৪৭তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে আজ (সোমবার, ২০ জানুয়ারি) শপথ নেবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে যাত্রা শুরু করবেন দ্বিতীয় মেয়াদে এবং এর মধ্য দিয়েই যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে সাড়াজাগানো রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তন দেখবে সারাবিশ্ব।'
সেই ঊনবিংশ শতাব্দীতে গ্রোভার ক্লিভল্যান্ডের পর ১৩০ বছরে ট্রাম্পই প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট, টানা দ্বিতীয় মেয়াদে না জিতলেও পরবর্তী নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন যিনি। তবে এ পথ সহজ ছিল না মোটেই।
আবাসন ব্যবসায়ী থেকে রিয়েলিটি শো তারকা। ব্যবসায়ী হিসেবে জটিল মারপ্যাঁচের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েই কি না, রাজনীতিতে শূন্য অভিজ্ঞতা সত্ত্বেও বাঘা বাঘা নেতাদের হারিয়ে হলেন বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশের রাষ্ট্রপ্রধান। ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় থাকাকালীন চারটি ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হয়েছিলেন ট্রাম্প। সবগুলোই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা ছিল বলে দাবি করে শত্রুদের ছুঁড়ে দিয়েছিলেন প্রতিশোধের হুমকি।
জাতি ও ধর্মবিদ্বেষী মন্তব্য আর পদক্ষেপ তো ছিলই। রাজনৈতিক মতবিরোধীদের যুক্তরাষ্ট্রের 'ভেতরের শত্রু' আখ্যা দিয়ে এবং দেশে সেনা মোতায়েনের হুঁশিয়ারি দিয়ে জনমনে বারবার ছড়িয়েছেন আতঙ্ক। ক্ষমতাসীন অবস্থায় ২০২০-এর নির্বাচনে পরাজয় মানতে পারেননি কিছুতেই, চাননি বিদায় নিতেও। তাই তো প্রমাণ ছাড়া নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তোলেন। ক্ষমতা ছাড়ার আগে দেয়া ভাষণে নজিরবিহীন ও রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা উসকে দেন ক্যাপিটল হিলে মার্কিন পার্লামেন্টের অধিবেশন চলার মধ্যেই। ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারির ওই ঘটনায় পরের সপ্তাহেই পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে অভিশংসিত হন ট্রাম্প।
ক্ষমতায় থাকাকালীনই মোট দু'বার অভিশংসিত হওয়া প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। পর্ণ তারকাকে ঘুষ দিয়ে মুখ বন্ধ করিয়ে ২০১৬'র নির্বাচন অবৈধভাবে প্রভাবিত করার মামলায় ৩৪টি অভিযোগের সবগুলো প্রমাণিত হওয়ায় গেলো মে মাসে দোষী সাব্যস্ত হন তিনি, যুক্তরাষ্ট্রে কোনো সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টের এমন ইতিহাসও প্রথম। যদিও নিজের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ বরাবর প্রত্যাখ্যান করেছেন তিনি।
এমনই কাঁটাসঙ্কুল পথ পেরিয়ে দ্বিতীয়বারও হোয়াইট হাউজে ফিরছেন ট্রাম্প, কিন্তু বহু বিতর্ক সঙ্গে নিয়ে। ২০২৪-এর নির্বাচনেও পরাজিত হলে সে ফল মানবেন না বলে সাফ জানিয়েছিলেন আগেই। জানিয়েছিলেন, উড়িয়ে দিচ্ছেন না রাজনৈতিক সহিংসতার শঙ্কাও। তিনি ও তার দল রিপাবলিকান পার্টির নেতারা সম্ভাব্য পরাজয়ের মোকাবিলা করার পথও এঁকে রেখেছিলেন।
আবার নির্বাচনে জিতলে ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গার মামলায় আটক সমর্থনদের মুক্তি দেয়ার আশ্বাস আর বিরোধী ডেমোক্র্যাট শিবিরের সমর্থক নির্বাচনী কর্মকর্তা, অর্থদাতা, টেক জায়ান্ট গুগলকে বিচারের মুখোমুখি করবেন বলে হুমকিও দিয়ে রেখেছেন ট্রাম্প। এবার ক্ষমতায় এলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে এক ব্যক্তির সর্বোচ্চ দু'বার প্রেসিডেন্ট হওয়ার বিধান পরিবর্তনের সম্ভাবনা নিয়ে ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে আলোচনা করেও খবরের শিরোনাম হয়েছেন বারবার।
এবার হারলে আর নির্বাচনে দাঁড়াবেন না জানিয়েছিলেন। কিন্তু বিরোধী পক্ষকে ভোটের মাঠে উড়িয়ে দিয়েই ক্ষমতায় ফিরছেন ট্রাম্প। গত ৫ নভেম্বরের নির্বাচনে ট্রাম্প ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রবীণতম প্রেসিডেন্ট প্রার্থী। বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের চেয়ে বয়সে মাত্র সাড়ে তিন বছরের ছোট ৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্প হতে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বয়োজ্যেষ্ঠ প্রেসিডেন্ট।
দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার আগে নির্বাচনী প্রচারের সময় দুই-দুইবার হত্যাচেষ্টার শিকার হয়েছেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। প্রথমবার জুলাইয়ে পেনসিলভেনিয়া অঙ্গরাজ্যে এক জনসভায় তার কান ছিদ্র করে বেরিয়ে যায় গুলি। এরপর সেপ্টেম্বরে ফ্লোরিডায় ট্রাম্পেরই একটি গল্ফ কোর্স থেকে অনুপ্রবেশকারী এক আততায়ীকে অস্ত্রসহ আটক করে নিরাপত্তাকর্মীরা।
নিজের ব্যবসায় হোক কিংবা দেশের রাজনীতিতে, চুক্তি প্রণয়নে বেশ মুন্সিয়ানা রয়েছে ট্রাম্পের। কিন্তু সামগ্রিকভাবে বেশ অস্থির আর খ্যাপাটে হিসেবে তার ভাবমূর্তি বিশ্বজুড়ে। ট্রাম্পের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে নিজে উপস্থিত থেকে তাকে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন বিদায়ী ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, চার বছর আগে যে সৌজন্য তার প্রতি দেখানোর প্রয়োজনবোধ করেননি ট্রাম্প।