দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ বাণিজ্যিক কেন্দ্র নোয়াখালীর চৌমুহনী। চন্দ্রগঞ্জ, ছাতারপাইয়া, আটিয়াবাড়ি ও তুলাতলী এ চারটি খালের মোহনার সংযোগস্থল থেকে এর নামকরণ। তবে সময়ের পরিক্রমায় দখলের শিকার হয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে এসব খাল।
একসময় চৌমুহনীর সাথে চাঁদপুর, ভৈরব, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন বন্দরের নৌপথে যোগাযোগ ছিল। বাজারের চারপাশে প্রায় ৩৭ একর জায়গাজুড়ে ছিল ছোট-বড় ৩৩টি সরকারি পুকুর আর দিঘী। তবে বর্তমানে এসব পুকুরের চারপাশ ভরাট করে অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন স্থাপনা। পুকুরের পাশাপাশি খালগুলোর দু'পাশও দখলে নিয়েছেন প্রভাবশালীরা। এতে প্রায় বিলুপ্তির পথে আছে চৌমুহনীর জলাশয়গুলো।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, 'ছোটবেলায় দেখেছি এই খাল আর পুকুরগুলো পরিস্কার ছিল, মাছ পাওয়া যেত। এখন খাল দিন দিন ছোট হচ্ছে। পুকুরগুলোতে ময়লা ফেলা হচ্ছে। কয়েকটি তো দখল হয়ে গিয়েছে।'
এতে একদিকে সুপেয় পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন পৌরবাসী। অন্যদিকে জলাশয় দখলের ফলে ব্যাহত হচ্ছে পানি চলাচলের পথ। সামান্য বৃষ্টিতে জেলার বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হয়ে জলাবদ্ধতা। এ অবস্থায় অবৈধভাবে দখল করা এসব পুকুর ও দিঘি দ্রুত উদ্ধারের দাবি স্থানীয় ও ব্যবসীয়দের।
চৌমুহনী সাধারণ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল খায়ের বলেন, 'যে পুকুরগুলো আছে, এগুলোকে সংস্কার করে বিশেষ করে আগুন লাগার বা অন্য কোনো বিপদের মুহূর্তে আমরা যেন ওখান থেকে পানি বের করে বাঁচতে পারি।'
ফায়ার সার্ভিসের তথ্যমতে, চৌমুহনী বাজার ও তার আশেপাশের এলাকায় গত এক বছরে ছোট-বড় মিলিয়ে ৫৪ টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রায় ২ কোটি ১৯ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অগ্নিকাণ্ড ঘটলে আশেপাশে পানির উৎস না থাকায় আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয় ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের।
নোয়াখালী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক মো. ফরিদ আহমেদ বলেন, 'যে ডোবাগুলো এখনও আছে সেগুলো যদি পরিস্কার করে আবারও পানি রাখার ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে এই পানি পেলে অগ্নিনির্বাপণে আমাদের অনেক সুবিধা হবে।'
জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, অতিদ্রুত পুকুর, দিঘি ও জলাশয় বেদখল এবং ভরাট রোধে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। একই সঙ্গে শিগগিরই দখল হওয়া পুকুর ও দিঘিগুলো উদ্ধারের আশ্বাস দেন তারা।
নোয়াখালী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল ওয়াদুদ পিন্টু বলেন, 'আমাদের দিক থেকে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। দ্রুতই সব দখলমুক্ত করা হবে।'
বেদখলে থাকা জলাশয়গুলো পুনরায় দখলমুক্ত করে ব্যবহার উপযোগী করা হলে উপকৃত হবেন ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা। সেইসঙ্গে প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হবে জানান সংশ্লিষ্টরা।