খাতুনগঞ্জের খেজুর ব্যবসায়ী মো. জাকের সওদাগর। আমদানি রপ্তানি ছাড়াও দৈনিক লাখ লাখ টাকার লেনদেন করতে হয় এই ব্যবসায়ীকে। যার ৯০ শতাংশই হয় ব্যাংকে। একাধিক ব্যাংকে রয়েছে তার হিসাব। কিন্তু কয়েকটি ব্যাংকে এখনো স্বাভাবিক লেনদেন করতে পারছেন না তিনি।
এখন টেলিভিশনের সামনেই এই ব্যবসায়ী ফোন করেন একটি ব্যাংকের ম্যানেজারের কাছে। জানতে চান লেনদেন করতে পারবেন কি না? জবাবে নিজের অসহায়ত্বের কথা জানান ব্যাংক কর্মকর্তা। এক লক্ষ টাকা চাইলে সাড়া মিলে ৫০ হাজার টাকার।
ব্যাংকের সাথে স্বাভাবিক লেনদেন করতে না পারায় বিপাকে পড়ছেন তারমতো হাজার হাজার ভোগ্যপণ্য ব্যবসায়ী। আটকে থাকছে মূলধন। বাকবিতণ্ডা আর বিশ্বাসভঙ্গ হচ্ছে ক্রেতা বিক্রেতার। সময়মতো পণ্য ক্রয়ও করা সম্ভব হচ্ছে না বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।
খাতুনগঞ্জের মেসার্স আল হেরামাইন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী জাকের সওদাগর বলেন, ‘যেহেতু আমার টাকা আকটে রয়েছে। আমি তো টাকা উঠাতে পারছি না। ব্যাংকের কাছ থেকে ঝগড়া-ঝাটি করে ৪ লাখ আবার কখনো ৫ লাখ টাকা করে উঠিয়েছি।’
দেশে সরকারি ৬টি ও বেসরকারি ৪৪টি বাণিজ্যিক ব্যাংক রয়েছে। এরমধ্যে ১০ থেকে ১১টি ব্যাংকের সাথে লেনদেনে ধুঁকছেন ব্যবসায়ীরা। চরম তারল্য সংকটের কারণে আগামীর রমজানের বাজার কেমন হবে তা নিয়ে শঙ্কায় ব্যবসায়ীরা। আস্থা ফেরাতে না পারলে আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যেও প্রভাব পড়ার শঙ্কা তাদের।
খাতুনগঞ্জ আড়তদার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এহসান উল্ল্যাহ জাহেদী বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা যদি রমজানের আগে ব্যবসার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে না পারে, তাহলে সেক্ষেত্রে পণ্যের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।’
চাক্তাই খাতুনগঞ্জ মিলিয়ে ছোট বড় প্রায় সাড়ে তিন হাজার আড়ত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রতিদিন এখানে লেনদেন ছাড়িয়ে যায় দেড় হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে নিদিষ্ট কিছু ব্যাংকের চেক বা পে অর্ডার নিতে চায় না কেউ। টাকা না পেয়ে আগের দেয়া চেকও ফেরত দিচ্ছে কেউ কেউ। এতে বিপাকে পড়েছেন সবাই।
মেসার্স আমেনা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আমিনুল ইসলাম মুন্না বলেন, ‘ব্যাংক সেক্টর যদি আবার আগের মতো কাজ করতে পারে তাহলে আমরা সহজেই ব্যবসা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব।’
তারল্য সংকট সহসাই দূর না হলে রমজানে ভোগ্য পণ্যের সরবরাহে ঘাটতি হতে পারে বলে শঙ্কা ব্যবসায়ীদের। তাই প্রয়োজনে সরকারকেও ভোগ্যপণ্য আমদানি করে বাজার সহনীয় রাখার পরামর্শ ব্যবসায়ীদের।