রং হারিয়ে বিবর্ণ বিস্তীর্ণ চা বাগান। অথচ এ সময় সবুজ পাতায় ঢেকে থাকার কথা প্রতিটি বাগানের। দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় রোদ আর শুকনো আবহাওয়ায় তামাটে রং ধারণ করেছে চা গাছ।
সাধারণত মার্চ মাসে সবচেয়ে মানসম্পন্ন চা উৎপাদন হয়। এজন্য জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত বাগানে পাঁচ থেকে সাত ইঞ্চি পানির দরকার হয়। যার জন্য নির্ভর করতে হয় বৃষ্টির ওপর। তবে চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত বৃষ্টি না হওয়ায় খরায় পুড়ছে হবিগঞ্জের ২৪টি চা বাগান।
হবিগঞ্জ নালুয়া চা বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক সাইমন ইসলাম বলেন, ‘চায়ের উৎপাদন পুরোটাই নির্ভর করে বৃষ্টির ওপর। এই বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় আমাদের আশানুরূপ চায়ের উৎপাদন হয়নি এবং গুণগত মানেরও ক্ষতি হয়েছে।’
চলতি বছর দেশে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নয় কোটি ৩০ লাখ কেজি। তবে গত বছরের এ সময়ের তুলনায় চলতি বছর চায়ের উৎপাদন কমেছে প্রায় ৮০ শতাংশ। তাদের দাবি, শীঘ্রই বৃষ্টির দেখা মিললেও খরার প্রভাব কাটাতে সময় লাগবে আরো অন্তত দুই থেকে তিন মাস।
হবিগঞ্জ লস্করপুর টি ভ্যালির চেয়ারম্যান কাজী এমদাদুল ইসলাম বলেন, ‘এ বছর আমাদের লক্ষ্য ১০৩ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন। কিন্তু গত তিন মাস কোনো বৃষ্টিপাত নেই। এত গরমের মধ্যে এই চায়ের চারাগুলোকে কোনোভাবেই বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না।’
এদিকে, সংকট কাটাতে কৃত্রিম সেচের বিষয়টি বেশ ব্যয়বহুল। এছাড়া চা শিল্প বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় থাকায় সেচ, বিদ্যুৎ বা ব্যাংক ঋণের সুবিধা পেতে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় বাগান মালিকদের। তাই অর্থনৈতিকভাবে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাতটি কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতায় নেয়ার তাগিদ তাদের।
ইফতেখার এনাম বলেন, ‘আমাদের এই সেক্টরটাকে যদি কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতায় নেয়া হয়, তাহলে হয়তো এই সমস্যার সমাধান হতে পারে।’
কাজী এমদাদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি উদ্যোগে যদি চা বাগানে সেচের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে এই অবস্থার উন্নতি সম্ভব বলে আমি মনে করি।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে অনাবৃষ্টি বা খরা আরও প্রকট হতে পারে। তাই চা শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে দরকার কার্যকর পদক্ষেপ।
প্রতি বছর কমছে চায়ের উৎপাদন। এতে একদিনে যেমন মালিক পক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তেমনি আয় কমেছে শ্রমিকের। এ অবস্থায় চা শিল্পের সাথে জীবন-জীবিকা নির্ভরশীল লাখ লাখ শ্রমিক তাদের ভবিষ্যৎ জীবিকা নিয়ে দুশ্চিন্তায়।