২০১০ সালে মাধ্যমিকে প্রথমবার বাংলা এবং ধর্মশিক্ষা বিষয়ে সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষা হয়। পরে পর্যায়ক্রমে অন্য বিষয়গুলোও এই পদ্ধতির আওতায় আসে। মাধ্যমিকের পাশাপাশি উচ্চ মাধ্যমিকেও শুরু হয় সৃজনশীল। প্রশ্নে একটি উদ্দীপকের আলোকে জ্ঞানমূলক, অনুধাবন মূলক, প্রয়োগমূলক ও উচ্চতর দক্ষতামূলক- এই ৪ ধরনের উত্তর লিখতে হতো। অবশ্য পরে এই সৃজনশীল পদ্ধতি নিয়েও বিতর্ক কম হয়নি।
এরপর প্রণীত হলো জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২২। যা ২০২৩ সাল থেকে বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। কিন্তু এটি করতে গিয়ে ধরা পড়ে নানান অসঙ্গতি। সবচেয়ে বেশি বিতর্ক হয়েছে এর মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে। কখনও বলা হয়েছে লিখিত পরীক্ষা নয়, পুরোটা হবে শিখনকালীন মূল্যায়ন। আবার কখনও ৬৫ শতাংশ লিখিত আর ৩৫ শতাংশ শ্রেণিভিত্তিক মূল্যায়নের কথা।
সবশেষ ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নে দেখা গেছে, মোট পাঁচ ঘণ্টার পরীক্ষা হয়েছে। যেখানে দুই ঘণ্টা বিভিন্ন অ্যাক্টিভিটিস আর তিন ঘণ্টা লিখিত পরীক্ষা। সারাদেশে একই প্রশ্নে মূল্যায়ন হয়, যা জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড থেকে প্রণীত। তবে, মূল্যায়নের বিতর্কে আরও ঘি ঢালে আগের রাতের প্রশ্নফাঁস। সেই প্রশ্নের সমাধানও আবার ইউটিউবে মিলে যায়। তারপর মূল্যায়নের সময় আবার বই দেখে লেখার সুযোগ। সবমিলিয়ে 'হ য ব র ল' অবস্থা।
এমন মূল্যায়নে অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকই হয়েছে তিক্ত বিরক্ত।
একজন শিক্ষার্থী বলেন, 'এই মূল্যায়ন পদ্ধতি মোটেও আমাদের ভবিষ্যতের জন্য কার্যকর না। আমাদের মূল্যায়ন বা কারিকুলাম পদ্ধতি এমনভাবে তৈরি করা হোক যেটা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য কার্যকরী হবে আর আমরা যেন দক্ষ নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারি।'
একজন অভিভাবক বলেন, 'আমার তো মনে হয় না যে আমার বাচ্চা তেমন কিছু শিখেছে। যেভাবে পরীক্ষা হয়েছে সেটা আদৌ পরীক্ষা কীনা, তা নিয়ে আমার সন্দেহ হয়। আর এই মূল্যায়ন আসার পর আমার বাচ্চা তো পড়তেই বসতো না। পড়তে বসতে বললেও পড়েনি।'
দেশের পট পরিবর্তনের পর অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার এই 'হ য ব র ল' মূল্যায়ন পদ্ধতিতে পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাহলে কি ফিরছে সৃজনশীল পদ্ধতিতেই? না কী অন্যকিছু? নতুন যে পদ্ধতি আসছে, তাতে শিক্ষার্থী কি আগের মতোই পড়ার টেবিলে ফিরবে?
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক ইতোমধ্যেই নতুন পরীক্ষা পদ্ধতির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বছর ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণিতে বার্ষিক পরীক্ষায় ৩০ শতাংশ হবে শিখনকালীন মূল্যায়ন আর ৭০ শতাংশ লিখিত পরীক্ষা। লিখিত ৭০ শতাংশের জন্য ১০০ নম্বরের প্রশ্নপত্রে তিন ঘণ্টায় পরীক্ষা দিতে হবে। যেখানে বহুমাত্রিক প্রশ্নের মধ্যে থাকবে বহুনির্বাচনি প্রশ্ন, সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন, প্রেক্ষাপটনির্ভর প্রশ্ন। বিষয় ও প্রশ্নের ধরন অনুযায়ী হবে নম্বর বণ্টন।
এনসিটিবি বলছে, শিক্ষার্থীরা লব্ধ জ্ঞানের কতটুকু অর্জন করতে পারলো তা যথাযথভাবে মূল্যায়ন করতেই নতুন পরীক্ষা পদ্ধতি। এ বিষয়ে চলতি সপ্তাহেই পরিপত্র জারি হবে।
এনসিটিবি সদস্য প্রফেসর রবিউল কবীর চৌধুরী বলেন, 'আমাদের শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের ক্যাপাবিলিটি চিন্তা করেই আমরা এই পদ্ধতিতে যাচ্ছি। এবং আশা করি ইফেক্টিভ পরীক্ষা পদ্ধতি আমরা চালু করবো। এটা সবার জন্যই উপকার বয়ে আনবে।'
নতুন পরীক্ষা পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা পড়ার টেবিলমুখী হবে বলেও দাবি এনসিটিবি'র।
প্রফেসর রবিউল কবীর চৌধুরী বলেন, 'যে মূল্যায়ন পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে তাতে শিক্ষার্থীরা পড়ার টেবিলে ফিরে আসবে। শিক্ষার্থীরা পড়ে শ্রেণিকক্ষে তারা তাদের জ্ঞানকে প্রয়োগ করার সুযোগ পাবে এই পদ্ধতিতে।'
আর ২০২৬ সালে কোন পদ্ধতিতে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা হবে, সে ব্যাপারেও শিগগির সিদ্ধান্তে আসবে কর্তৃপক্ষ।