দেশে এখন

৫ বছরেও শেষ হয়নি ২৮ কি.মি. সড়কের কাজ

পাঁচ বছরেও শেষ হচ্ছে না ৪৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নীলফামারীর মাত্র ২৮ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্ত ও সরলীকরণের কাজ। প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অর্ধশতাধিক অবৈধ স্থাপনা। স্থানীয়দের অভিযোগ, ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিপূরণ হিসেবে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নিতে রাতারাতি অবকাঠামো নির্মাণ করেছে একটি প্রভাবশালী চক্র। তবে জেলা প্রশাসক বলছেন, ফিল্ডবুকের বাইরে কাউকে অতিরিক্ত অর্থ দেয়ার সুযোগ নেই।

রাস্তা সম্প্রসারণ, সংস্কার বা যে কোন সরকারি প্রকল্পে যখনই জমি অধিগ্রহণের কথা আসে তখনই একদল দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষ রাস্তার পাশে অবকাঠামো নির্মাণ করে থাকে। উদ্দেশ্য একটাই সরকারের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়। যুগের পর যুগ ধরে চলে আসা এই প্রক্রিয়ায় বিরক্ত সাধারণ মানুষ। তাদের দাবি, এইসব দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষকে ঠেকাতে হবে একটাই উপায়ে। এই ধরনের অবকাঠামো ভেঙে দিয়ে তাদেরকে কোন ধরনের ক্ষতিপূরণ দেয়া যাবে না।

২০১৯ সালে নীলফামারীর তিনটি জেলা সড়ক প্রশস্ত ও সরলীকরণের আওতায় ২৮ কিলোমিটার সড়কের কাজ হাতে নেয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ। ডোমার উপজেলার বোড়াগাড়ী থেকে চিলাহাটি হয়ে পঞ্চগড় জেলার ভাউলাগঞ্জ পর্যন্ত সড়কের কাজের ব্যয় ধরা হয় ৪৪৩ কোটি টাকা। গত পাঁচ বছরে নীলফামারী অংশের ২৬ কিলোমিটারের মধ্যে ২০ কিলোমিটার রাস্তা প্রশস্ত করা হয়েছে। বাকি ৬ কি.মি. অংশ নিয়েই বেঁধেছে বিপত্তি।

এই ৬ কি.মি. রাস্তার বেশিরভাগই বাঁক হওয়ায় সোজা করতে তুলনামূলক বেশি জমি অধিগ্রহণ করতে হচ্ছে সরকারকে। গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর রাস্তার দুই পাশের ৮৩ একর জমির মালিকদের নিয়ম অনুযায়ী ৪ ধারার নোটিশ দেয় জেলা প্রশাসন। আইনত ৪ ধারার নোটিশ পাওয়ার পর জমিতে কোন স্থাপনা তৈরি বা সংস্কারের নিয়ম না থাকলেও অধিক ক্ষতিপূরণের আশায় প্রভাবশালী একটি চক্র রাতারাতি তৈরি করেছে বাড়ি-দোকানসহ অন্তত ৫০টি অবৈধ অবকাঠমো।

স্থানীয় বাসিন্দাদের একজন বলেন, 'মোটা অঙ্কের টাকা পাওয়ার লোভে রাতারাতি বাড়ি-দোকান করছে।'

আরেকজন বলেন, 'এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে বাড়িগুলো করেছে। ৫ টাকা খরচ করে ১০০ টাকা নিবে।'

প্রায় সব স্থাপনাই ফেলে রাখা হয়েছে ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে। কোনটিতে আবার ঝোলানো হয়েছে অফিসের সাইনবোর্ড ও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি। তাতে যোগাযোগের কোন ঠিকানা বা ফোন নম্বর নেই।

স্থানীয়দের অভিযোগ, জমির মালিকরা নিয়ম মেনে জমি দিতে চাইলেও অধিক ক্ষতিপূরণের লোভে জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় জমি কিনে স্থাপনা তৈরি করেছে একটি চক্র। নাম এসেছে স্থানীয় সাবেক জনপ্রতিনিধিসহ বেশ কয়েকজনের। কিন্তু একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তাদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

প্রকল্পের ৪৪৩ কোটি টাকার মধ্যে জমি অধিগ্রহণের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫৭ কোটি টাকা। প্রকল্প গ্রহণের সময় তৈরি করা ফিল্ড বুকের বাইরে কাউকে অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ দেয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক। আর প্রশাসনের কাছ থেকে জমি বুঝে পেলেই বাকি কাজ শেষ করার কথা বলছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।

নীলফামারী সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, 'ছয় কিলোমিটার সড়কের কাজ বাকি রয়েছে। কারণ এখানে ভূমি অধিগ্রহণ এখনো হয়নি।'

নীলফামারীর জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ বলেন, 'আমরা এরইমধ্যে চার ধারা দিয়েছি। প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছি। সমস্ত প্রক্রিয়া শেষে আমরা ক্ষতিপূরণ দিবো।'

ইএ

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর