মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) বিকেল তিনটায় বসছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন। যেখানে আওয়ামী লীগের ২২৩ জন সংসদ সদস্য, বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ১১ জন ও অন্যান্য ৩টি দলের তিনজন সংসদ সদস্য থাকছেন। তবে, স্বতন্ত্র হিসেবে এই সংসদে রেকর্ড ৬২ জন সংসদ সদস্য অংশ নিচ্ছেন। যদিও এদের মধ্যে ৫৯ জন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে রয়েছেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনের প্রথম দিন স্পিকারের সভাপতিত্বে প্রথমে শোক প্রস্তাব ও অন্যান্য প্রাথমিক আনুষ্ঠানিকতা পালন করা হবে। এরপর স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন করার বিধানও রয়েছে। যেখানে স্পিকার হিসেবে শিরীন শারমিন ও ডেপুটি স্পিকার হিসেবে শামসুল হক টুকুকে পুনরায় মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় এবারও তারা নির্বাচিত হবেন।
স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচনের পর রাষ্ট্রপতির ভাষণ দেয়ার বিধান রয়েছে। পরে সংসদ অধিবেশন তিনদিনের জন্য মূলতবী ঘোষণা করে প্রথম দিনের কার্যক্রম শেষ হবে। তিনদিন পর সংসদ মূলতবী শেষে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ জ্ঞাপন ও নানা ধরনের প্রস্তাবনা আনতে পারবেন এমপিরা। সরকারদলীয় হুইপ ও সংসদ সদস্যরা বলছেন, এই সংসদ হবে আলোচনামুখর। যেখানে বৈশ্বিক পরিস্থিতি, অর্থনীতি ও কীভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা যায়, তা তুলে ধরা হবে।
সরকার দলীয় হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, 'সংসদ এবং পল্টন ময়দান এক বিষয় নয়। সংসদে কথা বলতে হলে কার্যপ্রণালীবিধির মধ্যে থেকে কথা বলতে হয়। এক্ষেত্রে অবশ্যই স্বতন্ত্র ও বিরোধীদলের সদস্যদের অগ্রাধিকার থাকে। কিন্তু সরকারি দলের সদস্যদের সব জায়গায় সুযোগ থাকে না। সেক্ষেত্রে তারা মুক্তভাবে কথা বলবেন এবং কার্যপ্রণালীবিধির মধ্য দিয়ে তারা ন্যায্য কথা বলবেন। তাদের ন্যায্য কথাগুলো সরকার অবশ্যই মূল্যায়ন করবে।'
সরকার দলীয় আরেক হুইপ নজরুল ইসলাম বাবু বলেন, 'অধিক সংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থীও জয়লাভ করেছেন, যার সংখ্যা ৬২ জন। উনারা আছেন, বিরোধী দল আছে, অন্যান্য দল থেকেও দু'একটি করে আসন পেয়েছেন। সবাইকে নিয়ে একটি প্রানবন্ত সংসদ গড়ে ওঠবে এটি আমরা আশা করি।'
বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, 'স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের ক্ষেত্রে তরুণদের যে অংশগ্রহণ এবং মাদকমুক্ত একটি তরুণ সমাজ যাতে গড়ে ওঠে সেজন্য আমরা সংসদে চেষ্টা করবো। যাতে আরও নতুন নতুন আইন প্রণয়ন করা যায়।'
বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, 'দুর্নীতি, টাকা পাচার, ব্যাংক লুট, বিদেশে টাকা পাচার, বাজারে নিয়ন্ত্রণে নাই, জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া। এতো জিনিস আছে জনগণের পক্ষে বলার, আমরা তাই বলবো। জনগণের চাহিদা অনুযায়ী আমরা পার্লামেন্টে সত্যিকারের বিরোধীদল হিসেবে ভূমিকা রাখতে চাই।'
তবে এবারের সংসদে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৬২ জন স্বতন্ত্র এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। যারা অধিবেশনের অলংকারের ভূমিকায় থাকবেন। স্বতন্ত্র এমপিরা বলছেন, সংসদে জনগণের চাওয়া-পাওয়া তুলে ধরবেন তারা । বিশেষ করে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে সরকারি দলকে জবাবদিহিতার আওতায় আনবেন বলে জানান তারা।
ফরিদপুর ৩ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য এ কে আজাদ বলেন, 'দেশের জন্য, মানুষের জন্য চাপ তৈরি করবে, যেকোন ট্যাক্সের ব্যাপার হতে পারে, বিদ্যুতের বিলের ব্যাপার হতে পারে, গ্যাস বিদ্যুৎ প্রবৃদ্ধির ব্যাপারে হতে পারে। যেটা সংযত নয়, সেটা আমরা তুলে ধরবো।'
পিরোজপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মো. মহিউদ্দীন মহারাজ বলেন, আমরা সংসদে অবশ্যই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাবো যে, যেকোন মূল্যে দ্রব্যমূল্যের নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে এবং ক্রয়ক্ষমতা সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে রাখতে হবে।'
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিসহ চলমান সরকার বিরোধী আন্দোলনে থাকা দলগুলো অংশ না নেয়ায় এ সংসদে তাদের কোন প্রতিনিধি নেই।
সাধারণ মানুষ মনে করছেন, এই দ্বাদশ জাতীয় সংসদকে সবচেয়ে বেশি প্রাণবন্ত করে রাখবেন যে ৬২ জন সংসদ সদস্য স্বতন্ত্র হিসেবে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। তবে যে যে দল থেকে নির্বাচিত হয়েই এই সংসদে প্রতিনিধিত্ব করুক না কেন, তারা সকলেই সাধারণ ভোটারকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন, সে কথাগুলোই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব সহকারে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ অধিবেশনে তুলে ধরবেন বলে প্রত্যাশা করছেন সাধারণ মানুষ।