দেশে এখন
0

ই-কার্ডের কাছে হার মেনেছে ঈদ কার্ড

একসময় ঈদ এলেই ঈদ কার্ড কেনার ও উপহার দেওয়ার হিরিক পড়ে যেতো। পরিবার ও প্রিয় বন্ধুদের ঈদের শুভেচ্ছা জানানোর এক মাত্র মাধ্যম হয়ে উঠেছিল এই ঈদ কার্ড। তবে সোশ্যাল মিডিয়ার আবেগহীন ই-কার্ডের কাছে হার মেনেছে ঈদ কার্ড। অন্য দিকে ঈদ সংখ্যার প্রতিও আগ্রহ হারাচ্ছে গ্রাহকরা। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ পরিবর্তনের মূলেই রয়েছে ডিজিটাল মিডিয়ার সহজ বিনোদন।

ইকবাল আহমেদ। নিউ মার্কেটে এসেছেন ঈদ কার্ডের খোঁজে। কিন্তু কোন দোকানে পাচ্ছেন না তার তরুণ বয়সের চিরচেনা উপহার। আবার যাও দু' এক দোকানে আছে সেগুলো একে বারেই সাদামাটা। নান্দনিকতার নিরিখেও মেলানো যায় না আগের সময়ের সঙ্গে। তাই এখন তার স্মৃতিতে দোলা দিচ্ছে নিজের হাতে কার্ড তৈরির সেই পুরনো সময়।

ইকবাল সাহেব বলেন, 'ছোট বেলায় আমি নিজেই ঈদ কার্ড করে সবাইকে দিতাম। এখন আধুনিকতা এসে ঈদ কার্ড হারিয়ে গেছে।  এখন সবাই ফেসবুকে ঈদের শুভেচ্ছা পাঠায়।'

রাজধানীর অনেক কার্ডের দোকানই এখন আর নেই। আর যেগুলো আছে সেখানেও গিয়ে ক্রেতার দেখা মেলেনা। যেখানে আগে কার্ড ছাপা হতো ২ থেকে ৩ লাখ সেখানে বর্তমানে ৫ হাজারের বেশি কার্ড ছাপা হয় না। তারও অনেক থাকে অবিক্রিত।

বিক্রেতারা বলেন, 'একসময় এত পরিমাণে বিক্রি হয়েছে আমরা কাস্টমারকে দিতে পারতাম না। বর্তমানে মেসেজের যুগ তাই এখন আর ঈদ কার্ডের প্রয়োজন মনে করছে না।'

এখন আর দেখা যায় না মহল্লায় মহল্লায় ঈদ কার্ডের দোকান কিংবা লাইন ধরে ঈদ কার্ড কেনার হিড়িক। খামে করে প্রিয় মানুষ থেকে পাওয়া হয় না ঈদ কার্ড। ডিজিটাল জগতের প্রসারেই কি এমন অবস্থা?

কবি ও সম্পাদক মারুফ রায়হান বলেন, 'ডিজিটাল যুগে আমরা আশা করতে পারি না আগের সেই ঈদ কার্ড হাতে হাতে দিতে পারবো। এখন আসলে ই-কার্ড হয়েছে। আমরা ডিজিটালে একই কার্ড অনেককে দিচ্ছি সেক্ষেত্রে আন্তরিকতা কিছুটা হয়তো কমেছে।'

দেশে বাজারে শুভেচ্ছা কার্ডের শুরু হয় আইডিয়াল প্রডাকস এর মাধ্যমে। তারপর আজাদ প্রডাকস নান্দনিক ডিজাইনের মাধ্যমে ৮০ দশক মাতিয়ে রাখে। এরপর সোশ্যাল মিডিয়া ডিজিটাল শুভেচ্ছা বাড়ায় ২০১৫ থেকে কমা শুরু হয় বিক্রি। ২০১৯ সালের পর বিক্রি কমেছে ৯০ শতাংশ। তবু আশায় বুক বেঁধে আছে বিক্রেতারা। গত বছরের তুলনায় এ বছর কিছুটা বেড়েছে বেড়েছে ক্রেতা।

বিক্রেতারা বলেন, 'মোবাইল আসার পরে কিছুটা কমে গিয়েছিল। এরপর কোভিড-১৯ আসার পরে একদমই কমে যায়। তবে এখন কিছুটা বিক্রি হচ্ছে।'

ক্রেতারা বলেন, 'ছোটবেলায় বন্ধুদের অনেকগুলো করে ঈদ কার্ড দিতাম কিন্তু এখন এগুলো স্মৃতি।'

ঈদ কার্ডের মত, ঈদ এলেই একটা সময়ে উৎসবের আমেজ নিয়ে পাঠকেদের দুয়ারে হাজির হতো বিশেষ ঈদসংখ্যা। ছাপার অক্ষরের সেই আবেদনও এখন কমে গেছে। অপেক্ষা কমেছে গ্রাহকদের।

তবে এখনো কেউ কেউ খুঁজে ফেরেন সেই পুরনো খুশি। সাহিত্যপ্রেমিদের এখনো দেখা যায় পত্রিকার বিক্রয় কেন্দ্রে। ঈদসংখ্যার সেকালের কথা বলতে গিয়ে অনেকেই হয়ে ওঠেন আবেগ প্রবণ।

পাঠকরা বলেন, 'ভালো ভালো লেখকের লেখা পাবো আমরা এর অপেক্ষায় থাকি। কবি যারা তারা কিন্তু তাদের সেরা লেখা ঈদসংখ্যায় দিতেন।'

আরেকজন বলেন, 'ঈদসংখ্যার মাধ্যমে আমরা এদেশের এবং বাইরের লেখকের লেখা পড়তে পারছি।'

ঈদসংখ্যার যাত্রা শুরু ১৯৪৮ সালে বেগম পত্রিকার হাত ধরে। এরপর একে একে প্রায় সকল পত্রিকা ও ম্যাগাজিন হাঁটে সেই পথে। কিন্তু দিন দিন কমেছে গ্রাহক চাহিদা।

কবি ও সম্পাদক মারুফ রায়হান আরও বলেন, 'আমাদের সময়ে দেখতাম ঈদসংখ্যার জন্য অনেকে অতন্ত প্রতিক্ষায় থাকতেন। একটা ঈদসংখ্যা যদি বাসায় আসতো কোন পরিবারের কাছে তাহলে কাড়াকাড়ি পড়ে যেতো ওই ঈদসংখ্যা নিয়ে। এখন আমি দেখছি সেরকম অবস্থা নেই।'

সাহিত্যিক ফয়জুল লতিফ চৌধুরি বলেন, 'দেশে ১৭ কোটি লোক হয়ে গেছে কিন্তু সেই হারে ভালো লেখক, কবির আর্বিভাব হয়নি। সুতরাং এত ঈদসংখ্যা কারা লেখবে। এদিক দিয়ে ঈদসংখ্যার মানও কমে গিয়েছে।'

এবারের ঈদে প্রকাশিত ঈদ সংখ্যার দাম পড়বে ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা। আর প্রতিটি ঈদসংখ্যা ছাপা হয়েছে ২ থেকে ৪ হাজার পর্যন্ত।

ইএ