উত্তর আমেরিকা
বিদেশে এখন
0

সেরা স্বাদের পিৎজার খেতাব নিউইয়র্কের উনা পিৎজা নেপোলিতানার

ফাস্টফুড হিসেবে পিৎজার গ্রহণযোগ্যতা যে কোনো খাবারকেই হারিয়ে দেবে। ইতালিতে জন্ম নেয়া পিৎজার ঐতিহ্যগত স্বাদে ভিন্নতা আনতে চলে নানা গবেষণা। এই গবেষণায় সফল হয়ে এবার সেরা স্বাদের পিৎজার খেতাব জিতলো নিউইয়র্কের উনা পিৎজা নেপোলিতানা। তবে শীর্ষস্থান হারালেও তালিকায় আধিপত্য রয়েছে ইতালির।

নেপলস। খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে গ্রিকদের হাতে শহরটির গোড়াপত্তন। রোম, মিলানের পর ইতালির তৃতীয় বৃহত্তম শহর নেপলস।

একটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি ভিসুভিয়াসের পাদদেশে অবস্থিত ছবির মতো সুন্দর এই শহরটি। প্রাকৃতিক নৈসর্গে পরিপূর্ণ শহরটি পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। তবে বিশ্বব্যাপী নেপলসের খ্যাতির পেছনে রয়েছে আরও একটি কারণ। আর তা হলো পিৎজা। বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় এই খাবারের জন্ম এই নেপলসে।

পিৎজার শুরুটা হয়েছিল খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে পারস্য সৈনিকদের হাত ধরে। পাতলা রুটির ওপর পনির ও খেজুর দিয়ে সৈনিকদের পরিবেশন করা হতো। এরপর ষোল শতকে ইতালির নেপলসে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের খিদে মেটানোর জন্য রুটির ওপর সেসময়ের সহজলভ্য সব উপাদান দিয়ে বিক্রি করা হতো। নাম দেয়া হয় নেপোলিতান পাই। ১৮৩০ সালের দিকে রাফায়েল এস্পাসিতোর তৈরি পিৎজা মার্গারিটার মাধ্যমেই শুরু হয় মুখরোচক এই খাবারটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা।

তখনকার সমাজব্যবস্থায় ইতালির উচ্চবিত্তরা স্ট্রিট ফুডকে খুব একটা ভালো চোখে না দেখলেও, দিনদিন বাড়তে থাকে পিৎজার জনপ্রিয়তা। ১৮৮৯ সালে দেশটির তৎকালীন রানিকে পিৎজা মার্গারিটা পরিবেশন করা হয়। মোজারেলা, বেসিলস আর টমেটোর স্বাদে ভরপুর পিৎজা মার্গারিটা রানির মন ছুঁয়ে যায়। এরপর ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে পিৎজার জনপ্রিয়তা, হয়ে ওঠে নেপলসের প্রধান খাবার।

১৯৪০ সাল পর্যন্ত এই খাবারটি শুধুমাত্র ইতালির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো। এরপর ইতালিয়ান অভিবাসীদের হাত ধরেই সুস্বাদু এই খাবারটি পৌঁছে যায় যুক্তরাষ্ট্রে। জয় করে মার্কিনদের মন। তবে ইতালির চিরায়ত স্বাদ থেকে বেড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পিৎজা পেলো এক নতুন স্বাদ।

মোজারেল্লা, বেসিলস আর টমেটোর বদলে সস, চিজ আর মাংস দিয়ে বেক করা হয় পিৎজা। আর এতেই ইতালির পিৎজার স্বাদকে ছাড়িয়ে যায় মার্কিনদের পিৎজা। যার প্রমাণও মিলেছে। সম্প্রতি ইতালিভিত্তিক সংস্থা ফিফটি টপ পিৎজার তালিকার শীর্ষে জায়গা করে নিয়েছে নিউইয়র্কের লোয়ার ইস্ট সাইডের রেস্তোরাঁ উনা পিৎজা নেপোলিতানা।

২০২২ সালের মার্চে রেস্তোরাঁটি খোলেন অ্যান্থনি ম্যাঙ্গেরি। সেরা হওয়ার খবরে বেশ উচ্ছ্বসিত মার্কিন পিৎজা শিল্পের অন্যতম এই দিকপাল। তিনি বলেন, পিৎজার জন্মস্থান নেপলস থেকে এমন স্বীকৃতি পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার। এটি তার ৩০ বছরের ক্যারিয়ারের সেরা স্বীকৃতি বলেও উল্লেখ করেন ম্যাঙ্গেরি।

সেরা পিৎজার খেতাব জেতা উনা পিৎজা নেপোলিতানা সম্পর্কে ফিফটি টপ পিৎজার সাইটে বলা হয়েছে, বাজারের ওপর নির্ভর করে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় প্রতিদিনই পিৎজার উপাদান পরিবর্তন হয়। সেখানে অ্যান্থনি ম্যাঙ্গেরির পিৎজায় মানসম্পন্ন উপাদান ব্যবহারের পাশাপাশি টপিংয়েও ইতালীয় ঐতিহ্যের বিশুদ্ধতা অটুট রাখা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সিতে বেড়ে ওঠা ম্যাঙ্গেরি শৈশবেই পিৎজার প্রেমে পড়েন। সবচেয়ে সুস্বাদু পিৎজার খোঁজে ম্যাঙ্গেরির মা তাকে নিউজার্সি, নিউইয়র্ক ও কানেকটিকাটের সুপরিচিত সব রেস্তোরাঁয় নিয়ে যান। পেশাজীবনে এসে ঐতিহ্যবাহী পিৎজা তৈরিতে প্রাকৃতিক ইস্টযুক্ত খামি ও জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহার করা হয় এমন ওভেন বেছে নেন ম্যাঙ্গেরি, আর উপাদান হিসেবে নেন সেরা সান মারজানো টমেটো, আমালফি ওয়াইল্ড অরেগানো, বাফেলো মোজারেলা ডিওপি ও সিসিলিয়ান সামুদ্রিক লবণ।

সেরার মুকুট হাতছাড়া হলেও ফিফটি টপ পিৎজা অ্যাওয়ার্ডের তালিকায় আধিপত্য ধরে রেখেছে ইতালি। তালিকায় যৌথভাবে দ্বিতীয় ইতালির নেপলসের ‘দিয়েগো ভিতাগ্লিয়ানো পিৎজারিয়া’ ও কাসের্তার ‘আই মাসানিলি’। এছাড়াও তৃতীয় স্থানে রয়েছে জাপানের রাজধানী টোকিওতে অবস্থি ‘দ্য পিৎজা বার অন থার্টি এইটথ’, চতুর্থ স্থানে মিলানের কনফাইন আর পঞ্চমে লন্ডনের নেপোলি অন দ্য রোড।

ইএ