ঢাকার কাছে একই স্থানে বারবার ছোট ছোট ভূমিকম্প, কীসের ইঙ্গিত?

কেন ছোট ছোট ভূমিকম্পে বারবার কাঁপছে বাংলাদেশ?
কেন ছোট ছোট ভূমিকম্পে বারবার কাঁপছে বাংলাদেশ? | ছবি: এখন টিভি
2

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অতি সম্প্রতি কয়েকবার ভূকম্পন অনুভূত হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ভূমিকম্প আতঙ্ক (Earthquake panic) চরম আকার ধারণ করেছে। একটির পর একটি ঝাঁকুনি অনেককেই ঘর ছাড়তে বাধ্য করছে। এই ঘন ঘন কম্পন সাধারণ মানুষের মনে জন্ম দিয়েছে একাধিক জরুরি প্রশ্ন, যার উত্তর খুঁজতে দ্বারস্থ হচ্ছেন তারা বিশেষজ্ঞ ও সংবাদমাধ্যমের। অনেকেরই প্রশ্ন—আমরা কি কোনো বড় দুর্যোগের দিকে এগোচ্ছি? নাকি ভূমিকম্পের পূর্বাভাস (Earthquake prediction) পাওয়ার কোনো সুযোগ আছে? ঢাকায় ঘন ঘন ভূমিকম্প, কীসের ইঙ্গিত?

বারবার কম্পন অনুভূত হওয়ার পর জনগণের মধ্যে প্রধান উদ্বেগ হলো, এই ছোট ছোট ঝাঁকুনিগুলো কি কোনো বড় ভূমিকম্পের সিগন্যাল (Signal for Major Earthquake) দিচ্ছে? নাকি এগুলো অপেক্ষাকৃত ছোট ও সাধারণ ঘটনা?

আরও পড়ুন:

কেন বারবার কাঁপছে দেশ: কারণ কী আফটারশক (What is Aftershock)?

সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্নও তৈরি হয়েছে:

  • ভূমিকম্পের কারণ কী (Cause of Earthquake)?
  • কেন বারবার কম্পন হচ্ছে (Why frequent earthquakes)?

বিশেষজ্ঞদের মতে, সাম্প্রতিক কম্পনগুলো কি কেবলই সাধারণ আফটারশক (General Aftershock)? নাকি বাংলাদেশের ভূতাত্ত্বিক গঠন বা ডাউকি ফল্টের (Dauki Fault) সক্রিয়তা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এই কম্পনগুলো অনুভূত হচ্ছে—তা নিয়ে দ্রুত সরকারিভাবে ব্যাখ্যা দেওয়া জরুরি। কারণ বাংলাদেশ ভূমিকম্প ঝুঁকি (Bangladesh earthquake risk) অঞ্চলের মধ্যেই রয়েছে।

আরও পড়ুন:

ছোট ভূমিকম্প আভাস দিচ্ছে বড় ভূমিকম্পের! |ছবি: এখন টিভি

মাত্র দুদিনে ফের কম্পন: আফটারশক (Aftershock) নাকি বড় ভূমিকম্পের সংকেত?

মাত্র দুদিনের ব্যবধানে ফের ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল দেশ। বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভোর ৬টা ১৪ মিনিট ৪৪ সেকেন্ডে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এ কম্পন অনুভূত হয়। সর্বশেষ এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ১, যার উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর শিবপুর (Narsingdi Shibpur)। ঘন ঘন এই কম্পনগুলো জনগণের মধ্যে বাড়িয়েছে ভূমিকম্প আতঙ্ক (Earthquake Panic) এবং বড় দুর্যোগের শঙ্কা।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রুবাইয়াত কবির জানান, ২১ নভেম্বরের শক্তিশালী ভূমিকম্পের পরপরই ছোট ছোট মৃদু কম্পনগুলো ঘটছে, যা সাধারণত আফটারশক হিসেবে (As Aftershock) দেখা যায়।

তিনি বলেন, "এখন পর্যন্ত আমরা এসব কম্পনকে আফটারশক হিসেবে গণ্য করছি। তবে আমাদের গবেষণা বলছে, ভবিষ্যতে এ ধরনের আরও ভূমিকম্প হতে পারে।"

আরও পড়ুন:


মাত্র ১৪ দিনে একই স্থানে বাংলাদেশে ৬টি ভূমিকম্প: এক নজরে তালিকা

তারিখসময়মাত্রা (Magnitude)উৎপত্তিস্থল (Epicenter)
২১ নভেম্বরসকাল ১০টা ৩৮ মি.৫.৭নরসিংদীর মাধবদী
২২ নভেম্বরসকাল ১০টা ৩৬ মি.৩.৩নরসিংদী
২২ নভেম্বরসন্ধ্যা ৬টা ৪ মি.৪.৩নরসিংদী (১১ কিমি পশ্চিম)
২২ নভেম্বরসন্ধ্যা ৬টা ৬ মি.৩.৭নরসিংদী
২৭ নভেম্বরবিকেল ৪টা ১৫ মি.৩.৬নরসিংদীর ঘোড়াশাল
৪ ডিসেম্বরভোর ৬টা ১৪ মি.৪.১নরসিংদীর শিবপুর

এই ধরণের ভূমিকম্পের পুনরাবৃত্তি বিশেষজ্ঞদের মতে একটি বড় ভূমিকম্পের পূর্বাভাস হতে পারে। বাংলাদেশের ভূতাত্ত্বিক অবস্থা ও সক্রিয় প্লেট সীমান্তের কারণে যে কোনো সময় বড় ধরনের ভূমিকম্প হতে পারে।


একই স্থানে বারবার ভূমিকম্প ভূতাত্ত্বিক সতর্কতা: সক্রিয় প্লেট সীমান্তে বাংলাদেশ

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বারবার ভূমিকম্প কেন হচ্ছে (Why frequent earthquakes)—এই প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আছে দেশের ভূতাত্ত্বিক অবস্থা (Geological Condition) এবং সক্রিয় প্লেট সীমান্তে (Active Plate Boundary)। সাম্প্রতিক কম্পনগুলোর পুনরাবৃত্তি বিশেষজ্ঞদের মতে একটি বড় ভূমিকম্পের পূর্বাভাস হতে পারে।


দেশের ভূমিকম্পের দুই প্রধান উৎস চিহ্নিত: ডাউকি ফল্ট (Dauki Fault) ও সুমাত্রা প্লেট সীমান্ত (Plate Boundary)

ডাউকি ফল্ট: এই ফল্ট রেখাটি ময়মনসিংহ থেকে জামালগঞ্জ (Mymensingh to Jamalganj) হয়ে সিলেট অঞ্চলে বিস্তৃত। এটির আনুমানিক দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার (350 KM Long Fault)। ডাউকি ফল্ট সক্রিয় হলে ঢাকা এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহ ভূমিকম্প ঝুঁকি (Mymensingh Earthquake Risk) অঞ্চলের জন্য মারাত্মক পরিণতি নিয়ে আসতে পারে।

সিলেট থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত প্লেট সীমান্ত: এই প্লেট সীমান্ত (Plate Boundary) রেখাটি সিলেট থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত (Sylhet to Chattogram Plate Boundary) বিস্তৃত। এটি দক্ষিণে ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা পর্যন্ত বিস্তৃত (Extends to Sumatra)। বিশেষজ্ঞরা এটিকে দেশের জন্য খুব ভয়ংকর (Extremely Dangerous Fault) বলে মনে করেন, কারণ এর সক্রিয়তা পুরো অঞ্চলের ভূতাত্ত্বিক মানচিত্র (Geological Map) বদলে দিতে পারে।

বাংলাদেশের অবস্থান হিমালয়ের পাদদেশে এবং সক্রিয় প্লেট সীমান্তে হওয়ায় ভূমিকম্প ঝুঁকি (Bangladesh Seismic Risk) অনেক বেশি। বিশেষ করে ডাউকি ফল্ট (Dauki Fault)-এর মতো ঝুঁকিপূর্ণ চ্যুতিগুলো যেকোনো সময় বড় মাত্রার ভূমিকম্পের কারণ হতে পারে।

ঢাকা নিজেই ভূমিকম্প ঝুঁকি (Dhaka Earthquake Risk) প্রবণ এলাকায় অবস্থিত। এর ওপর অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং পুরনো দুর্বল কাঠামোর কারণে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকিতে রয়েছে মহানগরীর বেশ কিছু এলাকা। গবেষণা অনুযায়ী, ভূমিকম্পে ভয়াবহ ক্ষতির ঝুঁকিতে থাকা ১৫টি এলাকা (Earthquake Vulnerable Areas) চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। চরম ঝুঁকিতে থাকা ঢাকার ১৫টি এলাকা হলো-সবুজবাগ (Shobujbagh), কামরাঙ্গীরচর (Kamrangirchar), হাজারীবাগ (Hazaribagh), কাফরুল (Kafrul), ইব্রাহিমপুর (Ibrahimpur), কল্যাণপুর (Kallyanpur), গাবতলী (Gabtoli), উত্তরা (Uttara), সূত্রাপুর (Sutrapur), শ্যামপুর (Shyampur), মানিকদী (Manikdi), মোহাম্মদপুর (Mohammadpur), পল্লবী (Pallabi), খিলগাঁও (Khilgaon), বাড্ডা (Badda)।

ঢাকায় ভূমিকম্পের প্রভাব কেন এত ভয়াবহ?

ভূমিকম্পের উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ সিসমিক জোনে (Seismic Zone) অবস্থিত হলেও, ঢাকায় ভূমিকম্পের প্রভাব কেন বেশি হয় (Why Dhaka Earthquake Impact is High)—এর মূল কারণ তিনটি  (দুর্বল অবকাঠামো, নরম মাটি, এবং অতিরিক্ত জনবল)। এই তিনটি কারণে ঢাকায় ভূমিকম্পের প্রভাব (Dhaka Earthquake Impact) সবচেয়ে বেশি ও ঝুঁকিতে। তাই বিশেষজ্ঞদের মতে, দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি জোরদার করা এবং চিহ্নিত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় দ্রুত কাঠামোগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন জরুরি। সামান্য কম্পনেই পুরনো বা ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো ধসে পড়তে পারে।

আরও পড়ুন:

এসআর