দুই দশক পর বাংলাদেশ-পাকিস্তান যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের বৈঠক

বাংলাদেশ-পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকের প্রতীকী চিত্র
বাংলাদেশ-পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকের প্রতীকী চিত্র | ছবি: সংগৃহীত
1

দুই দশক পর আজ ঢাকায় হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ-পাকিস্তান যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের নবম বৈঠক। দীর্ঘ বিরতির পর এ বৈঠকে মৌলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করবে দুই দেশ। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন অর্থ উপদেষ্টা আর পাকিস্তানের পক্ষে দেশটির পেট্রোলিয়ামবিষয়ক মন্ত্রী। বিশ্লেষকরা বলছেন, পাকিস্তানের উঠতি মধ্যবিত্ত ভোক্তা শ্রেণির চাহিদা পূরণে দেশটির বাজার ধরতে ‘মুক্ত বাণিজ্য’ চুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে দুই দেশের মধ্যে।

গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী অনেক পরিবর্তনের মধ্যে, কূটনৈতিক নীতিতেও পরিবর্তন দেখছে বাংলাদেশ। ২০১২ থেকে ২০২২ পর্যন্ত এ ১০ বছরে যেখানে বাংলাদেশ সফর করেছেন কেবল পাকিস্তানের একজন প্রতিমন্ত্রী, সেখানে গেলো ১৪ মাসে ঢাকায় এসেছেন দেশটির উপমন্ত্রীসহ মন্ত্রীসভার অন্তত ৪ সদস্য।

দুই দেশের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর মধ্যে যে যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের বৈঠক বসতে যাচ্ছে, সেটিরও আয়োজন হচ্ছে প্রায় দুই দশক পর। এজন্য পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছেন দেশটির পেট্রোলিয়াম বিষয়ক মন্ত্রী আলী পারভেজ মালিক। সবকিছু ঠিক থাকলে, বৈঠকে পুনরীজ্জিবিত হতে পারে, দুই দেশের অর্থ ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক। দশকের পর দশক ধরে দুই দেশের মধ্যে যে কূটনৈতিক শীতলতা চলছিলো, এ বৈঠকের মধ্য দিয়ে তা কতটুকু উষ্ণ হতে পারে?

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক মুহা রুহুল আমীন বলেন, ‘একটি দেশের পররাষ্ট্রনীতি থাকবে ফিক্সড। অর্থাৎ পররাষ্ট্রনীতি হলো দেশের স্বার্থ, অর্থনীতির স্বার্থ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক স্বার্থ। ভবিষ্যৎের জন্য আমাদের কি কি লক্ষ্য অর্জন করা আমাদের দেশের উন্নয়নের জন্য দরকার, এটি কোনো বিশ্বাস বা রাজনৈতিক দলের ওপর নির্ভর করে না। এটি সব অবস্থাতেই ঠিক থাকবে।’

আরও পড়ুন:

জেইসি জোটভুক্ত দেশগুলোর তালিকায় রয়েছে, ভারত, পাকিস্তান, সৌদি আরব, তুরস্ক ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো। সবশেষ ২০২৪–২৫ অর্থবছরে, যেখানে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশর ৭৮ কোটি ৭০ লাখ ডলারের আমদানির বিপরীতে রপ্তানি মাত্র ৮ কোটি ডলার, সেখানে এবারের জেইসি কি আদৌ এ বাণিজ্য ঘাটতির পরিবর্তন আনতে পারবে। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই দেশের মধ্যে এবারের বৈঠকে হতে পারে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি। পাট, চা রপ্তানির মত এখানে গুরুত্ব পেতে পারে জ্বালানি সহায়তার মত বিষয়ও।

অধ্যাপক মুহা রুহুল আমীন আরও বলেন, ‘পাকিস্তানের রয়েছে পারমাণবিক শক্তি, অর্থনৈতিক শক্তি এবং জনশক্তি। পাকিস্তান বিশ্ব রাজনীতিতে একটি সম্মান ও মর্যাদাপূর্ণ স্থানে অবস্থান করে। এ বৃহৎ একটি রাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের যে সম্পর্ক মানেই হলো দক্ষিণ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, মিডল এশিয়া ও ইউরোপের সঙ্গে একটি যোগাযোগ হবে।’

কিন্তু এত কিছুর পরও, দুই দেশের ঐতিহাসিক দ্বন্দ্ব-সংকটের সুরাহা হবে কি?

অর্থনীতি বিশ্লেষক মাহফুজ কবির বলেন, ‘বাংলাদেশের যে সমস্ত পণ্য রয়েছে সেগুলোর জন্য পাকিস্তানের একটি উঠতি মধ্যবিত্ত স্টেট রয়েছে। বাংলদেশের সস্তা পণ্য সেখানে বড় বাজার পেতে পারে। একই সঙ্গে দুটি দেশের মধ্যে একটি মুক্তবাণিজ্য চুক্তিও সম্পাদন করা যায়।’

আগামী দিনে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক যে একটা ভিন্ন মাত্রা পাচ্ছে, তার ইঙ্গিত হতে পারে বাণিজ্য উপদেষ্টার পাকিস্তান সফর। জেইসির পরদিন ইসলামাবাদ সফরে যাবেন বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী শেখ বশিরউদ্দিন।

এফএস