দেশের ইতিহাসের সেরা নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা বহুবারই এসেছে প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকে। তাতে গলা মিলিয়েছেন অন্যান্য উপদেষ্টারাও।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছিলেন, ‘স্পষ্টভাবে বলে আসছি যে আমরা একটা অত্যন্ত উচ্চমানের, মানুষ যেন গিয়ে ভোট দিতে পারে সেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই, যা গত ১৫ বছরে ছিল না।’
আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের মূল দায়িত্ব যার কাঁধে, সেই স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাও আশ্বাস দিয়েছিলেন তফসিল ঘোষণার পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছিলেন, ‘আমি আশা করবো, এই নির্বাচনটা খুব ফ্রি, ফেয়ার, ক্রেডিবল এবং উৎসবমুখর হোক।’
তবে তাদের এমন আশার বাণীর সঙ্গে, এখনও বিস্তর ফারাক বাস্তবতার। একের পর এক নিশানা হচ্ছেন রাজনৈতিক নেতারা। তফসিল ঘোষনার পরদিনই, গুলিবিদ্ধ হন ঢাকা-৮ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে চাওয়া শরিফ ওসমান হাদি, লড়াই করে হেরেও যান মৃত্যুর কাছে।
আর এর কয়েকদিন আগেই গুলি চলে চট্টগ্রাম-৮ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থীকে লক্ষ্য করে। সবশেষ, ২২ ডিসেম্বর গুলিবিদ্ধ হন এনসিপির খুলনা অঞ্চলের নেতা মোতালেব শিকদার। আর এসব ঘটনায় উদ্বেগ বাড়ছে রাজনীতির মাঠে।
আরও পড়ুন:
নিরাপত্তা বিশ্লেষক কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) জগলুল আহসান বলেন, ‘রাষ্ট্র বা প্রশাসনের দায়িত্বে যারা আছেন, তাদের ব্যর্থতা তো অবশ্যই বলতে হবে। যখন রাষ্ট্রের একজন নাগরিক নিরাপত্তা হুমকি ফেস করবেন, তখন তার নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রের।’
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে কেবল রাজনৈতিক সংঘাতের ঘটনাই নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১শ'র বেশি। এর মাঝে ডেইলি ষ্টার ও প্রথম আলোসহ দুটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের ওপর হামলায়ও নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের সামর্থ নিয়ে।
নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জসীম উদ্দীন বলেন, ‘অবশ্যই পরিস্থিতি উন্নত করতেই হবে, ভয়-ভীতিমুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে। তবে আমরা যেটা দেখছি, সেটা কিছুটা মনে হচ্ছে এখনো দুর্বল রয়ে গেছে। সেটার প্রমাণ আমরা যেটা পাচ্ছি যে, আমাদের হাদির ওপর আক্রমণ অথবা অন্যান্য প্রার্থীরা নিরাপত্তার অযুহাতে সরে যাচ্ছে। এটা কিন্তু আমাদের জন্য দুঃখজনক।’
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি দেড় মাসেরও কম। এমন বাস্তবতায়, ভোটের উপযোগী পরিবেশ তৈরিকেই বড় চ্যালেঞ্জ মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, ভোটারদের আস্থা অর্জনে কঠোর হতে হবে ইসি ও সরকারকে।
নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. আব্দুল হালিম বলেন, ‘হাতে এখনো খানিকটা সময় আছে। এখনো যদি সরকার, নির্বাচন কমিশন খুব কার্যকর কোনো পরিকল্পনা হাতে নেয় এবং আমরা দেখলাম যে ইসি তিন বাহিনীর প্রধানদের ডেকেছিল, শুধু ডাকা নয়, এখান থেকে আমরা কী কাজটা করতে চাই, আমাদের চ্যালেঞ্জগুলো কী এটাকে বের করে সে অনুযায়ী কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
তবে শুধু সরকারকেই না, সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতে নির্বাচনে অংশ নিতে রাজনৈতিক দলগুলোকে এগিয়ে আসার পরামর্শ রাজনীতি বিশ্লেষকদের।
তফসিল ঘোষণার পর প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্বাচন কমিশনের আওতায় চলে গেলেও তাদের সক্রিয়তা নিয়ে কথা উঠছে বিভিন্ন মহলে। আর কতো সময় গেলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সন্তোকজনক অবস্থায় যাবে? —এ প্রশ্ন থেকেই যায়।





