ছুটির ঘণ্টা বাজতেই দুর্গন্ধ আর ময়লা জলে নিমজ্জিত এই পথেই বাড়ি ফেরার তাড়া শিক্ষার্থীদের। সাবধানী পা, পিছলে গেলেই বিপত্তি। এমন দৃশ্য খোদ রাজধানীর জুরাইনে। সিটি করপোরেশনের ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার গলির এই স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির অন্ত নেই।
কি গ্রীষ্ম, কি বর্ষা? স্কুলের সামনে ময়লা পানি জমে থাকে দিনের পর দিন। ভোগান্তিকে সঙ্গী করেই স্কুলে আসা যাওয়া তাদের। যার ফলে চর্মরোগসহ নানা অসুখে পড়তে হয় শিক্ষার্থীদের।
এক শিক্ষার্থী জানান, বৃষ্টি হলেই গলিতে পানি জমে যায়। আর গলি এতটাই পিচ্ছিল হয়ে যায় হাটা চলা করা যায় না, অনেক সমস্যা হয়। আরেক শিক্ষার্থী জানান, নিয়মিত আসি, আর তো কিছু করার নেই। কষ্ট হলেও আসতে হয়। কিন্তু বৃষ্টি হলে আর আসা সম্ভব হয় না।
এক শিক্ষক জানান, এমন পথ দিয়ে চলাচলের ক্ষেত্রে জীবনের ঝুঁকি যেমন আছে তেমন অসুস্থতার লক্ষণও বেশি। আমাদের স্কুলের বাচ্চাদের চর্মরোগ পা থেকে হাতেও ছড়িয়ে যায়।
সরু গলি থেকে প্রশস্ত পথ, ড্রেনেজ অব্যবস্থাপনা আর জলাবদ্ধতার চেনা দৃশ্য জুরাইনে। জলাবদ্ধতায় নিমজ্জিত স্বপ্নের নীড় যেন দুঃস্বপ্নের আরেক নাম।
জলাবদ্ধতা ছাড়াও রাস্তাঘাটের বেহাল দশায় সীমাহীন দুর্ভোগে স্থানীয় বাসিন্দারা। দীর্ঘদিনের এই সমস্যা সমাধান না হওয়ায় সেবা সংস্থাগুলোকেই দুষছেন তারা। দ্রুত সুষ্ঠু পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনায় উদ্যোগ নেয়ার দাবি তাদের।
এক বাসিন্দা জানান, একদিন বৃষ্টি হলে ৫-৬দিন পানি নামার কোনো ব্যবস্থা নেই। বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে স্কুলে যেতে অনেক সমস্যা হয়। আরেক বাসিন্দা জানান, ডেঙ্গু, মশা এগুলো তো আছেই।
নগরবিদরা বলছেন, নাগরিক সমস্যা সমাধানে অনেকটাই উদাসীন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। নাগরিক সেবাকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করার তাগিদ তাদের।
নগরবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট যত দপ্তর আছে সিটি করপোরেশন, রাজউক তারা যদি সরেজমিনে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলতো তাহলে অন্তত বুঝতে পারতো কতটুকু খারাপ অবস্থায় একটা জনপদ থাকতে পারে। কিন্তু সবার আগে স্বীকার করতে হবে যে জুরাইনবাসী মারাত্মক দুর্দশায় আছে। কিন্তু জনগণের দুর্দশার সঙ্গে করপোরেশনের যে সংযোগ, যে একাত্ম হওয়ার বিষয় সে জায়গাটিই নেই।’
এমন বাস্তবতায় নাগরিক দুর্ভোগ কমাতে কি উদ্যোগ সিটি করপোরেশনের? এমন প্রশ্নে দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহীর গৎবাঁধা আশ্বাস। বললেন, জলাবদ্ধতা নিরসনসহ অন্যান্য নাগরিক সমস্যা সমাধানে দ্রুতই সমাধানের কথা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, এলাকাবাসী, শিক্ষার্থীদের যে দুর্ভোগ সে বিষয়টি আমরা দেখেছি। আমাদের সিটি করপোরেশনের সর্বাত্মক চেষ্টা থাকবে আমাদের সীমিত অর্থকে কীভাবে প্রপারলি ইউটিলাইজ করতে পারি। আমি যতদূর জানি আমাদের প্রকৌশলী বিভাগ থেকে সেখানের জন্য একটি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’
ঢাকার বিস্তার নতুন শহরের দিকে বেড়েছে ঠিকই, তবে এলাকাভেদে দেখা মেলে নানা অসঙ্গতির গল্প। নাগরিক দুর্ভোগের এসব দুঃসহ গল্পের শেষ কোথায়?





