শনিবার ভোর ৪টা ৪৪ মিনিটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণের প্রধান ফটক টপকে প্রবেশ করে এক যুবক। এরপর সে দৌড়ে সরাসরি পূর্ব পরিকল্পনা মাফিক ফ্যাসিস্টের মুখাবয়ব মোটিফের কাছে যায়।
প্রথমে তাকে মোটিফটিতে দাহ্য সহায়ক তেল জাতীয় কিছু একটা ঢালতে দেখা যায় । এরপর কিছুটা আড়ালে গিয়ে দিয়াশলাই জ্বালিয়ে পরীক্ষা করে পুনরায় ফ্যাসিস্ট মোটিফে আগুণ লাগাতে ফিরে আসতে দেখা যায়। অগ্নিসংযোগের পরপরই দ্রুত ফটক টপকে রাস্তা পার হয়ে যায় ঐ ব্যক্তি। এরপর দ্রুতই সে রাস্তার অপর পাশের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেট থেকে ভেতরে প্রবেশ করে পালিয়ে যায়। এসময় তার পরনে ছিল কালো টি-শার্ট ও গ্যাবাডিংয়ের প্যান্ট।
সিসিটিভিতে দেখা যাওয়া ঐ যুবক চারুকলায় প্রবেশের ঠিক আগ মুহূর্তে সার্জিকাল মাস্ক পড়ে। অগ্নিসংযোগের পুরো কাজটি করা হয় মাত্র দেড় মিনিট সময়ে মধ্যে।
বর্ষবরণের দুদিন আগের এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নড়েচড়ে বসেছে। পহেলা বৈশাখের আগের দিন রমনার বটমূলে ছায়ানটে বর্ষবরণ আয়োজনের প্রস্তুতি পরিদর্শনে আসেন ডিএমপি কমিশনার। এসময় তিনি, সোমবার সকালের মধ্যেই চারুকলায় মোটিফে আগুন দেয়া দুষ্কৃতিকারীদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দেন।
ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাদ আলী বলেন, ‘জাতীয় উৎসবমুখর এ উৎসবে যাতে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই নির্বিঘ্নে অংশ নিতে পারে সেজন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।’
তিনি বলেন, ‘শোভাযাত্রায় ব্যবহারের জন্য তৈরি করা একটা মোটিভে দুষ্কৃতিকারীরা আগুন দিয়েছে। এটি নিয়ে একটি মামলা শাহবাগ থানায় রুজু করা হয়েছে। আগামীকাল সকাল ৯টার আগেই আমরা মামলার সন্তোষজনক ডিটেকশনের ক্ষেত্রে চলে যাব। এছাড়াও বাই দিস টাইম দুর্বৃত্তদের আমরা গ্রেপ্তার করতেও সক্ষম হব ইন শা আল্লাহ।’
২১টি সেক্টরে সাদা পোশাকে এবং ১৮হাজার পুলিশ সদস্য কাজ করবেন নিরাপত্তা জোরদারে। এছাড়াও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ ও অনুষ্ঠান স্থল ত্যাগ করার নির্দেশনা দিয়েছে ডিএমপি।
সকাল থেকেই রমনার বটমূলে র্যাব ও ডিএমপির সদস্যরা ডগ স্কোয়াড দিয়ে চালায় বিভিন্ন রকমের মহড়া। শান্তিপূর্ণ এই উৎসবে যদি কেউ বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করে কীভাবে সেটি মোকাবিলা করা হবে নেয়া হয় সেই প্রস্তুতিও।
র্যাবের মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান বলেন, ‘আমরা সব ধরনের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। আমরা আশা করি এ অনুষ্ঠানটি সুন্দরভাবে, সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সক্ষম হবো। আমরা সাইবার ওয়ার্ল্ডেও নজর রাখছি। যাতে সেখানে কেউ এ আয়োজন নিয়ে অপপ্রচার চালাতে না পারে। এছাড়াও এ অনুষ্ঠানে ব্যাপক জনসমাগম হয়। তাই সাধারণ জনগণের পাশাপাশি নারী, শিশু, বয়স্কদের নিরাপত্তার বিষয়ও আমরা নজরে রাখবো।’
এদিকে, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন ছায়ানটের শিল্পীরাও। তবে সেই আয়োজনের পরতে পরতে সদ্য প্রয়াত ছায়ানটের প্রতিষ্ঠাতা সনজীদা খাতুনকে মনে করছে তার সহযাত্রী ও শীষ্যরা।
ছায়ানটের মাঠ ব্যবস্থাপক ও সমন্বয়ক মামুনুর রশিদ বলেন, নববর্ষ বা যেকোনো আয়োজন আপাকে ছাড়া প্রথমবার। এটি আমাদের জন্য মনোকষ্টের জায়গা। কিন্তু আপা আমাদের যে শিক্ষা দিয়েছেন, যে আদর্শ ধারণ করতেন সেটাকে তার অনুপস্থিতিতে চর্চা করে সেগুলো পালন করার মাধ্যমে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবো।’