উত্তর আমেরিকা
বিদেশে এখন
0

রাশিয়া ও চীনকে হুমকি হিসেবে দেখছে যুক্তরাষ্ট্র-ব্রিটেন

ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনার জেরে বৈশ্বিক শাসন ব্যবস্থায় বড় ধরনের ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ ও এমআই সিক্সের প্রধান কর্মকর্তা। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানরা বলেন, এই মুহূর্তে রাশিয়া, চীন বা মধ্যপ্রাচ্যের যে কোনো শক্তিকে হুমকি হিসেবে দেখছে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন। প্রতিপক্ষের আঘাত প্রতিহত করতে হলে এই দুই দেশকে একযোগে কাজ করতে হবে।

কোভিডের ধাক্কা পুরোপুরি কাটিয়ে না উঠতেই প্রথম ইউক্রেন-রাশিয়া এবং এরপর ইসরাইল-হামাস সংঘাতে ক্রমেই বিভক্ত বিশ্ব রাজনীতি। একদিকে ইউক্রেন অন্যদিকে ইসরাইলকে সমর্থন দিয়ে রাশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিরাগভাজন হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি দক্ষিণ চীন সাগর ও তাইওয়ান ইস্যুতে নাক গলিয়েও বেইজিংয়ের সঙ্গে উত্তেজনা বাড়িয়েছে ওয়াশিংটন।

চলমান এই ঘটনাপ্রবাহে যুক্তরাষ্ট্রের মাথা ব্যথার কারণ ইরানও। সম্প্রতি ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ইউক্রেনে হামলা অব্যাহত রাখতে রাশিয়াকে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পাঠিয়েছে তেহরান।

এ ঘটনার সত্যতা নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হলেও ইরানের এমন পদক্ষেপে ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত নাটকীয় মোড় নিতে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ প্রধান উইলিয়াম বার্নস ও এম আই সিক্সের রিচার্ড মোর। তারা বলেন, মস্কো ও তেহেরানের মধ্যে একটি উইন উইন চুক্তি হতে যাচ্ছে। ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের সক্ষমতা বাড়াতে ভবিষ্যতে ইরানকে রাশিয়া সব ধরনের সহায়তা দেবে বলেও মত তাদের।

যুক্তরাজ্যের এমআইসিক্সের প্রধান রিচার্ড মোর বলেন, 'আমরা দেখেছি ইরান লেবাননের হিজবুল্লাহকে অর্থ সহায়তা দিয়ে আসছে। ৭ অক্টোবর হামাস যে নৃশংসতা চালিয়েছিল সেখানেও তাদের মদত ছিল। ইরাকি শিয়া মিলিশিয়াদের নিয়ে তারা কিসের ষড়যন্ত্রে করছে? লোহিত সাগরে হুতিদের ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক জাহাজের চলাচল বন্ধ করার পেছনে তাদের উদ্দেশ্য কী?'

২০২২ এর ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তার হাত বাড়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। ইউরোপজুড়ে চলমান উত্তেজনা ও বিশ্ব রাজনীতিতে এর প্রভাব নিয়ে আলোচনায় সম্প্রতি বৈঠক করে ওয়াশিংটন ও লন্ডনের প্রধান দুই গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ ও এমআই সিক্স প্রধান। আলোচনায় উঠে আসে দুই দেশের সামরিক সহায়তা বাড়ানোর প্রসঙ্গও।

এআই ও ক্লাউড ডিভাইস ব্যবহার করে পুতিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে দাবি করেন এই দুই গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান। তবে, দুই দেশের সম্মিলিত শক্তি এই প্রোপাগান্ডার রাজনীতি বন্ধ করবে বলেও আশ্বাস দেন তারা। গোয়েন্দা সংস্থার পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে রিচার্ড মোর ও বিল বার্নস আরও দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য একসাথে কাজ না করলে বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থা যে কোনো সময় মুখ থুবড়ে পড়তে পারে।

এদিকে, দুই গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান যৌথভাবে কোনো বিবৃতি দেয়ার ঘটনাকে বিরল বলে দাবি করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। পাশাপাশি এই সতর্কবার্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করার প্রস্তাব দিচ্ছেন তারা।

প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ কর্নেল সাইমন ডিগিংস বলেন, 'খবরটি উদ্বেগের। বিশেষ করে সিআইএ ও এমআইসিক্স প্রধানের যৌথ বিবৃতি একেবারেই অপ্রত্যাশিত। এই বার্তাকে হালকাভাবে নেয়ার সুযোগ নেই। শুধু যুক্তরাষ্ট্র বা যুক্তরাজ্যই নয়, ইউরোপের অন্যান্য দেশের বিরুদ্ধে পুতিন যেভাবে সোচ্চার হয়েছেন, আমাদের সতর্ক থাকতে হবে'।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৭ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যে স্নায়ু যুদ্ধ শুরু হয়েছিল ১৯৯১ সালে ইউনিয়নের পতনের পর তা মন্থর হয়ে পড়ে। চলমান সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ও পুতিনের কূটনীতি আবারও কোনো যুদ্ধের অশনি সংকেত দেখাচ্ছে কিনা সেদিকেই এখন নজর থাকবে বিশ্বের।