মানুষের ভাগ্য নির্ধারণী বাজেটে কত কথাই তো লেখা থাকে। পাখির পাশাপাশি নদী, বন, পাহাড় বা গাছেরওতো চাওয়া-পাওয়া আছে। এমনিভাবে বাজেটে কতটুকু স্পষ্ট হবে কীট-পতঙ্গ, অণুজীব, সরীসৃপ, উভচর, বণ্য বা গৃহপালিতপ্রাণীর ভাগ্যরেখা? পরিবেশ প্রকৃতির সুরক্ষায় এমন প্রশ্ন যেমন যৌক্তিক, তেমনি উত্তর খোঁজাও জরুরী মনে করেন পরিবেশবিদরা।
বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মো. আব্দুল হাই বলেন, 'পরিবেশের যে অনেকগুলো সেগমেন্ট আছে সেগুলোতে কিভাবে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে সেটা কিন্তু আমরা এখনও করে উঠতে পারিনি। যতটুকু বনায়ন থাকা দরকার, ততটুকু বনায়ন নেই। নদীনালার পরিবেশ যতটুকু সুস্থ থাকা দরকার ততটুকু নেই।'
সম্প্রতি অশান্ত প্রকৃতির নিষ্ঠুরতা দেখেছে গোটা দেশ। ৩৯ থেকে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় টানা তাপপ্রবাহ যখন দহন জ্বালায় পরিণত হয়, তখন প্রকৃতিকে শান্ত করতে গাছ লাগানোর পরামর্শ আসে চারিদিক থেকে। কিন্তু বাস্তবতা কি? দেশের অধিকাংশ জেলার মতো বগুড়াতেও নেই সংরক্ষিত বনভূমি। এ যাবতে একটি গাছের চারাও কি রোপন করেছে ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভা। গেলো ২১ এপ্রিল গাছের চারা রোপনে স্থানীয় সরকার বিভাগের দেয়া নির্দেশনার বাস্তবায়নই বা কতদুর? এমন প্রশ্নে জনপ্রতিনিধিদের সোজাসাপ্টা উত্তর, বৃক্ষ রোপনে নেই কোনো বরাদ্দ।
গাছের শীতল ছায়ায় দৌঁড়াচ্ছে কাঠবিড়ালি। ছবি: এখন টিভি
বগুড়া সদর ফাপোর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, 'আমরা প্রতিবছরই জুনে বাজেট পেশ করি সেখানে পরিবেশ বাঁচানোর কথাগুলো উৎক্ষেপণ হয় কিন্তু এর জন্য কোনো বরাদ্দ আমরা পাই না।'
বগুড়া কাহালু পৌরসভার মেয়র আব্দুল মান্নান, 'গাছপালা লাগালে পরিবেশ রক্ষা পাবে। দেশ এবং সবাই স্বস্তিতে থাকতে পারবে। রাস্তার পাশে গাছ লাগালে চলাচলে স্বস্তি থাকবে।'
এদিকে জলবায়ু পরিবর্তনে বিরুপ প্রভাব মোকাবিলায় প্রতিবছর সংসদ সদস্যদের ৫ হাজার করে গাছের চারা দেয়া হলেও এবার তাদের বরাদ্দ ২ হাজার কমিয়ে ৩ হাজার করা হয়েছে।
বগুড়ায় কাচা-পাকা মিলে এলজিইডির সড়ক আছে ৬ হাজার ৭৭৮ কিলোমিটার, সড়ক ও জনপথ বিভাগের ৫৫০, প্রায় ৬৫ কিলোমিটার রেলপথ আর পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের দৈর্ঘ্য ৯৪ কিলোমিটার। কোনো কোনো বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে গাছ চোখে পড়লেও বেশীরভাগ সড়কইতো বৃক্ষশুণ্য। বনবিভাগের তথ্য থেকে জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে বগুড়া ও জয়পুরহাট মিলে ২০ কিলোমিটার সড়কের জন্য তাদের বরাদ্দ ২০ হাজার গাছ। চাইলেও সব রাস্তায় গাছ লাগানোর সুযোগ নেই প্রতিষ্ঠানটির।
সরকারি আজিজুল হক কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কামরুল সেলিম বলেন, 'সুস্থ্য পরিবেশ না পেলে শুধু মৌলিক অধিকারগুলো বাস্তবায়ন হলেই হবে না।'
বগুড়া বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মতলুবুর রহমান বলেন, 'সরকার আমাদের যে বরাদ্দ দেয় সে ভিত্তিতে আমরা প্রথমে ফাকা জায়গায় এ সমস্ত কার্যক্রম করি। আমাদের জনবলে স্বল্পতা আছে। সেটা আমরা সরকারকে অবহিত করেছি।'
কলেজের মতো উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উদ্ভিদ বিজ্ঞানের মতো বিভাগেও থাকেনা বোটানিক্যাল গার্ডেনের জন্য আলাদা কোনো বরাদ্দ।
পরিবেশ প্রকৃতির সুরক্ষায় বড় ভূমিকা রেখে চলার কথা যে নদ-নদীগুলোর, নিজের অস্তিত্ত্বের প্রশ্নে লজ্জায় মুখ লুকোয় ভদ্রাবতির মতো দখল দূষণে বিপন্ন এই অঞ্চলের প্রায় নদী।