রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে অনুষ্ঠিত নামাজে জানাজায় দক্ষিণ এশিয়া ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিরা অংশ নেন, যা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খালেদা জিয়ার দীর্ঘস্থায়ী মর্যাদার প্রতিফলন।
বহুসংখ্যক বিদেশি উচ্চপদস্থ ব্যক্তির উপস্থিতিতে জানাজার আয়োজনটি রূপ নেয় সম্মিলিত শোক ও কূটনৈতিক শ্রদ্ধার এক অনন্য মুহূর্তে।
পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের স্পিকার সরদার আয়াজ সাদিক পাকিস্তান সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে সকালে ঢাকায় পৌঁছান। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং পাকিস্তান হাইকমিশনের কর্মকর্তারা স্বাগত জানান, যা প্রয়াত বিএনপি নেত্রীর রাজনৈতিক উত্তরাধিকারের প্রতি ইসলামাবাদের শ্রদ্ধার প্রতিফলন।
আরও পড়ুন:
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করও ভারত সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে জানাজায় অংশ নিতে বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকায় পৌঁছান। এতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস ও আঞ্চলিক সম্পৃক্ততায় খালেদা জিয়ার ভূমিকার প্রতি নয়াদিল্লির স্বীকৃতি ফুটে ওঠে।
বিশ্বব্যাপী শ্রদ্ধা নিবেদনে একটি গভীর ব্যক্তিগত কূটনৈতিক মাত্রা যোগ করে জয়শঙ্কর ও সরদার আয়াজ সাদিক পৃথকভাবে জাতীয় সংসদ ভবনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং প্রয়াত নেত্রীর জ্যেষ্ঠ পুত্র তারেক রহমানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন এবং সরাসরি সমবেদনা জানান।
সাক্ষাৎকালে জয়শঙ্কর ভারত সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক শোকবার্তা হস্তান্তর করেন, যার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একটি ব্যক্তিগত চিঠিও ছিল।
আরও পড়ুন:
তিনি ভারত সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে গভীর সমবেদনা জানান এবং পরে আশা প্রকাশ করেন যে, খালেদা জিয়ার দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের উন্নয়নে পথনির্দেশক হিসেবে কাজ করবে।
অন্যদিকে, পৃথক সাক্ষাতে পাকিস্তানের স্পিকার সরদার আয়াজ সাদিক পাকিস্তান সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক শোকবার্তা তারেক রহমানের কাছে হস্তান্তর করেন। শোকবার্তায় খালেদা জিয়াকে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আপসহীন এক নেত্রী হিসেবে স্মরণ করা হয়।
শ্রীলঙ্কার পক্ষে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিজিথা হেরাথ ঢাকায় পৌঁছে সরাসরি জানাজায় অংশ নেন। নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বালা নন্দ শর্মা নেপাল সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত ছিলেন।
ভুটানের পররাষ্ট্র ও বৈদেশিক বাণিজ্যমন্ত্রী লিয়নপো ডি. এন. ধুংগেল রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় হওয়া জানাজায় অংশ নেন, যা অনুষ্ঠানে শক্তিশালী আঞ্চলিক উপস্থিতিকে আরো দৃঢ় করে।
আরও পড়ুন:
মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টের একজন বিশেষ দূতও বিদেশি প্রতিনিধিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, জাপান, জার্মানি, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ প্রায় ৪০টি দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার এবং বহুপাক্ষিক ও আঞ্চলিক সংস্থার প্রধানরা জানাজায় অংশ নেন।
তাদের সম্মিলিত উপস্থিতি খালেদা জিয়ার প্রতি বিস্তৃত কূটনৈতিক শ্রদ্ধার প্রতিফলন, যার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা এবং প্রতিবেশী ও বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের ওপর গভীর ছাপ রেখে গেছে।
ঢাকায় বিশ্ব ও আঞ্চলিক নেতাদের এই সমাবেশ বাংলাদেশের অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের প্রতি এক গম্ভীর আন্তর্জাতিক শ্রদ্ধাঞ্জলি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।




