এদিকে শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে টাঙ্গাইলসহ সারাদেশেই ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে। আজ (শনিবার, ২২ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৩৬ মিনিটেও বাইপাইলে ৩ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে। দুটির উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদী। যেটি মধুপুর ফল্টের ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে। এতে সারাদেশে অন্তত ১১জন নিহত ও কয়েক হাজার মানুষ আহত হয়েছে। সব মিলিয়ে টাঙ্গাইলসহ সারাদেশের মানুষের মধ্যে এখনও আতঙ্ক কাটেনি।
২০২৪ এর জুনে রাজউকের এক গবেষণায় দেখা গেছে, মধুপুর ফল্টে ৬ দশমিক ৯ তীব্রতার ভূকম্পনে ঢাকার ৮ লাখ ৬৪ হাজার ৬১৯টি থেকে ১৩ লাখ ৯১ হাজার ৬৮৫টি ভবন ধসে বা ভেঙে পড়তে পারে, যা মোট ভবনের ৪০ দশমিক ২৮ থেকে ৬৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ। ঢাকায় ভবন ধসের আশঙ্কার এ সর্বনিম্ন ও সর্বাধিক শতাংশের গড় করলে দাঁড়ায় ৫২ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
২০১২ সালে এক ভূমিকম্পে মধুপুরের অরণখোলা ইউনিয়নের বোকারবাইদ গ্রামে ভূমিকম্পে এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ফাটল দেখা দিয়েছিলো। যার ব্যাস ছিলে ৫/৬ ইঞ্চি ও গভীরতা ছিল ২৫ থেকে ২৬ ফুট। সে সময় থেকেই মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
মধুপুর এলাকার ব্যবসায়ী গোলাম ফারুক বলেন, ‘শনিবার বেলা সাড়ে ১০ টার পর যখন ভূমিকম্প হয়, তখন পরিবার নিয়ে বাড়িতে ছিলাম। আমাদের টিনের ঘর অনেক কেঁপেছে। চোখে যা দেখেছি, সেই আতঙ্ক এখনও আমার কাটেনি।’
আরও পড়ুন:
টাঙ্গাইল ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক মো. জানে আলম বলেন, ‘ভূমিকম্পে কিছু ক্ষতি চোখে দেয়া যায় আবার কিছু ক্ষতি চোখে দেখা যায় না। শনিবারে যে ভূমিকম্প হয়েছে এ মাপের ভূমিকম্প আবার হলে কয়েক গুণ বেশি ক্ষতি হবে। কারণ অনেক ভবন দুর্বল হয়েছে। যা চোখের দৃষ্টিতে দেখা যাচ্ছে না। এটি সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।’
তিনি আরও বলেন, ‘মধুপুর, ধনবাড়ী, ঘাটাইল, সখীপুরসহ আশে পাশের ফায়ার সার্ভিস অফিসে সবচেয়ে বেশি দক্ষ ও কর্মঠ কর্মীদের পদায়ন করা আছে।’
টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এএসএম সাইফুল্লাহ বলেন, ‘মধুপুরের ফল্টটি অনেক পুরনো। প্রায় একশ বছর হয়েছে, এখানে বড় ধরনের কোনো ভূমিকম্প হয়নি। আমাদের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে ছোট ছোট ভূমিকম্পের পরই বড় ধরনের ভূমিকম্পের বার্তা দেয়। যে কারণে মধুপুর ফল্টের আওতাধীন এলাকা গুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ বলা হয়। এর প্রভাব পড়তে পারে চারদিকে ১০০ কিলোমিটার এলাকা। এর আগে ভূমিকম্প হয়ে মধুপুরে বড় ফাঁটল হয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের নগরায়নে যে বহুতল ভবন করা হয়, সেখানে বিল্ডিং কোড মানা হয়ই না। টাঙ্গাইল শহরেও না, ঢাকার শহরেও না। বহুতল ভবনের উচ্চতা অনুযায়ী চারপাশে জায়গা রাখার কথা, সেগুলোও মানা হয় না। টাঙ্গাইলের ভবন গুলোর ক্ষেত্রেও সমীক্ষা ছাড়াই প্ল্যান পাশ করে দেয়া হয়। যে প্ল্যান পাশ হয়, তার চেয়ে আরও উচু ভবন তৈরি হচ্ছে। যে কোনো দুর্যোগে বিপদগ্রস্ত মানুষ গুলোকে উদ্ধার করা যাবে না। কারণ তাদের উদ্ধার করতে যে জায়গা প্রয়োজন, সেই জায়গা রাখা হয়নি। রাস্তা গুলোও খুব সংকুচিত। তাই দুর্যোগ হলে মানুষ আটকা পড়ে প্রাণহানি ঘটবে, জীবননাশের শঙ্কা থাকবে।’
আরও পড়ুন:
তিনি আরও বলেন, ‘একবার ভূমিকম্প হলে অনেক আলোচনা হয়। পরে তা কার্যকর হয় না। ভূমিকম্পের হতাহতের ঘটনা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ওপর থেকে রেলিং ভেঙে পড়ে মানুষ মারা গেছে। কারণ রেলিং নিয়ম অনুযায়ী তৈরি করা ছিল না। আবার কেউ দেয়াল ভেঙে মারা গেছে। এমন তো হওয়ার কথা না। বড় ধরণের কোনো ভবন ধ্বসে গেলে কি হবে, সেটা এখান থেকে বোঝা যাচ্ছে। চিলিতে ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে মাত্র ৫ হাজার মানুষ মারা গেছে। কারণ সেখানে বিল্ডিং কোড মানা হয়। প্রতিটি বিল্ডিং এর পাশে অতিরিক্ত জায়গা থাকার কথা। কিন্তু আমাদের দেশে এক বিল্ডিং এর সঙ্গে আরেক বিল্ডিং লাগানো। মানুষ বিল্ডিং থেকে বের হয়ে যাবে কোথায়। বাধ্য হয়ে ওই লোকটি ভবনের নিচে পড়ে মারা যাবে। এসব বিষয়ে মানুষকেও সচেতন করা হয় না ও গুরুত্ব দেয়া হয় না। আবার এ বিষয়ে পড়াশোনা নেই বললেই চলে।’





