দেশে এখন
0

খালের উপর নির্মিত সড়কে বন্ধ পানি প্রবাহ, ভোগান্তিতে হাজারও মানুষ

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার দোগনা খালে বাঁধ দিয়ে চাষ করা হচ্ছে মাছ। খালের উপর তৈরি করা হয়েছে রাস্তা। এতে বন্ধ হয়ে গেছে পানির প্রবাহ। বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে ভোগান্তিতে হাজারও মানুষ। পানির প্রবাহ বন্ধ থাকায় অতিরিক্ত জোয়ারের চাপে সাফা-মিরুখালী সড়কে দেখা দিয়েছে ভাঙন। এ অবস্থার প্রায় ৮ বছর পার হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ।

প্রায় ৩৫ ফুট চওড়া ও ১৬ কিলোমিটার আয়তনের দোগনা খালে দেখা মেলে একাধিক বাঁধের। খালে বাঁধ দিয়ে কেউ করছেন মাছ চাষ, কেউ তৈরি করেছেন রাস্তাসহ অন্যান্য স্থাপনা। এতে বন্ধ হয়ে গেছে খালের স্বাভাবিক পানি প্রবাহ। এলাকাবাসীর অভিযোগ, সরকারি খাল দখল করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছেন প্রভাবশালীরা। এতে পানি চলাচল বন্ধ হয়ে সাফা-মিরুখালী সড়কের পার্শ্ববর্তী প্রায় ১০টি গ্রামের শত শত পরিবারের ভোগান্তি এখন চরমে।

গোসল, রান্নাসহ গৃহস্থালি সব কাজে একমাত্র ভরসা এই দোগনা খালের পানি। খালে দীর্ঘদিন ধরে একাধিক বাঁধ থাকায় পানি পঁচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে, সেই সাথে বাড়ছে চর্মরোগ। বাঁধের কারণে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বর্ষা মৌসুমে গ্রামে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। ব্যাঘাত ঘটছে চাষাবাদের।

স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, 'চতুর্দিকে খাল বন্ধ হয়ে গেছে। তাই পানির চাপে আমাদের এই এলাকা প্লাবিত হয়ে গেছে। ঘরের ভিতরে দুই ফুট পানি। সব জায়গায় পানি আটকে যাওয়ায় ধান চাষের জায়গা নাই।'

খালের পানি প্রবাহ বন্ধ থাকায় ঝড়-বৃষ্টি ও জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে যায় সড়ক। এতে ভাঙন দেখা দেয় সড়কে, বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা। এলাকাবাসীর দাবি দ্রুত খালের বাঁধগুলো ভেঙে পানির প্রবাহ স্বাভাবিক রাখার।

দোগনা খালের পানির চাপে ভেঙে যাচ্ছে সাফা-মিরুখালী সড়কটি। বার বার মেরামত করেও সড়কটির ভাঙন প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী টি এম রাজিমুল আলীম রাজু।

তিনি বলেন, 'এই বাঁধের কারণে বন্যা কিংবা জোয়ারের পানির স্বাভাবিক প্রবাহ সম্ভব হচ্ছে না। যে কারণে রাস্তাটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর জন্য আমরা কিছু ক্রস ড্রেনের পরিকল্পনা নিয়েছি। ইতিমধ্যে ৮টির কাজ সম্পন্ন হয়েছে।'

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, প্রয়োজনে বাঁধ ভেঙে সেতু নির্মাণ করে দেওয়া হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও প্রশাসন বলছে, খালের জায়গা দখল করে যারা মাছ চাষ বা রাস্তা নির্মাণ করছেন তাদের ছাড় দেয়া হবে না।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নুসাইর হোসেন বলেন, '৬৪ জেলার খাল খনন প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে আমরা খালটি খনন করে দিব।'

মঠবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল কাইয়ূম বলেন, 'কিছু বাঁধের কারণে অনেকগুলো খাল বদ্ধ অবস্থায় আছে। সেগুলো পর্যায়ক্রমে অপসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।'

প্রায় ৮ বছর ধরে প্রভাবশালী একটি চক্র খালটিকে ধ্বংসের পথে নিয়ে গেছে। গ্রামের কৃষক, জেলে, মাঝিসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের দাবি যত দ্রুত দোগনা খাল দখলমুক্ত করা হোক।