে লোকসান হলে সেখানে সরকার ভর্তুকি দিতে পারে। আমি আশা করছি, সরকার এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’