শীতের বিকেল বলে খুবই কম সময় পাওয়া যায় হাতে, তাই গাছির লক্ষ্য থাকে-সবগুলো খেজুর গাছে হাড়ি বাঁধতে হবে সন্ধ্যে নামার আগেই। তবে সময়ের তাড়া থাকলেও এ কাজে তাড়াহুড়ো করার জো নেই। কর্মীর দক্ষতার ওপর নির্ভর করে গাছ বাঁচিয়ে কীভাবে আহরণ করতে হয় রস।
ফরিদপুরে বাণিজ্যিক চাহিদা থাকায় অনেকেই চুক্তি করে গাছি আনেন রাজশাহী সহ বিভিন্ন জেলা থেকে। কখনও তারাই এ এলাকায় এসে গাছ ইজারা নিয়ে নিজেরাই উৎপাদন করেন খেজুর গুড়।
এনামুল নামের এক গাছি বলেন, 'দিনে একশ'টা গাছ কাটলে ২০ থেকে ২২ কেজি গুড় পাওয়া যায়। শীতের সময় আমরা এখানে আসি, শীত শেষ হলে আমরা চলে যাই।'
গত কয়েক বছর ধরে নিপাহ ভাইরাসের প্রার্দুভাবে কারণে গাছিরা বিশেষ প্রক্রিয়ায় রস সংগ্রহ করেন। বাদুর ছাড়াও অন্য পাখি এবং ছোট কিছু প্রাণি থেকে নিরাপদ রাখা যায় রস।
আগের বিকেলে পেতে রাখা হাড়ি নামানো হয় পরদিন ভোর বেলা। এরপরের প্রক্রিয়াটা মূলত গুড় তৈরির জন্য। বড় পাত্রে প্রায় দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা জ্বাল দেয়ার পাশাপাশি আরও কিছু আনুষ্ঠানিকতা থাকে। সার্বক্ষণিক নজর আর নাড়ানো ছাড়াও কারিগরের দক্ষতার ওপর নির্ভর করে ভালো গুড়ের উৎপাদন।
শীত মৌসুমে প্রায় চার মাস ধরে চলে এ কার্যক্রম। একটি গাছ থেকে প্রতিদিন দুই থেকে তিন লিটার রস হয়। আর তা থেকে তৈরি হয় এক কেজি গুড়। বর্তমান যার বাজার মূল্য ৫০০ টাকা।
একজন ক্রেতা বলেন, 'গুড়গুলো ভালো মানের। কোনো ভেজাল নেই, একদম নির্ভেজাল গুড়। এতে কোনো কেমিক্যাল মেশানো হয় না।'
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ফরিদপুরে প্রায় ৪ লাখ খেজুর গাছ রয়েছে, যার মধ্যে রস সংগ্রহ করা হয় এখ লাখের বেশি গাছ থেকে। এ থেকে প্রতিদিন ২০ হাজার কেজি গুড় বাজারজাত করা হয়। যার বাজার মূল্য আনুমানিক দশ লাখ টাকা।
ফরিদপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, 'খেজুর গাছ কোনো ছায় দেয় না। সেজন্য এ গাছ জমির আইলে রোপন করা সম্ভব। এ থেকে বাড়তি আয়ও সম্ভব।'
সারাদেশেই নামডাক এখানকার খেজুরগুড়ের। তাই স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন জেলায়। গাছির সংখ্যা বাড়লে সব গাছকেই আনা সম্ভব উৎপাদনে। এতে আবারও ফিরবে জেলার ঐতিহ্য।