জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশ থেকে আরো বেশি ফোর্স নেয়ার অনুরোধ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করছেন জিন-পিয়েরে ল্যাক্রোইক্স
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করছেন জিন-পিয়েরে ল্যাক্রোইক্স |
0

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ থেকে পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যসহ আরও বেশি হারে ফোর্স নেয়ার জন্য জাতিসংঘের ডিপার্টমেন্ট অভ পিস অপারেশনের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেলকে অনুরোধ জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

আজ (রোববার, ২০ এপ্রিল) বিকেলে বাংলাদেশ সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তার অফিসকক্ষে জাতিসংঘের ডিপার্টমেন্ট অভ পিস অপারেশনের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জিন-পিয়েরে ল্যাক্রোইক্স সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি এ অনুরোধ জানান।

বৈঠকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অবদান, বর্তমান অবস্থান, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, মিশনের যোগ্য করে গড়ে তোলার জন্য অফিসার ও ফোর্সদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ এবং সামর্থ্য বৃদ্ধি, নারী পুলিশ অফিসারদের সমন্বয়ে ফিমেল প্লাটুন প্রেরণ, মিশনে বিজিবি ও আনসার সদস্য প্রেরণের সম্ভাব্যতা, দক্ষিণ সুদান ও সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে ফরমড পুলিশ ইউনিট (এফপিইউ) প্রেরণ, রোহিঙ্গা সমস্যা ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

বৈঠকের শুরুতে আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেলকে স্বাগত জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, 'জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে শান্তিরক্ষী বাহিনী প্রেরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একসময় শীর্ষ দেশ ছিল। কালের পরিক্রমায় বর্তমানে আমাদের অবস্থান তৃতীয়। নেপাল ও রুয়ান্ডা বর্তমানে প্রথম ও দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে।'

তিনি বলেন, 'আমরা আবারও জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে শান্তিরক্ষী বাহিনীর প্রেরণের ক্ষেত্রে প্রথম স্থান পুনরুদ্ধার করতে চাই। আমরা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের আওতায় বিভিন্ন দেশে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা ও আন্তঃসীমান্ত অপরাধ প্রতিরোধে বিজিবি সদস্যদের প্রেরণ করতে চাই। তাছাড়া মিশনে প্রশিক্ষিত আনসার সদস্যদের প্রেরণেরও ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে জাতিসংঘের সহযোগিতা আমাদের একান্ত প্রয়োজন।'

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অবদানকে স্বীকৃতি জানিয়ে আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, 'পুলিশসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে তাদের মেধা, দক্ষতা ও যোগ্যতা প্রদর্শনের মাধ্যমে কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে শান্তিরক্ষী বাহিনী প্রেরণের ক্ষেত্রে বর্তমানে বাংলাদেশ শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। সেখানে শীর্ষ পদগুলোতে যাতে বাংলাদেশি অফিসাররা আরও অধিক হারে দায়িত্ব পালন করতে পারে, সে লক্ষ্যে আমরা চেষ্টা করছি।'

উপদেষ্টা এসময় সারাবিশ্বে শান্তি ও সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের অবদানের কথা উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, 'জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে প্রেরণের জন্য আমাদের একটি ফিমেল প্লাটুন প্রস্তুত রয়েছে। এ ব্যাপারে জাতিসংঘের ডিপার্টমেন্ট অভ পিস অপারেশনের (ডিপিও) সহযোগিতা প্রয়োজন যাতে তারা প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাই ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে দ্রুত শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিত হতে পারে।'

তিনি বলেন, '২০১৩ সালে বাংলাদেশ জাতিসংঘের অনুরোধে সাড়া দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে সাফল্যের সহিত ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অভ কঙ্গো থেকে দক্ষিণ সুদানে দু'টি ফরমড পুলিশ ইউনিট (এফপিইউ) মোতায়েন করে। বাংলাদেশের প্রশংসনীয় পারফরম্যান্স সত্ত্বেও বর্তমানে সেখানে কোনো এফপিইউ নেই।'

তিনি আরও বলেন, 'যদিও জাতিসংঘ ২০১৪ সাল থেকে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে একটি মিশন বজায় রেখেছে, সেখানেও বাংলাদেশের কোনো এফপিইউ প্রতিনিধিত্ব নেই।'

উপদেষ্টা এ দু'টি দেশে বাংলাদেশ থেকে এফপিইউ নেয়ার জন্য আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেলকে অনুরোধ করেন।

উপদেষ্টা আরও বলেন, 'শান্তিরক্ষা মিশনের পাশাপাশি বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে জাতিসংঘ শুরু থেকে সহযোগিতা প্রদান করে আসছে। জাতিসংঘ মহাসচিবের সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফরের পর রোহিঙ্গা সমস্যা দূরীকরণে আমাদের জনগণের মধ্যে আশা জেগেছে।'

উপদেষ্টা এসময় রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তনের ক্ষেত্রে জাতিসংঘের আরও সময়োপযোগী ও কার্যকরী উদ্যোগ কামনা করেন।

বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (রাজনৈতিক ও আইসিটি) খন্দকার মো. মাহাবুবুর রহমান, রাজনৈতিক-১ অধিশাখার যুগ্মসচিব মু. জসীম উদ্দিন খানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এসএস