হামাস-ইসরাইল যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের ২০ প্রস্তাব

ডোনাল্ড ট্রাম্প
ডোনাল্ড ট্রাম্প | এখন টিভি
0

নিজেকে গাজার শাসনব্যবস্থার প্রধান করে যুদ্ধ বন্ধে ২০ দফা প্রস্তাব দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হামাস এতে রাজি হলেই অবিলম্বে যুদ্ধের অবসান হবে বলে জানান তিনি। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জিম্মিদের ফিরিয়ে দেয়া এবং ফিলিস্তিনের শাসনব্যবস্থায় হামাসের ভূমিকা না থাকাসহ বেশকিছু শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে। এসব প্রস্তাবে সম্মত হলে ইসরাইল তাদের আগ্রাসন বন্ধ করবে।

প্রায় দুই বছর ধরে চলা গাজা-ইসরাইল যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে ৬৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। বাস্তুচ্যুত কয়েক লাখ বাসিন্দা। গাজা উপত্যকা পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। খাদ্য ও পানির সংকটে দেখা দিয়েছে দুর্ভিক্ষ। গোটা উপত্যকায় ছড়িয়ে পড়েছে রোগব্যাধি। চলতি বছরের শুরুতে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতির চুক্তি হলেও, তা লঙ্ঘন করে হামলা চালিয়ে যায় ইসরাইল। এতে ভেস্তে যায় গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠার সব সম্ভাবনা।

এবার গাজায় যুদ্ধ বন্ধে বিশাল এক পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউজে বৈঠকে ট্রাম্পের ২০ দফা প্রস্তাবে সায় দিয়েছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু। ট্রাম্প জানান, হামাস তা মেনে নিলেই অবিলম্বে বন্ধ হবে যুদ্ধ, শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে গাজায়। হামাস যদি প্রস্তাবে রাজি না হয় বা বিলম্ব করে তাহলে ইসরাইলের যেকোনো কর্মকাণ্ডে নির্দ্বিধায় সমর্থন দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

২০ দফার অন্যতম গাজায় একটি অস্থায়ী অন্তর্বর্তীকালীন শাসনব্যবস্থা গঠন করা, যার নাম হবে বোর্ড অব পিস। আর এ বোর্ডের নেতৃত্বে থাকবেন ট্রাম্প নিজেই। তবে এ বোর্ডের চেয়ারম্যান ট্রাম্প হলেও, এতে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক নেতাদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ এ কমিটি গাজাবাসীর দৈনন্দিন সেবা পরিচালনা করবে। তাদের লক্ষ্য থাকবে গাজায় আধুনিক, কার্যকর ও বিনিয়োগবান্ধব প্রশাসন গড়ে তোলা।

প্রতিবেশি রাষ্ট্রের জন্য যেন হুমকি হয়ে না দাঁড়ায়, সে লক্ষ্যে গাজাকে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসমুক্ত অঞ্চলে পরিণত করা হবে। একইসঙ্গে গাজার পুনর্গঠনের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। যেখানে উপত্যকাকে আধুনিক শহরে রূপ দেয়ার পরিকল্পনা আছে। এছাড়া গাজায় গড়ে তোলা হবে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল।

ইসরাইল প্রকাশ্যে এ চুক্তি মেনে নেয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জীবিত ও মৃত সব জিম্মিকে ফেরত দিতে হবে হামাসকে। বিনিময়ে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত ২৫০ ফিলিস্তিনি বন্দিসহ আটক নারী ও শিশুসহ দেড় হাজারের বেশি গাজাবাসীকে মুক্তি দেবে ইসরাইল। একজন ইসরাইলি জিম্মির মরদেহের বিনিময়ে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে ১৫ জন গাজাবাসীর মরদেহ।

প্রস্তাবে আরও বলা আছে, সব জিম্মি ফেরত আসার পর, হামাসের যেসব সদস্য শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান মেনে অস্ত্র ত্যাগ করবে তাদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হবে। পাশাপাশি যারা গাজা ছাড়তে চান, তাদের নিরাপদে অন্য দেশে যেতে দেয়া হবে। হামাসসহ অন্যান্য সংগঠন প্রত্যক্ষ, পরোক্ষ বা কোনোভাবেই সেখানকার শাসনক্ষমতায় থাকতে পারবে না। তবে জোরপূর্বক গাজা ছাড়তে বাধ্য করা হবে না কাউকেই।

আরও পড়ুন:

আরবরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সমন্বয়ে একটি অস্থায়ী বাহিনী গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বাহিনী ফিলিস্তিনি পুলিশদের প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দেবে। দীর্ঘমেয়াদে উপত্যকাটির অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার দায়িত্ব নেবে এ বাহিনী।

চুক্তির শর্ত মেনে নেয়ার পরই গাজায় পুরোপুরি মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দেয়া হবে। জাতিসংঘসহ নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থাগুলো সেখানে সহায়তা অব্যাহত রাখতে পারবে।

প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে গাজা বা অধিকৃত পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনের পরিকল্পনা ত্যাগ করবে ইসরাইল। এছাড়া, ধাপে ধাপে তাদের সেনাদের সরিয়ে নেয়া হবে। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য ইসরাইল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সংলাপ শুরুর পরিকল্পনাও দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

তবে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস এই পরিকল্পনা গ্রহণ করবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আপাত দৃষ্টিতে ট্রাম্পের ২০-দফা শান্তি প্রস্তাব গাজাবাসীর জন্য শান্তি বয়ে আনবে। তা ভেস্তে গেলে সংঘাত আরও বিস্তৃত হওয়া আশঙ্কা তাদের।

এসএস