মেট্রোরেল প্রকল্প: থমকে এমআরটি লাইন ১ ও ৫ এর কাজ, অর্থছাড় নিয়ে জাইকার চিঠি

মেট্রোরেলের প্রকল্পের কাজ
মেট্রোরেলের প্রকল্পের কাজ | ছবি: এখন টিভি
1

প্রকল্পে ব্যয় কমানো, কাজের মান বৃদ্ধি ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের প্রতিযোগিতামূলক অংশগ্রহণ বাড়াতে গিয়ে থমকে আছে এমআরটি লাইন-১ ও ৫ এর কাজ। কাজে গতি বাড়াতে চিঠি দিয়েছে জাইকা। ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদ বলছেন, জাইকার চিঠি ভবিষ্যতে অর্থ ছাড়ে কোনো প্রভাব পড়বে না। তবে অর্থনীতি বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন- সময় নিলেও বর্তমান প্রকল্পের নির্মাণ ত্রুটি ভবিষ্যৎ প্রকল্পগুলোতে দূর হবে তো?

মৃত্যু নাকি বলে কয়ে আসে না। প্রতিদিনের মতো হয়তো শরীয়তপুরের আবুল কালামও বের হয়েছিলেন জীবিকার প্রয়োজনে। হয়তো মন মগজে একটায় ভাবনা ছিল ৩ আর ৪ বছরের বাচ্চার ভবিষ্যৎ। কিন্তু কে জানতো এমন মৃত্যু থমকে দিলো সব ভাবনাকে। আর এ শহরতো মানব মূল্য কখনো আফসোসে আবার কখনো টাকার অংকেই আটকে যায়।

এ অনাকাঙ্খিত মৃত্যু থমকে দিয়েছে এক পরিবারের জীবনের গতি। কেন, কিভাবে? কে দায়ী? হয়তো জানা যাবে, হয়তোবা না। আবার উল্টো পিঠে এ মেট্রো গতি ফিরিয়েছে ঢাকার জনজীবনকে। ঝিমিয়ে পড়া কর্মঘণ্টাকে গতি ফেরাতে ঢাকার ভেতরে এমন আরও ৫টি মেট্রোরেল তৈরির পরিকল্পনা আছে। এর মধ্যে এমআরটি লাইন-১ আর লাইন-৫ এর কাজ শুরু হলেও থমকে গেছে গতি।

সম্প্রতি সেই গতি ফেরাতে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় ও ডিএমটিসিএলকে চিঠি দিয়েছে প্রকল্প দুটির ঋণদাতা সংস্থা জাইকা। ২০৩০ সালে প্রকল্প দুটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও প্রয়োজন দেখা দিয়েছে ডিপিপি সংশোধনের। তখন মেয়াদ বাড়বে দ্বিগুণ। কিন্তু প্রশ্ন হলো জাইকার অর্থ ব্যবহারে এমন স্থবিরতা চলমান থাকলে ঋণের অর্থ ছাড়ে কি বাধা আসতে পারে?

আরও পড়ুন:

বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, 'যেহেতু আগের অভিযোগগুলো জাপানি অর্থায়ন থাকা সত্ত্বেও হয়েছে। তাদের তদারকি থাকা সত্ত্বেও হয়েছে। সেক্ষেত্রে শুধু তারা যদি বলে সব ঠিক আছে সেটার ওপর তো নির্ভর করা সরকারের উচিত হবে না। আমাদের যে প্রশাসনিক প্রক্রিয়া আছে কোনো বিষয় যদি পুনর্বিবেচনায় পড়ে যায় তাহলে তা দীর্ঘসূত্রিতায় পড়ে যায়। ক্রেডিটারের কাছ থেকে তাগিদ আসা খুবই স্বাভাবিক। তার মানে এ না যে তারা বুঝতে পারছে না অবস্থাটা। তাদেরও তো একটা ইন্টারেস্ট আছে।'

তবে কস্ট অপটিমাইজেশনের যে উদ্দেশ্যে বাড়তি সময় ব্যয় হচ্ছে তাকি সত্যি কাজে আসবে? সব মিলিয়ে প্রায় ১ লাখ টাকার দুটি প্রকল্পের ব্যয় ছুঁই ছুঁই করছে ২ লাখের ঘরকে। যেখানে বর্তমান মেট্রোরেলের নকশা ও নির্মাণের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সেখানে প্রায় দ্বিগুণ ব্যয়ের এ প্রকল্পে মান ঠিক থাকবে তো?

অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, 'ফলাফল যদি প্রকল্পের উপকারে আসে তাহলে বার্তাটা পজিটিভ হবে। পরিবর্তন ঘটেছে এবং তার ফলে কিছু সময় বেশি লাগলেও পরেরদিকে এটা প্রকল্পের গুণগত মানটাও বাড়িয়েছে। আর যদি এটা আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রিতায় পরিণত হয় তাহলে তো যেই লাউ সেই কদু হলো। বরং ক্ষতিটা আরও বেশি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা হয়।'

ডিএমটিসিএল এর এমডি বলছেন, ঋণ দেয়া দাতার দায়িত্ব আর খরচ কতটা সঠিক উপায়ে করা যায় সেই দায়িত্বটাওতো পালন করতে হবে। কম খরচে যেন দেশের মানুষ মেট্রো ব্যবহার করতে পারে তার জন্য দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও বেশি সম্পৃক্ত করার পরিকল্পনা হচ্ছে বলে জানান এমডি ফারুক আহমেদ।

ডিএমটিসিএলের এমডি ফারুক আহমেদ বলেন, 'আমাদের দায়িত্ব হলো সেটা যাচাই বাছাই করা আমরা দেশের মানুষকে কত কম পয়সায় মেট্রোসেবা দিতে পারবো। আমরা সেটাই করছি জাইকা চিঠি দিয়েছে, ভালো কাজ করেছে। আমরা চিঠির রেসপন্স করবো। প্রয়োজনে নেগোশিয়েট করবো। নেগোসিয়েশনের পথ তো খোলাই, আমাদের তো নেগোশিয়েট করতে হবে। এটা সময়ের ব্যাপারে হোক বা কম্পেটেটিভ এনভায়রনমেন্ট তৈরির ব্যাপারে হোক।'

আর খরচ কাটছাঁটের টেবিলে আটকে থাকা মেট্রোর গতি ফেরানোর আগে প্রয়োজন প্যাকেজ গুলোর দরপত্রে ভিন্ন ভিন্ন দেশের ঠিকাদারদের অংশগ্রহণ।

ফারুক আহমেদ বলেন, 'আমরা চাই সবার ইনক্লুসিভিটি যাতে সবাই এখানে অংশগ্রহণ করতে পারে। এটাই আমি বারবার বলছি যে আমাদের একটা কম্পেটেটিভ এনভায়রনমেন্ট দরকার যাতে সবাই অংশগ্রহণ করতে পারে। যখন সবাই অংশগ্রহণ করবে এটার দাম অটোমেটিকলি হয়ে যাবে। এখন তো আমরা দাম কম্পেয়ার করার সুযোগ পাচ্ছি না।'

হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে সময়ের সাথে অংক দাড়ায় লাখো কোটি টাকায়। নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়ায় বাড়ে প্রকল্পের ব্যয়। তবে জীবনের মূল্য কমে যায় প্রকল্পে দুর্নীতি আর ভুল ভাল পরিকল্পনায়।

ইএ