পটুয়াখালীর আন্ধারমানিক নদের মোহনায় মৌসুমি ব্যস্ততা। গলদা-বাগদা নয় বিশেষ এক প্রকার চিংড়িকে প্রক্রিয়াজাত করার জন্য। স্থানীয়দের ভাষায়- ভুলা চিংড়ির এ আহরণ ও বেচাকেনা চলে প্রায় চার মাস।
মূলত নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে কাজটি শুরু হয়। প্রতিদিন ১৫ হাজার মণ চিংড়ি আহরণ করছেন এখানকার ৩ হাজার জেলে।
সকাল থেকে সূর্যের তেজ থাকা পর্যন্ত চলে শুঁটকি প্রস্তুতের কাজ। তীরে প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকার খোলা মাঠ এখন ব্যবহার হয় এই কাজে। যেখানে অন্তত ১ লাখ নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
শুঁটকি প্রস্তুতকারীরা বলেন, আমরা প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০টি নেটে মাছ শুকাই। মাছ ধরার পর নেটে বিছিয়ে দিলে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা আয় হয়।
শুধু চাতাল নয় দূর-দূরান্ত থেকে নৌকা-ট্রলারের গন্তব্য এখন নিজামপুর মোকামের দিকে। আন্ধারমানিক ও সোনাতলা নদের ঘাটের বড় একটি অংশ জলযানে ভরপুর।
এসব কাজে জড়িতরা জানান, চিংড়ি দিয়ে তৈরি হয় দুই ধরনের পণ্য। নাপি নামক এক ধরনের বিশেষ খাবার যা বিক্রি করা হয় দেশের পার্বত্য অঞ্চলে। রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ছাড়াও বিক্রি হয় কক্সবাজারে। এছাড়া মায়ানমার ও ভারতের মিজোরাম অঞ্চলে রপ্তানি হচ্ছে।
শুঁটকি থেকে তৈরি করছে নাপি। ছবি: পটুয়াখালী।
শুটকি উৎপাদনকারী চটার মালিকরা বলেন, 'এ মাছগুলো আমরা ঢাকা, চট্টগ্রামে পাঠিয়ে দিই। সাগর থেকে নিয়ে এসে এখানে নাপি তৈরি করি। তারপর এগুলো বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হয়।
ব্যবসায়ীরা জানান, রাসায়নিক মুক্ত হওয়ায় দেশ-বিদেশে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত শুঁটকি ও নাপির চাহিদা রয়েছে। স্থানীয় বাজার থেকে ও রপ্তানির মাধ্যমে প্রতিদিন আয় হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। পরিবহনের জন্য সড়ক যোগাযোগ উন্নত করা হলে এ ব্যবসা আরও গতিশীল হবে বলে মনে করেন তারা।
কলাপাড়া নিজামপুরের আড়ত মালিক মো. ইসাহাক হাওলাদার বলেন, 'আমাদের এ রাস্তা অত্যন্ত খারাপ। রাস্তা পাকা হলে বিভিন্ন স্থান থেকে বড় গ্রাহকরা আসলে ব্যবসায়ীরা ভালোভাবে ব্যবসা করতে পারবে।'
পণ্য দু’টির মূল কাঁচামাল ছোট চিংড়ি কেবল এ মৌসুমে সমুদ্রে পাওয়া যায়। স্বল্প মেয়াদের এই কর্মযজ্ঞে আয়ও ভালো হয়। রপ্তানির বাজার আরও সম্প্রসারণের আহ্বান ব্যবসায়ীদের।