কয়েকদিন আগেও মধ্যরাতে কর্মক্ষেত্র থেকে ফিরছিলেন নিউ জার্সির ইভান কাটলার। হঠাৎই আকাশে দেখতে পান পূর্ণিমার সময়ের চাঁদের মতো বড় কিছু। কিন্তু তার মাথায় ছিল পূর্ণিমা আসতে আরও দেরি। সন্দেহ হলে গাড়ি থামিয়ে নিবিড় চোখে তাকিয়ে দেখেন, বস্তুটি হতে পারে স্কুলবাসের সমান। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে নিউ জার্সির আকাশে বড় আর মাঝারি এই ধরনের উড়ন্ত বস্তু দেখছেন স্থানীয়রা। নিউ জার্সির সামরিক ঘাঁটির আশপাশেও দেখা গেছে ড্রোন সদৃশ বস্তু।
যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া, নিউইয়র্ক, মেরিল্যান্ড, পেনসিলভেনিয়া আর কানেকটিকাটের আকাশেও চলতি সপ্তাহে সন্দেহজনক ড্রোন সদৃশ বস্তু দেখা গেছে।
তারা বলছেন, ছোট আকারের বিমানের মতো উড়ন্ত বস্তুগুলোর আলো স্বাভাবিক বিমানের মতো নয়, আকাশযানগুলো খুব কাছাকাছি উড়ছিলো। ইঞ্জিনের কোনো শব্দ ছিল না। উড়ন্ত বস্তুগুলো আকাশে ছিল ৬ থেকে ১০ ঘণ্টা।
এর মধ্যে নিউ জার্সিতে শত শত ড্রোন সদৃশ আকাশযান ওড়ার খবরে স্থানীয়দের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে উত্তেজনা। সরকারের কাছে এর ব্যাখ্যা চাইছেন তারা।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, লাল আর সবুজ আলো জ্বলতে থাকা ছয়টি আকাশযান ফিলাডেলফিয়ার ডেলাওয়্যারে দেখা গেছে, যেগুলো বিমানবন্দর থেকে মাত্র ১৬ কিলোমিটার দূরে।
এই ড্রোনগুলো আটলান্টিকে থাকা ইরানের রণতরি থেকে আসছে, এমন মন্তব্য করেছেন রিপাবলিকান আইন প্রণেতারা। সন্দেহজনক উড়ন্ত বস্তুগুলো ভূপাতিত করতে বলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থা থেকে উপযুক্ত প্রমাণ দাবি করছেন স্থানীয়রা। সিক্রেট সার্ভিস বলছে, তারা উল্লিখিত কোন এলাকাতে ড্রোন উড়ায়নি। এতো আকাশযান দেখতে পেলেও হোয়াইট হাউজ আর কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই বলছে, ড্রোন ওড়ার কোন প্রমাণই তাদের কাছে নেই, তবে এতো জায়গা থেকে অভিযোগ পেয়ে তারা তদন্ত করছে। পেন্টাগন বলছে, এগুলো অন্য দেশ থেকে আসা আকাশযান নয়। তাই এগুলো ভূপাতিত করার কোনো প্রয়োজন নেই।
এদিকে, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ড্রোন সদৃশ বস্তু উড়তে দেখা গেছে, জার্মানির রামস্টেইনে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান ঘাঁটির ওপরও। নিরাপত্তা সূত্র থেকে এই খবরের সত্যতা নিশ্চিত করা হয়েছে।
জার্মানির গোয়েন্দা কর্মকর্তারা সতর্ক করেছিল, ইউক্রেনকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে সামরিক সহায়তা দেয়ার কারণে শত্রুপক্ষ নিতে পারে এই ধরনের পদক্ষেপ।
সামরিক ঘাঁটিগুলোতে নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে। সংবাদমাধ্যম স্পিগেলে বলা হয়, ড্রোন সদৃশ বস্তু উড়তে দেখা গেছে জার্মানির অস্ত্র প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান রেইনমেটালের ওপরও।
চলতি বছরের জুলাইতে সংবাদমাধ্যম সিএনএন আর নিউইয়র্ক টাইমস খবর প্রকাশ করেছিল, যুক্তরাষ্ট্রের তদন্ত সংস্থার অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, রেইনমেটালের প্রধান নির্বাহী আরমিন পেপারগারকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলো রাশিয়া। এই প্রতিষ্ঠান ইউক্রেনের জন্য অগণিত আর্টিলারি শেল আর সামরিক যান তৈরি করেছে।