দেশে এখন
0

ছিনতাইয়ের ঘটনায় বাড়ছে উদ্বেগ

কে দেবে নিরাপত্তা, কোথায় মিলবে সমাধান? ছিনতাইয়ের শিকার অধিকাংশ মানুষ খুঁজছে সেই উত্তর। ছিনতাইয়ের পর অনেকেই গিয়েছিলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুয়ারে। সেখানেও মেলেনি সমাধান। সমাজ বিশ্লেষকরা বলছে, বিচারহীনতার সংস্কৃতি ছিনতাইকারীদের সাহসী করে তুলছে।

সময় ১০ থেকে ৩০ সেকেন্ড! ২ থেকে ৩ জন। কখনও আরও বেশি। কখনও চিলের মতো ছোঁ মেরে ভোঁ দৌড়। এ যেন ছিনতাইকারীদের রাজত্ব। দাপট দেখে মনে হবে এদের টিকিটাও ছোঁয়ার সাহস নেই কারও। হাতে কখনও ছুরি আবার কখনও পিস্তল। নেশায় বুদ এসব ছিনতাইকারীদের রুখবে এমন সাধ্য কার?

ছিনতাইকারীর কবলে পরা একজন বলেন, ‘যাত্রাবাড়ি মোড় থেকে আমাকে গাড়িতে উঠতে হয়। সেজন্য এদিকে আসতেই পিছন থেকে তিনজন এসে আমার গলায় ছুরি ধরে। আমার মোবাইল, টাকা ও ঘড়ি ছিনতাই করে নিয়ে যায়।’

এই ছিনতাইয়ের সময় ছিল ৩১ মার্চ ভোর সাড়ে ৫টায়। কেন এই স্থান নির্বাচন করলো ছিনতাইকারীরা খতিয়ে দেখে এখন টিভি। খুঁজে পাওয়া যায় না কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা। পাশের গ্যারেজে সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে শুনে এমন তথ্যের ওপর ভর করে যাওয়া হয় সেখানে। পথেই জানা গেলো ছিনতাইয়ের ঘটনা প্রতিদিনই ঘটে এই সড়কে। জেনে শুনেও সবাই চুপ থাকে।

এক পথচারী বলেন, ‘এই জায়গায় ছিনতাইয়ের ঘটনা বেশি হয়। কেউ যদি ধাওয়া দিয়ে ধরতে পারে তাহলে ছিনতাইকারীর লোক পাশে এসে জিনিস নিয়ে যে ছিনতাই করছে তাকে নির্দোষ বানায়।’

অনেক খুঁজেও সিসিটিভি ক্যামেরায় পাওয়া গেলো না কিছুই। আশপাশের এতোগুলো সিসি ক্যামেরা খুঁজেও ছিনতাইয়ের কোনো ঘটনা পাওয়া গেলো না। স্থানীয়রা বলছেন, যাত্রাবাড়ি এবং সায়দাবাদ এলাকার যেসব জায়গা সিসিটিভি ক্যামেরার আওতামুক্ত ঠিক সে জায়গাগুলোই ছিনতাইকারীরা বেছে নেন।

ছিনতাইয়ের পর এই ভুক্তভোগী গিয়েছিলেন যাত্রাবাড়ি থানায়। সেখানে সমাধান না পেয়ে ফিরেছেন খালি হাতে। উপায় না পেয়ে করেছেন জিডি। পুলিশ জানায়, ছিনতাই হলে মামলা করতে হবে।

একই অবস্থা আরেক ভুক্তভোগীর। ৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় অস্ত্র ঠেকিয়ে তার কাছ থেকে নিয়ে যায় সব। তিনি বলেন, ‘ছুরি ঠেকিয়ে সব নিয়ে গেছে। কালো গেঞ্জি পরা বিরাট লম্বা একজনের কাছে অস্ত্রও ছিল।’

এই ঘটনার পর চিৎকার করলেও শোনেনি কেউ। তবে উঠতি বয়সী কিশোরদের আচরণে বিরক্ত এখানকার সবাই।

একজন ড্রাইভার বলেন, ‘শনিরআখরা কলেজের এখান থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত ছিনতাই হয়। পুলিশ দেখা যায় বসে থাকে, ঘটনা ঘটার পরে আসে।’

শুধু যাত্রাবাড়ি এলাকা নয় এমন ২৮টি হটস্পটসহ শতাধিক স্পট চিহ্নিত করেছে ছিনতাই প্রতিরোধ টাস্কফোর্স। এর মধ্যে ব্যাংকপাড়া, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এলাকা, বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন, লঞ্চঘাট, ধানমন্ডি লেক, বোটানিক্যাল গার্ডেন, চন্দ্রিমা উদ্যান, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা পার্ক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা এবং বিমানবন্দর রেলস্টেশনকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে পুলিশ।

ডিএমপির মুখপাত্র মো. ফারুক হোসেন বলেন, ‘ছিনতাইপ্রবণ এলাকাগুলোতে পুলিশের টহল জোরদার করার কার্যক্রম চলমান রেখেছি। এ কার্যক্রম মাথায় রেখে প্রত্যেকটি স্পটে পালাক্রমে ২৪ ঘণ্টা আমাদের ছিনতাই প্রতিরোধ টাস্কফোর্সের সদস্যরা ডিউটি করছেন।’

তবে জিরো টলারেন্স নীতিতে ছিনতাই প্রতিরোধ করা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন।

তিনি বলেন, ‘ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং আইনের আওতায় আনছি। যে কেউ কোনো অপরাধ করলে কাওকে ছাড় দেওয়া হবে না।’

আইনের ফাঁক-ফোকর বন্ধের পাশাপাশি নতুন আইন প্রণয়নের পরামর্শ দিচ্ছেন সমাজ বিশ্লেষকরা।সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, ‘চুরি, ছিনতাই, অপহরণের সাথে যে চক্রটা জড়িত, তারা মনে করছে আইনি ব্যবস্থা নিলেও অতিদ্রুত জামিনে মুক্ত হতে পারছি। আইন যদি প্রতিরোধের জায়গায় সঠিকভাবে প্রয়োগ করা না যায় তখন যারা পেশাগতভাবে এ ধরনের অপরাধ করছে তাদের জন্য সেটি আরও রমরমা অবস্থা হয়ে দাঁড়ায়।'

এসএস