কৃষি
দেশে এখন

এনায়েতপুরের লেবুর হাট, দৈনিক বিক্রি কোটি টাকা

দেশে লেবুর চাহিদার বড় অংশই পূরণ করে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার এনায়েতপুর বাজারের লেবুর হাট। অন্যতম বৃহৎ এই পাইকারি হাটে প্রতিদিন বিক্রি হয় প্রায় কোটি টাকার লেবু। এবার দাম ভালো পাওয়ায় খুশি প্রান্তিক চাষিরা। তবে হাট অব্যবস্থাপনা নিয়ে রয়েছে নানা অভিযোগ।

ময়মনসিংহের ফুলতলা গ্রাম। মেঠো পথের দুধারে নুয়ে থাকা গাছের পাতার আবডাল থেকে চারপাশে সুবাস ছড়াচ্ছে লেবু।একসময় ক্ষুধা-দারিদ্রই ছিল যে জনপদের মানুষের নিত্যসঙ্গী সেখানে লেবু চাষে ভাগ্য ফিরেছে অনেকের। কর্মসংস্থান হয়েছে কয়েক হাজার মানুষের। এবার লেবুর দাম ভালো পাওয়ায় খুশি চাষিরা।

চাষিদের একজন বলেন, 'তাপমাত্রা বেশি থাকার কারণে এবার ভালো দাম পেয়েছি।'

যদিও বর্ষা মৌসুমে লেবুর দাম কমে যাওয়ায় শঙ্কায় আছেন অনেকে। এছাড়া মধ্যসত্ত্বভোগীর দৌরাত্ম্য তো রয়েছেই।

আরেকজন চাষি বলেন, 'গরমের সময় ২ হাজার টাকা বস্তা বিক্রি হয় আর বর্ষার সময়ে সেটা ১ হাজারে নেমে যায়। এখন লেবারের মজুরি দিবো নাকি আমরা চলবো।'

এনায়েতপুর গ্রামের হাজেরা খাতুন। স্বামীর একা রোজগারে সংসার চালাতে অনেকটাই হিমশিম খেতে হতো তাকে। তবে লেবু চাষ করে ফিরেছে তার ভাগ্য। এবছর ৩৫ কাঠা জমিতে ১ লাখ টাকা খরচ করে লেবু চাষ করেন তিনি। যেখানে এখন পর্যন্ত তার বিক্রি দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ টাকা। তবে সার-কীটনাশকের দাম কমানো গেলে আরও লাভ হতো বলে জানান তিনি।

হাজেরা খাতুন বলেন, 'লেবু বিক্রি করে আমাদের সংসার চলে। সংসারের সব কিছু এই লেবু বিক্রির টাকা থেকেই করা হয়।'

এবার দেখা যাক দেশের অন্যতম বৃহৎ লেবুর পাইকারি হাট ময়মনসিংহের এনায়েতপুর বাজার। মৌসুমের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিদিন এই হাটে বিক্রি হয় প্রায় কোটি টাকা। এদিকে, চলতি অর্থবছরে লেবুর হাটের ইজারা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ লাখ। তবে হাট নিয়ে রয়েছে চরম অব্যবস্থাপনার অভিযোগ।

পাইকারদের একজন বলেন, 'বাজারটা যদি সরকার মনিটরিং করতো তাহলে ভালো হতো কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে দাম অনেক পাথক্য হয়ে যায়।'

এদিকে, লেবুর উৎপাদন বাড়াতে চাষিদের পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। আগামী বছর থেকে লেবুর রপ্তানি করার কথা ভাবা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

কৃষি মন্ত্রণালয় অতিরিক্ত সচিব ড.মলয় চৌধুরী বলেন, 'কিভাবে আমাদের কৃষকদের আরও লেবু চাষে উৎসাহী করা যায় সে ব্যাপারে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।'

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, 'লেবু রপ্তানি করার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি।'

উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্য বলছে, এবার ফুলবাড়িয়ায় লেবু আবাদ হয়েছে ৭শ' ৬৫ হেক্টর জমিতে। প্রতিবছর এই উপজেলার এনায়েতপুর, কালাদহ, বাক্তা, নাওগাঁও ইউনিয়ন মিলিয়ে প্রায় ৫০ কোটি টাকার লেবু বিক্রি করেন চাষিরা।

ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ নূর মোহাম্মদ বলেন, 'আমাদের ফুলবাড়িয়া বাজারে লেবুর  আর্থিকমূল্য ৫০ কোটি টাকারও বেশি।'

দেশে চাহিদার প্রায় ৫০ শতাংশ লেবু ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলা থেকে সরবরাহ হয়। কলম্বো, সিডলেস, পাতিলেবু, এলাচিসহ বিভিন্ন জাতের লেবুর চাষ হয় এখানে।

ইএ

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর