জাতীয় নির্বাচনের আগে অথবা নির্বাচনের দিন গণভোটের সুপারিশ ঐকমত্য কমিশনের

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক | ছবি: পিআইডি
1

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে অথবা নির্বাচনের দিন গণভোট আয়োজনের সুপারিশ করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এ বিষয়ে দ্রুতই নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে যোগাযোগ করার তাগিদও দিয়েছে তারা। আজ (মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের সহ=সভাপতি ড. আলী রীয়াজ এ তথ্য জানান।

এর আগে সকালে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় সম্পর্কিত সুপারিশ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেয় ঐকমত্য কমিশন।

সংবাদ সম্মেলনে ড. আলী রীয়াজ বলেন, ‘আজই সব রাজনৈতিক দলকে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার সুপারিশমালা পৌঁছে দেয়া হবে। সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়—এমন সব বিষয় সরকারি অধ্যাদেশের মাধ্যমে দ্রুত বাস্তবায়ন করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।’

তিনি জানান, সংবিধানসংশ্লিষ্ট ৪৮টি বিষয়ের বাস্তবায়নে গণভোটের আয়োজন করার সুপারিশ করা হয়েছে। জনগণের মতামতের ভিত্তিতেই এগুলোর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া এগিয়ে যাবে।

আলী রীয়াজ আরও বলেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদের প্রথম ৯ মাসের মধ্যে গঠন করা হবে সংবিধান সংস্কার পরিষদ। এই সংসদ জুলাই সনদ বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করবে। যদি পরিষদ ২৭০ দিনের মধ্যে কাজ শেষ না করে, তাহলে জুলাই সনদে উল্লিখিত বিষয়গুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে প্রতিস্থাপিত হবে।’

জুলাই সনদে স্বাক্ষর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যারা এখনও স্বাক্ষর করেননি—তাদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত আছে। এনসিপির (জাতীয় নাগরিক পার্টি) সঙ্গেও যোগাযোগ হয়েছে এবং চলছে। আশা করি, তারাও শিগগিরই সনদে স্বাক্ষর করবে।

ড. আলী রীয়াজ বলেন, ‘ভবিষ্যতে যেন কোনো একতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত না হয়, সে লক্ষ্যেই ঐকমত্য কমিশন কাজ করছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত, বিশেষজ্ঞদের অভিমত এবং কমিশনের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে ‘‘জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন (সংবিধান সংস্কার) আদেশ ২০২৫’।’

আরও পড়ুন:

তিনি জানান, সুপারিশ তিন ভাগে বিভক্ত—

১। অসাংবিধানিক নয় এমন সব বিষয় অধ্যাদেশের মাধ্যমে দ্রুত বাস্তবায়ন।

২। কিছু বিষয় অফিস আদেশের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক বাস্তবায়ন।

৩️। সংবিধানসংশ্লিষ্ট ৪৮টি বিষয়ে গণভোট আয়োজন।

প্রস্তাব অনুযায়ী, সরকার অবিলম্বে ‘জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন (সংবিধান সংস্কার) আদেশ ২০২৫’ নামে একটি আদেশ জারি করতে পারে। এ আদেশের ওপর গণভোট হবে, যেখানে প্রশ্ন থাকবে—জনগণ এ আদেশের পক্ষে কি না।

এছাড়া প্রস্তাবে ১০০ সদস্যের উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করা হয়েছে, যা জাতীয় সংসদ গঠনের ৪৫ দিনের মধ্যে কার্যকর হবে। প্রথমবারের জন্য মনোনীত সদস্যদের তালিকা প্রকাশ না করার শর্ত শিথিলের কথাও বলা হয়েছে।

ঐকমত্য কমিশনের বিকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী, ৪৮টি সংস্কারের প্রস্তাব বিল আকারে উত্থাপন করে গণভোট আয়োজনের সুযোগও রাখা যেতে পারে।

ড. আলী রীয়াজ বলেন, ‘মূল প্রস্তাব ও বিকল্পে তেমন পার্থক্য নেই। গণভোটের সময় নির্ধারণ করবে সরকার ও নির্বাচন কমিশন। এখন বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া স্পষ্ট। আমরা আশা করি, এনসিপি স্বাক্ষর করবে এবং সরকার দ্রুতই এসব সুপারিশ বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘গণভোটের রায়কে কোনো দল নিজেদের স্বার্থে ব্যাখ্যা করবে না—এই প্রত্যাশাই আমাদের।’

এসএস