শিক্ষা
দেশে এখন
0

নতুন শিক্ষাক্রমে যথাযথ মূল্যায়ন নিয়ে প্রশ্ন

মূল্যায়ন পদ্ধতি পরিবর্তনের আভাস শিক্ষামন্ত্রীর

শিখনকালীন মূল্যায়ননির্ভর নতুন শিক্ষাক্রম গতবছর থেকে চালু হয়েছে। এর মাধ্যমে ইতোমধ্যে ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা মূল্যায়িত হয়েছে। এতে শিক্ষার্থী কতটুকু শিখলো তা আসলেই যথাযথ মূল্যায়ন করা সম্ভব কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এছাড়া অভিভাবকদের মাঝেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

২০১৭ সালে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নেয় দেশের প্রায় ২৭ লাখ শিক্ষার্থী। এই শিক্ষার্থীরাই যখন সবশেষ ২০২৩ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নেয় তখন তাদের সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ২০ লাখে। অর্থাৎ গত ৫ বছরে একটি ব্যাচ থেকে মাধ্যমিকেই ঝরে পড়েছে ৬ লাখের বেশি শিক্ষার্থী।

শিশুশ্রম, বাল্যবিয়ের মতো কারণের সাথে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার আরও একটি বড় কারণ পরীক্ষার নম্বরের মারপ্যাচে পড়া। কোন বিষয়ে এক-তৃতীয়াংশ নম্বর না পেলে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ না হতে পেরে অনেকের শিক্ষাজীবন থমকে যায়।

শিক্ষার্থীরা বলছে নতুন অভিজ্ঞতার কথা। তারা বলেন, ‘আগে ১০০ নম্বরের মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ পেতাম। এখন একেবারেই ভিন্ন, হাত-কলমে সব কাজ করেছি। শিক্ষকরা সেই কাজ দেখে মূল্যায়ন করেছেন।’

তবে অভিভাবকদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। একাধিক অভিভাবক বলেন, ‘পরীক্ষা নেই, মূল্যায়ন হয় না। বাচ্চরা পড়াশোনাও করতে চায় না। বাচ্চারা বই পড়ে পরীক্ষায় লিখবে, কিন্তু আমরা এই মূল্যায়ন চাই না।'

আরেক অভিভাবক বলেন, ‘মূল্যায়ন পদ্ধতি আমার ভালো লেগেছে। কারণ বাচ্চাদের মধ্যে কোন মানসিক চাপ ছিল না।’

গত বছরের শেষ দিকে মূল্যায়নে শিক্ষকদের জন্য 'নৈপূণ্য' অ্যাপ তৈরি করা হয়। অ্যাপের মাধ্যমে সারাদেশের ৩৩ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাড়ে ৪ লাখের বেশি শিক্ষক ৪৪ লাখ শিক্ষার্থীকে মূল্যায়ন করেন। এর মধ্যে ২০ হাজার প্রতিষ্ঠান অ্যাপের মাধ্যমে রিপোর্ট কার্ড দিতে সক্ষম হয়। শিখনকালীন মূল্যায়ননির্ভর এই শিক্ষাক্রমে রয়েছে শ্রেণিকক্ষে ধারাবাহিক মূল্যায়ন, ষান্মাসিক মূল্যায়ন এবং বার্ষিক মূল্যায়ন।

মূল্যায়নের কাজে যুক্ত থাকতে হয় স্বয়ং শ্রেণি শিক্ষককে। কেমন ছিল তাদের অভিজ্ঞতা?

শিক্ষকরা বলছেন, ‘অ্যাপে রিপোর্ট দিতে প্রবলেম হয়েছে। শুরুতে আমাদের পিডিএস বা আইডি নম্বর পেতে কিছুটা দেরি হয়েছে। আর আমরা ক্লাসে শেখাচ্ছি কিন্তু শিক্ষার্থীরা কতটুকু শিখলো এটি বুঝতে পারছি না।’

আগের ফার্স্ট, সেকেন্ড, থার্ড এমন মূল্যায়ন বাদ দিয়ে ত্রিভূজ, চতুর্ভূজ, বৃত্ত চিহ্ন একে রিপোর্ট কার্ড দেয়া হয় এবার। এই রিপোর্ট কার্ডে কোন বিষয়ে কত নম্বর পেয়েছে একজন শিক্ষার্থী সেটিও উল্লেখ নেই।

শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. এস এম হাফিজুর রহমান বলেন, ‘এই মূল্যায়ন পদ্ধতিতে কিছু শঙ্কার বিষয় রয়েছে। তাই সংস্কারের প্রয়োজন আছে।’

এদিকে নতুন শিক্ষাক্রমের মূল্যায়ন পদ্ধতিতে পরিবর্তনের আভাস দিয়ে আসছেন নবগঠিত সরকারের শিক্ষামন্ত্রী। কী ভাবছেন তিনি, কেমন পরিবর্তন আসতে পারে?

শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য, শিক্ষার্থীরা মূল্যায়নের নামে যেন কোচিং বাণিজ্যের শিকার না হয়। এছাড়া অর্থনৈতিক হয়রানির শিকার না হয় সেটি নিশ্চিত করা।

আর বিশ্বের অন্যান্য দেশে এ ধরনের শিক্ষাক্রমে কীভাবে মূল্যায়ন করা হয় বা হচ্ছে সেটাও দেখতে হবে বলে তিনি জানান।