আজ (শনিবার, ১৫ নভেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মধুর ক্যান্টিনের সামনে ইসরাফিল ফরাজীর পরিচালনায় জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের পর তিনটি কাজের জন্য এ সরকারকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। তাদের কাজ ছিল গণহত্যার বিচার, দেশ সংস্কার এবং একটি সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন। কিন্তু সরকার এ ৩টি কাজ ছাড়া সব কিছুই করেছে। সবশেষ জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়েও দেশকে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’
মুসাদ্দেক বলেন, ‘এ সরকার চাঁদাবাজদের নিরাপত্তা দিচ্ছে। প্রশাসনে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন করা হয়েছে। এসব কিছুই হচ্ছে কয়েকজন উপদেষ্টাদের কারণে। বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি থেকে একে অপরকে দোষারোপ করছে। ড. ইউনূসের কাছে তালিকা দিয়ে আসছে। অথচ রাষ্ট্রের মালিক দেশের জনগণের কাছে পরিষ্কার করছে না। অবিলম্বে সব জুলাইয়ের গাদ্দারদের নাম প্রকাশ করতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জুলাই ঐক্যের সংগঠক ও ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক এবি জুবায়ের বলেন, ‘জুলাই বিপ্লব পরবর্তী প্রায় দেড় বছর অতিক্রান্ত হচ্ছে। বৈষম্যহীন, সাম্য ও ন্যায়ভিত্তিক নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে এ বিপ্লব সংগঠিত হলেও রাজনৈতিক দলগুলোর স্বার্থান্বেষী চিন্তা ও ভোগবাদী মানসিকতার ফ্যাসিবাদী আচরণ ক্রমেই বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষাকে দুর্বল করে তুলছে। দীর্ঘদিন পার হলেও জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়ার কাজ দোদুল্যমান ছিল। সম্প্রতি জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য গণভোটের তারিখ ঘোষণা করেছেন প্রধান উপদেষ্টা, যা প্রশংসনীয়। কিন্তু আমাদের জন্য অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশে স্বাক্ষর করেছেন ফ্যাসিবাদের সহযোগী রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন চুপ্পু।’
আরও পড়ুন:
তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর অনৈক্য ও পরস্পরের রেষারেষি আমাদেরকে এ কলঙ্কের মুখোমুখি করেছে। যারা জুলাই সনদ চায়নি, বারবার এই সনদ বাস্তবায়নের কার্যক্রমকে নানান জটিলতা দেখিয়ে বাধাগ্রস্ত করতে চেয়েছে তাদেরকে ইতিহাসের কাছে এই কলঙ্কের দায় মেটাতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে জুলাই সনদের গণভোট আয়োজনের জন্য আমরা বারবার দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু সরকার কিছু রাজনৈতিক দলের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে জাতীয় নির্বাচনের দিনই গণভোটের আয়োজন করছে। কিন্তু এই গণভোট আয়োজনের প্রক্রিয়া নিয়ে জাতির সামনে ধোঁয়াশা রয়ে গেছে। কোন প্রক্রিয়াতে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে তা এখনো জানানো হয়নি। বিশেষ করে রাজনৈতিক সহিংসতায় কোনো কেন্দ্রের ভোট স্থগিত হলে সে কেন্দ্রের গণভোটের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত কি হবে তা বিশাল প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অস্পষ্টতা আগামী নির্বাচনকে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত দ্রুতই জনমনের এই বিভ্রান্তি দূর করা।’
জুবায়ের বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবের দেড় বছর অতিক্রান্ত হলেও গণহত্যাকারী সংগঠন আওয়ামী লীগের বিচার প্রক্রিয়া ধীরগতিতে চলছে। শতশত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জামিন দেয়া হচ্ছে যা জুলাইয়ের রক্তের সঙ্গে বেইমানি। এতকিছুর পরেও খুনি শেখ হাসিনার একটি মামলার রায়ের দিনক্ষণ ঘোষণা হয়েছে, যা আমাদের জন্য স্বস্তির। একই সঙ্গে আমরা দাবি জানাই, জুলাই বিপ্লবসহ গত ১৭ বছরে করা আওয়ামী লীগের গুম, খুন ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের দ্রুত বিচার সম্পন্ন করতে হবে। বিচার শেষে আওয়ামী লীগকে চিরতরে নিষিদ্ধ করতে হবে। পাশাপাশি যে সব কাঠামো ও কালচারাল ফ্যাসিস্টরা এখনো আওয়ামী বয়ানে ন্যারেটিভ তৈরির চেষ্টা করছে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের ব্যাপক অভিযোগ উঠছে। জনসাধারণের স্বার্থকে প্রাধান্য না দিয়ে অনেক উপদেষ্টা বিভিন্ন দলের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নকেই নিজেদের প্রধান কাজ মনে করছেন। গণমাধ্যমের সূত্রমতে, বিএনপি ও জামায়াত এমন কিছু উপদেষ্টাদের ব্যাপারে সরকারের কাছে তালিকা দিয়েছেন। আমরা প্রত্যাশা করবো সেসকল উপদেষ্টাদের নাম ও কাজের বিবরণী জনসাধারণের সামনে উন্মুক্ত করা হোক।’
তাছাড়া কিছু উপদেষ্টা আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন বলে গণমাধ্যমে প্রচার হচ্ছে। উপদেষ্টারা নির্বাচন করলে এখনই দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করা উচিত। রাষ্ট্রীয় সুবিধা ব্যবহার করে নিজের নির্বাচনের মাঠ প্রস্তুত করার সুযোগ কোনো উপদেষ্টাকে দেয়া হয়নি বলেও জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করেন মুসাদ্দেক। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, আগামী ১৭ নভেম্বর আওয়ামী লীগের অগ্নিসন্ত্রাস রুখতে সারাদেশে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থান কর্মসূচি। একই দিন শাহবাগে জনতার আদালতে খুনি হাসিনার প্রতীকী ফাঁসি ও ফ্যাসিবাদের দোসরদের প্রতীকী গণ পাথর নিক্ষেপ।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, জুলাই ঐক্যের সংগঠক ও মঞ্চ ২৪- আহ্বায়ক, ফাহিম ফারুকী, জাগ্রত জুলাইয়ের সভাপতি জুলাই ঐক্যের সংগঠক, কবি বোরহান মাহমুদ ও শিল্প উদ্যানের আহ্বায়ক, মইন মুন্তাসিরসহ ঐক্যের নেতাকর্মীরা।





