গতবছর ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ঢাকঢোল পিটিয়ে লাখ লাখ টাকা খরচ করে বিটিআই আনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। নানা জটিলতায় প্রায় কোটি টাকার এ জৈব কীটনাশক ব্যবহার করা যায়নি। অথচ সে বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর দিক থেকে রেকর্ড করে বাংলাদেশ।
এ বছর নানা জরিপ আর গবেষণা আভাস দিচ্ছে ডেঙ্গু আরও ভয়াবহ হবে। এমন অবস্থায় সমাধানের পথ খুঁজতে উত্তর সিটি করপোরেশন বিটিআইতেই ভরসা রাখতে চায়।
জৈব কীটনাশক বিটিআই, যার পুরো অর্থ বাসিলাস থুরিনজেনসিস ইসরায়েলেনসিস। মশা মারতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এ বিটিআই ব্যবহার করা হয়।
উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইং থেকে জৈব কীটনাশক বিটিআই আমদানি করতে এরইমধ্যে রেজিস্ট্রেশনও সম্পূর্ণ করেছে ডিএনসিসি। দেশে এখন পর্যন্ত ৮টি কোম্পানি বিভিন্ন প্রকারের বিটিআই আনার অনুমতি পেয়েছে। তারমধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন তরল, ট্যাবলেট, পাউডার ও দানাদার এ ৪ প্রকারের বিটিআই আনার অনুমতি পেয়েছে।
সব মিলিয়ে প্রায় ২০ কোটি টাকার জৈব কীটনাশক বিটিআই আনতে যাচ্ছে ডিনসিসি। যা আনতে সময় লাগবে আরও দুই মাস।
ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, 'আমরা এবার ২০ কোটি টাকার বিটিআই নিয়ে আসতেছি। এটা তরল, ট্যাবলেট, পাউডার এ তিনটি ফর্মে আসবে। এটি সম্পূর্ণ অর্গানিক এবং যারা ছিটাবে তাদের তাদের কোন ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হবে না। ৬০ দিনের মধ্যে নিয়ে আসা আমাদের লক্ষ্য।'
দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা। ছবি: এখন টিভি
গতবছর দেশিয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মার্শাল অ্যাগ্রোভেট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এ বিটিআই সরবরাহ করে ডিএনসিসিকে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইং এবং কাস্টমস থেকে সনদ জালিয়াতির মাধ্যমে এই বিটিআই দেশে আসে। সিঙ্গাপুরের বেস্ট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের সাথে এখন টেলিভিশন যোগাযোগ করেই জানতে পারে এ পণ্য জালিয়াতির কথা। সেবার সিঙ্গাপুরের এই কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে ডিএনসিসি বা মার্শাল এগ্রো কোন পণ্য ক্রয় বা আমদানি করেনি।
এবারও আমাদের পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে মেইলে যোগাযোগ করা হয়। উত্তরে তারা জানান, এবার উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে বিটিআই আমদানির বিষয়ে সিঙ্গাপুরের বেস্ট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের সাথে যোগাযোগ করেছে। তবে গোপনীয়তার স্বার্থে আর কোন তথ্য দেয়া সম্ভব না বলেও জানানো হয় বেস্ট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের পক্ষ থেকে।
তবে কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, এডিস মশা এবং ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে হলে দীর্ঘমেয়াদী ও সারাবছরের পরিকল্পনা নিতে হবে বলে জানান কীটতত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার। তিনি বলেন, 'জুন মাস থেকেই ডেঙ্গুর মৌসুম শুরু হবে। যত দ্রুত সম্ভব এটি প্রক্রিয়া করে নিয়ে আসা যায় ততই ভালো। চট্টগ্রাম, বরিশাল, চাঁদপুর, বরগুনা, পিরোজপুর এ কয়টি জেলায় আমি নিজে কাজ করেছি। তাই নিশ্চিত করে বলতে পারি এ জেলাগুলোতে অন্যান্য বছরের তুলনায় ডেঙ্গু বেশি হবে। এমনকি কয়েকটি উপজেলাতেও পৌঁছাবে।'
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রোজার পর থেকেই সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে এডিস নিধন অভিযান শুরু করা হবে।