চোখ বন্ধ করে ছোটবেলার সেই পিঠার উষ্ণতা প্রায় ধুলোর আস্তর থেকে তুলে পুরনো স্মৃতিকে আবারও তাজা করে তোলে আমাদের অজান্তে। শহরের শীতে তাই যেনো বিশেষ পাওয়া। নগরীর অলিগলি-ফুটপাত, সুপারশপসহ হরেক স্বাদের পিঠা মেলে অনলাইনেও।
শীত টনটন। কর্তা-কত্রী হন হন। উনুন উচাটন। চাল কুটবে কে? গুড় আনবে কে? তেলে ভাজবে কে? টোনা বলি, আর টুনি, কারো আর মগডালে বসে থাকার সুযোগ নেই। বাজার অর্থনীতির যাপন সামলাতে গিয়ে সকলেই এখন রোজগেরে। তাই পিঠাপুলির আয়োজনে দিনক্ষণ ঠিক করে নিতে হয় আগেই। তারপর পিঠা ভাগ করার আগে, ভাগ করে নিতে হয় কে আনবে গুড় আর কে তেল চাল।
এক শিক্ষার্থী বলে, ‘বাবা-মা দু’জনেই ব্যস্ত থাকেন। আমিও পড়া-লেখা নিয়ে ব্যস্ত থাকি তাই বাসায় পিঠা তৈরি হয়ে ওঠে না। তাই বাইরে থেকেই পিঠা কিনে খেয়ে থাকি আমরা।’
পিঠা তৈরির এক দোকানি বলেন, ‘আগের থেকে চাল, ডাল, চিনির দাম কয়েকগুণ বেড়েছে। লাভ কম হচ্ছে তবুও চেষ্টা করছি শহরবাসীকে পিঠার স্বাদ নেয়ার ব্যবস্থা করতে।’
যদি পিঠা বানানোর দিন না মিলে কিংবা মুশকিল হয় জোগাড়ের আয়োজেনে, তবে সমাধান মুঠোতেই। আলাদীনের চেরাগের মতো হাজির হয়ে যাবে ভাপা, পুলি, পাটিসাপটা, পাকোয়ান, দুবিরানী বা রসে ভেজা যে কোন পিঠা।
এক গৃহিনী বলেন, ‘গ্রামে এই পিঠার আয়োজন হয় বেশি। কিন্তু গ্রামে যাওয়া হয়না বলে বাহির থেকে কিনেই খেতে হয় পিঠা।’
সড়কের পাশে পিঠা বিক্রি করা এক দোকানি বলেন, ‘আগে পুরো বছর পিঠা বিক্রি করলেও এখন শুধু শীদের দিনে বিক্রি করছি। আর এই পিঠা বিক্রির আয়েই চলে আমার পুরো সংসার।’
কারো যদি সত্যি টুনি বা টোনা হওয়ার দিনে ফিরতে ইচ্ছে হয়, তার জন্যে চালের গুড়ো এবং অন্যান্য জোগাড়ও এগিয়ে দিয়ে রাখছে সুপার সপ বা অনলাইনের কোন উদ্যোক্তা।
সুপারসপের এক ক্রেতা বলেন, ‘সড়কের পাশের দোকানে পিঠার দাম কম হলেও তাদের মান নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। তাই সুপারসপ থেকে কিনলে দামটা একটু বেশি কিন্তু মান অনেকটাই ভালো পাওয়া যায়।’
বেইলি পিঠা ঘরের স্বত্বাধিকারী কাজী গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘মানুষ এখন গ্রামেও পিঠা বানান কম। আর শহরেতো ঘরে পিঠা বানানই না। তাই আমরা এখানে পিঠার এই আয়োজন করেছি। বর্তমানে সব কিছুর দাম অনেক বেশি, তাও চেষ্টা করছি ক্রেতাকে ভালোটা খাওয়ানোর।’
উপায় আছে দাদি-নানি বা মায়ের সঙ্গে চুলার পাশের বসে পিঠা খাওয়ার স্বাদ নেবারও। ঢাকায় চিতই, ভাপা ও চাপড়ি তৈরি প্রকাশ্যে মাটির চুলোতে। সেখানে পিঠে পুলির সঙ্গে লাকড়ির চুলোর উষ্ণতাও মিলছে। নগর মানুষ তার ব্যস্ততা ও অবসর বুঝে বেছে নিতে পারছেন পিঠে খাওয়ার স্বাদ ও পরিবেশ।