বাংলাদেশ থেকে শিক্ষার্থী ভিসায় পড়তে এসে পড়াশোনায় নিয়মিত না হয়ে করছেন অ্যাসাইলামের জন্য আবেদন। এমন অভিযোগে সম্প্রতি আলোচনায় যুক্তরাজ্যের বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ, শিক্ষাদান বা গবেষণা নয়, বরং যুক্তরাজ্যে অভিবাসীদের প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
অ্যাসাইলামের জন্য সবচেয়ে বেশি সংখ্যক আবেদন জমা পড়েছে যেসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সে তালিকা অন্যতম পোর্টসমাউথ, হার্টফোর্ডশায়ার ও কভেন্ট্রি ইউনিভার্সিটি। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বিদেশি শিক্ষার্থীদের এক-তৃতীয়াংশই আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেছেন যাদের বেশিরভাগই বাংলাদেশি।
যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা করতে আসার আগে বসবাস ও টিউশন ফিসহ যাবতীয় খরচের বিষয়ে বিস্তারিত ও সঠিক তথ্য না জেনে এসে বিপাকে পড়ছেন অনেকে। মূলত সে কারণেই দেশ থেকে এসে যুক্তরাজ্যে স্থায়ী হতে অ্যাসাইলামের পথ বেছে নিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। এমন অবস্থা চলতে থাকলে ক্ষতির সম্মুখীন হবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি। একইসঙ্গে ঝুঁকিতে পড়বে নতুন শিক্ষার্থীদের পড়তে আসার সুযোগ। আইনজীবীদের মতে, এ পরিস্থিতির জন্য দায়ী কিছু অসাধু স্টুডেন্ট কনসালটেন্সি ফার্ম।
যুক্তরাজ্যে অভিবাসন বিষয়ক আইনজীবী নাশিত রহমান বলেন, 'চ্যারিটি ওয়ার্ক, ভিজিট ভিসা, ধর্মীয় কাজে ব্রিটেনে আসা যায়। আসার পিছনে একটি চক্র অবৈধভাবে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার জন্য কারসাজি করছে।'
যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা শেষে ভালো চাকরি পেয়ে স্থায়ী হওয়ার পাশাপাশি নতুনদের জন্যও সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন এখানে পড়তে এসে স্পন্সরশিপ চাকরি পেয়ে স্থায়ী হওয়া শিক্ষার্থীরা। তাদের মতে, দেশ থেকে আসার আগে বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে সঠিক তথ্য যাচাই-বাছাই করা জরুরি। তাহলেই চাকরির বাজারে ভবিষ্যতে ভালো করতে পারবেন শিক্ষার্থীরা।
যুক্তরাজ্য লন্ডনের কিংস্টন ইউনিভার্সিটির সাজ্জাদ শাহরিয়ার বলেন, 'যারা সামনে ইউকেতে স্টুডেন্ট ভিসায় আসতে চাচ্ছেন তারা অবশ্যই ভালো কোনো ইউনিভার্সিটি র্যাংকিং দেখে তারপর আসবেন এক্ষেত্রে জব মার্কেটে ভালো করার সুযোগ বেশি।'
যুক্তরাজ্যের জে এফ ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেডের শাখা ব্যবস্থাপক মুয়াজ আহমেদ বলেন, 'আমি একটা স্পন্সরশিপ জব পেয়েছি ও স্কিল ওয়ার্কার হিসেবে আছি। আপনারা যারা আসবেন তার তাদের ডিগ্রি সঠিকভাবে কমপ্লিট করতে পারেন তাহলে অবশ্য জব পাবেন এবং এখানে ভালো করার সুযোগ রয়েছে।'
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে অ্যাসাইলামের আবেদন খারিজ হওয়া প্রায় ১০ হাজার বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেয় ব্রিটিশ সরকার। এ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সাথে একটি ফাস্ট-ট্র্যাক রিটার্নস চুক্তিও স্বাক্ষর করে দেশটি। এর আগে, গেলো বছর প্রায় ১১ হাজার বাংলাদেশি স্টুডেন্ট, ওয়ার্ক পারমিট, ভিজিট ভিসাসহ বিভিন্ন ভিসায় যুক্তরাজ্যে এসে স্থায়ী বসবাসের উদ্দেশে অ্যাসাইলামের আবেদন করেন।
শিক্ষার্থী ভিসাধারীদের অ্যাসাইলাম আবেদন বেড়ে যাওয়ায় ভবিষ্যতে বাংলাদেশ থেকে শিক্ষার্থী ভিসায় কড়াকড়ি আরোপের ঝুঁকি বাড়ছে। তাই শিক্ষার্থী ভিসার অপব্যবহার রোধে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি বলে মত সংশ্লিষ্টদের।