প্রথমে প্রতিরক্ষা খাতে বিনিয়োগ, এরপর শুল্কারোপ, বরাবরই ইউরোপকে পশ্চিমাবিশ্ব থেকে আলাদা হিসেবেই মূল্যায়ন করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি ইস্যুতে টানাপড়েনের পর এবার নতুন সমস্যা শুল্ক ইস্যু। এই জোট থেকে আমদানিতে ২০ শতাংশ শুল্কারোপের পর ৯০ দিনের জন্য তা স্থগিত করলেও ইউরোপের মাথাব্যথা এতোটুকু কমেনি।
এবার ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির ওয়াশিংটন সফরে হয়তো কপাল খুলতে পারে গোটা ইউরোপের। ট্রাম্প আর মেলোনির সু-সম্পর্ক যুক্তরাষ্ট্র আর ইউরোপের ভঙ্গুর সম্পর্ক জোড়া লাগানোর একটি মাধ্যম হতে পারে। সফরে ইতালীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেছেন, অবশ্যই চুক্তি হবে, স্বচ্ছ চুক্তি হবে। আগামী তিন থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে সব দেশের সঙ্গে চুক্তিতে আসতেও আগ্রহী ট্রাম্প। অন্যদিকে, মেলোনি বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন চুক্তি সম্ভব, এমনকি পশ্চিমা বিশ্বকে আবারও সেরা অবস্থানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, 'শুল্কের মধ্য দিয়ে আমাদের কাছে অনেক অর্থ আসছে। এতোদিন বাণিজ্যে আমাদের ব্যবহার করা হয়েছে। এই বাস্তবতা এখন মেনে নিতে হবে। সবাই চুক্তি করতে চায়। আমরাও চুক্তি করবো। সবার কথা শুনতে চাই। সবার সঙ্গে আমরা স্বচ্ছ আর নিরপেক্ষ থাকবো। কিন্তু চুক্তি আমরাই করবো।'
এদিকে চীন ইস্যুতে ট্রাম্প বলেন, দেশটির ওপর শুল্ক বাড়ানো নাও হতে পারে। পণ্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যেতে পারে, সেই চিন্তা করে ১৪৫ শতাংশ থেকে সম্পূরক শুল্ক কমানো হতে পারে। এমনকি চীনের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তির বিষয়েও ইতিবাচক মনোভাব দেখান ডোনাল্ড ট্রাম্প। বলেন, বরাবরই শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে তার। খুব দ্রুতই দুই পক্ষ আলোচনায় বসবে। বেইজিংয়ের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তির বিষয়েও আশাবাদী ওয়াশিংটন। সেই পর্যন্ত টিকটক নিয়ে সিদ্ধান্ত স্থগিত থাকবে বলেও জানান তিনি।
ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, 'প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভালো। উনি সব জানেন। চীনের সঙ্গে আলোচনা করবো। আমরা চুক্তিতেও আসবো। কিন্তু টিকটক নিয়ে এখনই কোন চুক্তিতে আসবো না। আগে বাণিজ্য চুক্তিতে গুরুত্ব দেবো।'
যদিও উল্টো পথেই হাঁটছে বেইজিং। এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব কমাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন খোদ প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়ার পর এবার কম্বোডিয়া সফরে গেছেন চীনা প্রেসিডেন্ট। সাক্ষাৎ করেছেন দেশটির সিনেট সভাপতি হুন সেনের সঙ্গে। বার্তা একটাই, যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে এশিয়ার ভালো বন্ধু চীন, সঙ্গে বাণিজ্যিক অংশীদারও। কম্বোডিয়ার সঙ্গে ৩৭ টি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে চীন। হুন সেন জানান, দেশের সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী প্রকল্প ১৮০ কিলোমিটারের ফুনান টেকো খাল খননে বিনিয়োগ করতে পারে চীন। এই খাল যাবে মেকোং নদী দিয়ে। ফলে, ভিয়েতনামের বন্দর দিয়ে কমবে কম্বোডিয়ার পণ্য সরবরাহ।
এর আগে মালয়েশিয়া সফরে গিয়ে সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন করে চীন ও মালয়েশিয়া। ১২ বছর পর প্রথমবার কুয়ালালামপুর আসলে রাজা সুলতান ইব্রাহিম সুলতান ইস্কান্দার ও মালয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট আনোয়ার ইব্রাহিম শি জিনপিংকে স্বাগত জানান। এসময় ডিজিটাল অর্থনীতি, বাণিজ্য, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সসহ নানা ইস্যুতে ৩০ টি চুক্তি স্বাক্ষর হয় দুই দেশের।
এদিকে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের এই সফরে এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সূচকে চাঙাভাব দেখা গেছে। ঊর্ধ্বমুখী দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, অস্ট্রেলিয়া আর ভারতের শেয়ারবাজারের বিভিন্ন সূচক।