আরও পড়ুন:
১. জাতীয় পতাকার নকশা ও বিবরণ (Flag Design and Specifications)
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা দেখতে গাঢ় নীলচে সবুজ (Dark Bluish-Green) পটভূমিতে একটি বৃহৎ কমলা-লাল (Orange-Red) বৃত্ত নিয়ে গঠিত। এটি একটি সরল নকশা, যা দেশের স্বাধীনতা অর্জনের তীব্র সংগ্রামকে স্মরণ করিয়ে দেয়।
রঙ ও জমিন (Colors and Field): পতাকার পটভূমি হলো গাঢ় নীলচে সবুজ।
বৃত্তের অবস্থান (Disk Position): কমলা-লাল বৃত্তটি পতাকার ঠিক কেন্দ্রে না থেকে উত্তোলন দণ্ড বা মাস্তুলের (Hoist) দিকে সামান্য অফ-সেন্টারে (Off-centre) সরানো হয়েছে। এই অবস্থানগত পরিবর্তনটি পতাকার সৌন্দর্য এবং গতিশীলতাকে ফুটিয়ে তোলে।
পতাকার মাপ (Flag Ratio): পতাকার মাপ (Flag Dimensions) বা এর দৈর্ঘ্য-প্রস্থের অনুপাত (Width-to-Length Ratio) হলো ৩:৫।
২. পতাকার প্রতীকী অর্থ (Symbolism of the Flag Colors)
জাতীয় পতাকার প্রতিটি রঙ এবং নকশার গভীর প্রতীকী অর্থ রয়েছে, যা দেশের ইতিহাস ও মূল্যবোধকে তুলে ধরে:
ক. সবুজ জমিন (The Green Field)
সরকারি ব্যাখ্যা: শুরুতে সবুজ রঙটিকে ইসলামিক বিশ্বাসের (Islamic Faith) প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হলেও, যেহেতু বাংলাদেশ একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র (Secular State), তাই এটিকে ভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়।
প্রতীকী অর্থ: সবুজ রঙটি হলো বাংলাদেশের সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং উর্বর উদ্ভিদকুল-এর (Rich Vegetation) প্রতীক। একইসাথে, এটি দেশের তারুণ্যের আশা (Hope of Youth) এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিনিধিত্ব করে।
আরও পড়ুন:
খ. কমলা-লাল বৃত্ত (The Orange-Red Disk)
ত্যাগ ও রক্ত: পতাকার কেন্দ্রে থাকা লাল বৃত্তটি সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতীক। এটি দেশের স্বাধীনতার জন্য বাঙালিদের আত্মত্যাগ (Sacrifice) ও সংগ্রাম চলাকালীন ঝরে যাওয়া রক্তের (Blood Shed) প্রতীক।
উদীয়মান সূর্য: লাল বৃত্তটি 'একটি নতুন দেশের উদীয়মান সূর্য-এর' (The Rising Sun of a New Country) প্রতীক, যা স্বাধীনতার মাধ্যমে অর্জিত নতুন জীবন, আশা এবং মুক্তির বার্তা বহন করে।
৩. পতাকার ইতিহাস: জন্ম ও বিবর্তন (History: Birth and Evolution)
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার ইতিহাস শুরু হয়েছিল স্বাধীনতা যুদ্ধের বহু আগেই, বাঙালি জাতীয়তাবাদের (Bengali Nationalism) উত্থানের সময়।
ক. প্রথম পতাকা (The First Flag, ১৯৭১)
নকশাকার: সিরাজুল আলম (Serajul Alam) নামে একজন ছাত্র নেতা প্রথম পতাকার নকশা করেন।
নকশা: সেই প্রথম পতাকার জমিন বর্তমান পতাকার মতোই সবুজ ছিল, তবে লাল বৃত্তের কেন্দ্রে পূর্ব পাকিস্তানের মানচিত্রের একটি সোনালী সিলুয়েট (Gold Silhouette Map of East Pakistan) ছিল।
প্রথম উত্তোলন: ১৯৭১ সালের ২ মার্চ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে অবস্থিত ঐতিহাসিক বটতলা (বর্তমানে যেখানে অপরাজেয় বাংলা ভাস্কর্য অবস্থিত)। তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহ-সভাপতি (ভিপি) এবং ছাত্রনেতা আ.স.ম. আব্দুর রব উত্তোলন করেন। এটি ছিল স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের ধারণার প্রথম প্রকাশ্য ঘোষণা। এই উত্তোলনের মাধ্যমে ছাত্র সমাজ এবং বাঙালি জাতি তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীকে স্পষ্ট বার্তা দেয় যে তারা আর পরাধীন থাকতে চায় না।
আরও পড়ুন:
খ. জাতীয় পতাকার সংশোধন (Modification of the National Flag, ১৯৭২)
১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে ভারতীয় বাহিনীর সহায়তায় স্বাধীনতার সংগ্রাম সফল হয় এবং ১৯৭২ সালের জানুয়ারিতে নতুন সরকার গঠিত হয়। এই সরকারই জাতীয় পতাকায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনে।
সংশোধনের তারিখ: ১৯৭২ সালের ১৩ জানুয়ারি (January 13, 1972) জাতীয় পতাকা সংশোধন করা হয়।
পরিবর্তন: মূল পরিবর্তনটি ছিল সোনালী মানচিত্রের সিলুয়েটটি বাদ দেওয়া (Elimination of the Silhouette Map)। এছাড়া, নান্দনিক কারণে লাল বৃত্তটিকে ঠিক কেন্দ্রের পরিবর্তে উত্তোলন দণ্ড বা মাস্তুলের দিকে সামান্য সরিয়ে অফ-সেন্টারে স্থাপন করা হয়।
কারণ: মানচিত্র বাদ দেওয়ার কারণ ছিল, পতাকা আঁকার ক্ষেত্রে মানচিত্রের সঠিক বিন্যাস রক্ষা করা কঠিন ছিল, যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারত।
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার মূল ডিজাইনার
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার মূল ডিজাইনার (The Principal Designer of the National Flag) হলেন কামরুল হাসান।
প্রাথমিক নকশা: যদিও ১৯৭১ সালের প্রথম দিকের পতাকার প্রাথমিক নকশাটি ছাত্রনেতা শিব নারায়ণ দাস-এর নেতৃত্বে একদল ছাত্র তৈরি করেছিলেন, যেখানে মানচিত্র যুক্ত ছিল।
চূড়ান্ত নকশা: পরবর্তীতে, ১৯৭২ সালের ১৩ জানুয়ারি যখন মানচিত্র বাদ দিয়ে পতাকা সংশোধন করা হয় এবং এর চূড়ান্ত মাপ ও রং নির্ধারণ করা হয়, তখন এই আনুষ্ঠানিক নকশাটি করেছিলেন প্রখ্যাত শিল্পী কামরুল হাসান।
আরও পড়ুন:
জাতীয় পতাকা তৈরির সঠিক নিয়মাবলী
জাতীয় পতাকা তৈরি ও ব্যবহারের জন্য নিম্নলিখিত মাপ, অনুপাত ও রঙের নিয়মগুলো কঠোরভাবে মেনে চলতে হয়:
১. রঙের নির্দিষ্টতা (Color Specification)
জাতীয় পতাকার দুটি রঙেরই নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা রয়েছে:
সবুজ (Green): পতাকার জমিনের সবুজ রঙ হতে হবে গাঢ় নীলচে সবুজ (Dark Bluish-Green/Field Green)। এটি বাংলাদেশের সবুজ প্রকৃতি ও তারুণ্যের প্রতীক।
লাল বৃত্ত (Red Disk): কেন্দ্রে ব্যবহৃত লাল রঙ হতে হবে কমলা-লাল (Orange-Red/Red Oxide)। এটি সূর্যোদয় এবং স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মত্যাগের প্রতীক।
২. পতাকার মাপের অনুপাত (Ratio and Dimensions)
জাতীয় পতাকার দৈর্ঘ্য (Length) ও প্রস্থের (Width) অনুপাত সব সময় ১০:৬ বা ৫:৩ হতে হবে। ব্যবহারের স্থান অনুযায়ী পতাকার জন্য কয়েকটি নির্দিষ্ট আদর্শ মাপ রয়েছে:
ব্যবহারের ক্ষেত্র পতাকার মাপ (দৈর্ঘ্য x প্রস্থ) ভবনে ব্যবহারের জন্য ১০ ফুট x ৬ ফুট উপযোগী মাপ ৫ ফুট x ৩ ফুট অন্য মাপ ২.৫ ফুট x ১.৫ ফুট গাড়িতে ব্যবহারের জন্য ১০ ইঞ্চি x ৬ ইঞ্চি টেবিলে ব্যবহারের জন্য ৪ ইঞ্চি x ২.৫ ইঞ্চি
৩. লাল বৃত্তের মাপ ও অবস্থান (Red Disk Size and Placement)
পতাকার নকশার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো লাল বৃত্তের মাপ ও অবস্থান।
বর্ণনা বর্ণনা বিষয়ক তথ্য মাপদণ্ডবর্ণনাবৃত্তের ব্যাসার্ধ (Radius of Disk) পতাকার প্রস্থের পাঁচ ভাগের এক ভাগ (১/৫)। অর্থাৎ, পতাকার প্রস্থ যদি ৬ ফুট হয়, তবে ব্যাসার্ধ হবে ৬/৫ = ১.২ ফুট। বৃত্তের কেন্দ্রবিন্দু (Center Point) বৃত্তের কেন্দ্রবিন্দু পতাকার ঠিক কেন্দ্রে নয়, বরং দৈর্ঘ্যের ২০ ভাগের ৯ ভাগ এবং প্রস্থের ঠিক মাঝখানে অবস্থিত হবে। অফ-সেন্টার কারণ লাল বৃত্তটি মাস্তুলের (Hoist) দিকে সামান্য সরিয়ে রাখা হয়, যাতে পতাকা যখন উড়বে, তখন এটি দৃষ্টিগতভাবে মাঝখানে দেখায়।
আরও পড়ুন:
৪. কাপড়ের মান (Material Quality)
সরকারিভাবে সাধারণত দুটি ধরনের কাপড় ব্যবহারের কথা বলা হয়:
সরকারি ভবন ও কার্যালয়: টেকসই ও ভালো মানের পলি-কটন বা তা জাতীয় মিশ্রিত কাপড় (Poly-cotton or similar durable fabric)।
সাধারণ ব্যবহার: রেশমি কাপড় (Silk), সুতি কাপড় (Cotton), বা অন্যান্য উন্নতমানের কাপড়।
জাতীয় পতাকা তৈরির সময় এই নিয়মাবলীগুলো যথাযথভাবে অনুসরণ করা আবশ্যক, যাতে এর সম্মান ও মর্যাদা অক্ষুণ্ন থাকে।
কেন সরিয়ে ফেলা হলো বাংলাদেশের মানচিত্র, জাতীয় পতাকা থেকে
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা থেকে মানচিত্র সরিয়ে ফেলার পেছনে প্রধানত দুটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল: নকশা (Design) এবং আন্তর্জাতিক মান (International Standard)। ১৯৭২ সালের ১৩ জানুয়ারি যখন পতাকা সংশোধন করা হয়, তখন এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
১. নকশার জটিলতা (Design Complexity and Difficulty)
প্রথম পতাকার (যা ১৯৭১ সালের ২ মার্চ উত্তোলন করা হয়েছিল) লাল বৃত্তের কেন্দ্রে হলুদ রঙের মানচিত্রের সিলুয়েট (Silhouette) ছিল। এই নকশাটি হাতে বা সহজে চিত্রাঙ্কন করার জন্য অত্যন্ত জটিল ছিল। দ্রুত সময়ে বা সাধারণ মানুষের পক্ষে পতাকায় মানচিত্রের সঠিক অনুপাত ও জ্যামিতিক বিন্যাস বজায় রেখে আঁকা কঠিন ছিল। ভুলভাবে আঁকা মানচিত্র আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের সঠিক ভৌগোলিক পরিচয়কে ভুলভাবে উপস্থাপন করতে পারত, যা দেশের ভাবমূর্তির জন্য অবাঞ্ছিত ছিল।
২. আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও মানদণ্ড (International Recognition and Standards)
বিশ্বের প্রায় সব দেশের জাতীয় পতাকাই সহজ ও সরল নকশার হয়, যাতে তা দূর থেকে সহজে চেনা যায় এবং এর প্রতীকী অর্থ পরিষ্কার থাকে। পতাকা হলো একটি দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক। এটিকে যতটা সম্ভব সরল ও স্পষ্ট রাখা প্রয়োজন, যাতে তা দ্রুত চিহ্নিত করা যায়। অনেক দেশই তাদের মানচিত্রকে পতাকার নকশার অন্তর্ভুক্ত করে না (মানচিত্র সাধারণত কোট অফ আর্মস বা সীলমোহরে ব্যবহৃত হয়)। পতাকাকে মানচিত্রের উপর নির্ভরশীলতা থেকে মুক্ত করার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আরও পড়ুন:
পতাকার সার্বক্ষণিক উত্তোলন (সকল কর্মদিবসে)
নিম্নলিখিত গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবন ও অফিসসমূহে সকল কর্মদিবসে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করতে হয়:
- রাষ্ট্রপতির বাসভবন, সংসদ ভবন।
- সকল মন্ত্রণালয় এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সচিবালয় ভবনসমূহ।
- হাইকোর্টের অফিসসমূহ, জেলা ও দায়রা জজ আদালতসমূহ।
- বিভাগীয় কমিশনার, ডেপুটি কমিশনার/কালেক্টর, চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদের অফিসসমূহ।
- কেন্দ্রীয় এবং জেলা কারাগারসমূহ, পুলিশ স্টেশন, শুল্ক পোস্টসমূহ।
- প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকার কর্তৃক নির্ধারিত অন্যান্য ভবন।
নির্দিষ্ট দিবসে উত্তোলন
নিম্নলিখিত দিবস এবং উপলক্ষে বাংলাদেশের সর্বত্র সরকারী ও বেসরকারী ভবনসমূহে এবং বিদেশে অবস্থিত কূটনৈতিক মিশনসমূহে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করতে হয়:
- মহানবীর জন্ম দিবস (ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী)
- ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস
- ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস
- সরকার কর্তৃক প্রজ্ঞাপিত অন্য যে কোনো দিবস
আরও পড়ুন:
অর্ধনমিত রাখা (Half-Mast)
নিম্নলিখিত দিবসসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত (Half-mast) থাকে:
- ২১শে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস (আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস)
- ১৫ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস
- সরকার কর্তৃক প্রজ্ঞাপিত অন্য যে কোনো দিবস
- অর্ধনমিত রাখার নিয়ম: পতাকা অর্ধনমিত হবে খুঁটির ওপর থেকে পতাকার প্রস্থের সমান নিচে।
অফিসিয়াল বাসভবনে পতাকা উত্তোলনের অধিকার
নিম্নলিখিত ব্যক্তিবর্গ তাদের অফিসিয়াল বাসভবনে পতাকা উত্তোলন করতে পারেন:
- রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পীকার, বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি।
- মন্ত্রীবর্গ, চীফ হুইপ, জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পীকার, জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা।
- মন্ত্রীর/প্রতিমন্ত্রীর/উপমন্ত্রীর পদমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিবর্গ।
- বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ কূটনৈতিক/কনস্যুলার/মিশনসমূহের প্রধানগণ।
- রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবান জেলার স্থানীয় সরকার পরিষদের চেয়ারম্যানগণ।
আরও পড়ুন:
মোটরগাড়ী ও জলযানে পতাকা উত্তোলনের অধিকার
নিম্নলিখিত ব্যক্তিবর্গ তাদের মোটর গাড়ী ও জলযানে 'বাংলাদেশের পতাকা' উত্তোলন করার অধিকারী হন:
- জাতীয় সংসদের স্পীকার, বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি।
- মন্ত্রীবর্গ, চীফ হুইপ, জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পীকার, জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা।
- মন্ত্রীর পদমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিবর্গ।
- বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ কূটনৈতিক/কনস্যুলার/ মিশনসমূহের প্রধানগণ।
- রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী তাদের মোটরযান, জলযান এবং উড়োজাহাজে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করতে পারেন।
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা (National Flag) হলো বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো একটি জাতির সাহস, সংগ্রাম ও আত্মমর্যাদার দলিল। পতাকার রং এবং এর বিন্যাস—সবুজ প্রকৃতি ও তারুণ্যের আশা, আর লাল হলো মুক্তির জন্য দেওয়া রক্তের স্মৃতি—এই সবকিছুই বাংলাদেশের পতাকার প্রতীকী অর্থকে (Flag Symbolism) বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ করে তোলে। এই পতাকা প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে স্বাধীনতা ও জাতীয়তাবাদের চেতনাকে চিরন্তন করে রাখে।
আরও পড়ুন:
অনেক দেশের জাতীয় পতাকা প্রায় একই রকমের হয় কেন?
অনেক দেশের জাতীয় পতাকা প্রায় একই রকম হওয়ার পেছনে বেশ কিছু ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক, ভৌগোলিক এবং রাজনৈতিক কারণ রয়েছে। এটি সাধারণত কয়েকটি প্রধান প্রবণতার কারণে ঘটে:
১. ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক (Historical and Cultural Ties)
উপনিবেশিক উত্তরাধিকার (Colonial Heritage): অনেক প্রাক্তন উপনিবেশিক দেশ তাদের স্বাধীনতা লাভের পর তাদের প্রাক্তন ঔপনিবেশিক শক্তির পতাকার রঙের বিন্যাস (Color Scheme) বা নির্দিষ্ট প্রতীকগুলো (Symbols) গ্রহণ করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ব্রিটিশ কলোনিগুলোতে প্রায়শই ইউনিয়ন জ্যাকের নকশা বা তার কাছাকাছি কিছু দেখতে পাওয়া যেত।
আঞ্চলিক জোট/আদর্শ (Regional Blocs/Ideologies):
প্যান-আফ্রিকান রঙ (Pan-African Colors): আফ্রিকার অনেক দেশের পতাকায় সবুজ, হলুদ (বা সোনালী) এবং লাল এই তিনটি রঙ দেখতে পাওয়া যায় (যেমন: ঘানা, ক্যামেরুন, ইথিওপিয়া, মালি)। এই রঙগুলো ইথিওপিয়ার পতাকার মাধ্যমে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছিল এবং এটি আফ্রিকান ঐক্য ও পরিচয়ের প্রতীক।
প্যান-আরব রঙ (Pan-Arab Colors): মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশের পতাকায় লাল, কালো, সাদা এবং সবুজ রঙ ব্যবহার করা হয় (যেমন: মিশর, জর্ডান, সংযুক্ত আরব আমিরাত)। এই রঙগুলো আরব বিদ্রোহের (Arab Revolt) পতাকা থেকে এসেছে এবং এটি আরব ঐক্য ও স্বাধীনতার প্রতীক।
প্যান-স্লাভিক রঙ (Pan-Slavic Colors): পূর্ব ইউরোপের কিছু দেশের পতাকায় সাদা, নীল এবং লাল রঙ ব্যবহৃত হয় (যেমন: রাশিয়া, সার্বিয়া, স্লোভাকিয়া)। এই রঙগুলো ১৯ শতকে স্লাভিক জাতীয়তাবাদ এবং ঐক্যের প্রতীক হিসেবে রাশিয়া থেকে উদ্ভূত হয়েছিল।
২. পতাকার সাধারণ নকশা (Common Flag Designs)
পতাকা ডিজাইনে কিছু জনপ্রিয় বিন্যাস রয়েছে যা অসংখ্য দেশ ব্যবহার করে:
তিরঙ্গা বা ট্রাইকালার (Tricolor): তিনটি অনুভূমিক বা উল্লম্ব ব্যান্ড (Horizontal or Vertical Bands) দ্বারা গঠিত পতাকা খুবই জনপ্রিয়। এটি নকশাগত দিক থেকে সহজ, দ্রুত তৈরিযোগ্য এবং সুপরিচিত।
ক্রস ও তারা প্রতীক (Crosses and Star Motifs): অনেক দেশের পতাকায় খ্রিস্টান ঐতিহ্যের ক্রস (যেমন: নর্ডিক দেশগুলো) বা যুক্তরাষ্ট্রের পতাকার মতো তারা প্রতীক ব্যবহার করা হয়, যা সহজে অনুকরণ করা যায়।
৩. নকশার সীমাবদ্ধতা (Design Constraints)
পতাকা তৈরির মৌলিক উদ্দেশ্য হলো দূর থেকে সহজে চেনা এবং প্রতীকী অর্থ বহন করা। এই কারণে, পতাকার ডিজাইনাররা সাধারণত:
কম রঙ ব্যবহার করেন: বেশিরভাগ পতাকা দুই থেকে চারটি মৌলিক রঙ ব্যবহার করে, যা রঙের সংমিশ্রণকে সীমিত করে।
সরল জ্যামিতিক আকার: ত্রিভুজ, বর্গক্ষেত্র বা বৃত্তের মতো সরল আকার ব্যবহার করা হয়।
৪. ঘটনাগত সাদৃশ্য (Coincidental Similarity)
কখনও কখনও, কোনো ঐতিহাসিক সংযোগ বা প্রভাব ছাড়াই কয়েকটি দেশ একই রঙের বিন্যাস বা নকশা গ্রহণ করতে পারে, এটি কেবল ঘটনাচক্র বা নকশার সরলতার কারণে হয়।
সংক্ষেপে, জাতীয় পতাকার সাদৃশ্য মূলত ঐতিহাসিক জোট, সাংস্কৃতিক আন্দোলন, নকশার সহজতা, এবং সীমিত রঙের ব্যবহার—এই কারণগুলোর সম্মিলিত ফল।





