২০১২ সালের নভেম্বর থেকে পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র হিসেবে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে জায়গা পেলেও আজও সদস্য নয় ফিলিস্তিন। বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকা ইসরাইলি বর্বরতার মুখে চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্যের মধ্যে ১৪৭টি, অর্থাৎ ৭৬ শতাংশের এর বেশি সদস্য দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে।
২৩ মাস ধরে চলতে থাকা হত্যাযজ্ঞে ৬৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনির প্রাণহানি, পশ্চিম তীরে সহিংস অবরোধ, একের পর এক প্রতিবেশী দেশে হামলা, আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের প্রতি চরম উপেক্ষা দেখালেও ইসরাইলকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ঘোষণার প্রশ্নে এখনও নীরব বিশ্ব রাজনীতিতে প্রতাপশালী দেশগুলো।
তবে আগ্রাসন সীমা ছাড়ানোয় বিশ্বজুড়ে তোপের মুখে সম্প্রতি নড়েচড়ে বসতে শুরু করে ইউরোপের দেশগুলো। স্পেন, আয়ারল্যান্ড, নরওয়ে, সুইডেন ও সাইপ্রাসের পর রোববার ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে পর্তুগাল।
একদিন পরই নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের চলতি বছরের অধিবেশনে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়ার তালিকায় যুক্ত হবে পরাশক্তিধর ফ্রান্স, যেখানে বাস ইউরোপের সবচেয়ে বড় ইহুদি ও মুসলিম সম্প্রদায়ের।
ফিলিস্তিনিদের মধ্যে একজন বলেন, ‘তিনি একটু দেরিতে হলেও এ পদক্ষেপ নিচ্ছেন, এজন্য তাকে দোষ দিচ্ছি না, বরং অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমাদের মনে রাখতে হবে যে ফ্রান্স হলো ১৪৮তম দেশ যারা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিচ্ছে এবং এ মুহূর্তে আমাদের নজর গাজায় চলমান গণহত্যায়। বোমার আঘাতে, ক্ষুধায় মানুষ মরছে। উপত্যকার শেষ ভবনগুলোও ধসে পড়তে দেখছি।’
অন্য একজন বলেন, ‘এ স্বীকৃতি যে দেয়া হচ্ছে তা খুবই ভালো। কিন্তু মানুষ হত্যা নয়, অগ্রাধিকার হলো ইসরাইলের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করা।’
আরও পড়ুন:
অধিবেশন চলাকালে সোমবারই (২২ সেপ্টেম্বর) ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র ঘোষণার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যুক্তরাজ্য, বেলজিয়াম, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ প্রায় ১০টি দেশ। যদিও ইসরাইল গাজায় মানবিক সংকট শিথিলে এবং দীর্ঘমেয়াদী শান্তি প্রক্রিয়ায় সম্মত হলে সিদ্ধান্ত পাল্টাতে পারে লন্ডন। তবে এভাবেই মধ্যপ্রাচ্য সংকটের দ্বিপাক্ষিক সমাধানের আহ্বান জোরদার হচ্ছে ইসরাইলের কয়েক দশকের ঘনিষ্ঠ মিত্র রাষ্ট্রগুলোতে। কিন্তু কেন? আপাতদৃষ্টিতে সুখবর মনে হলেও, আদতে পশ্চিমা দেশগুলোর লক্ষ্য ইসরাইলেরই নিরাপত্তা, ফিলিস্তিনিদের নয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, সহানুভূতি থেকে নয়, রাজনৈতিক স্বার্থরক্ষার কৌশল এটি।
সুইজারল্যান্ডের মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ভিক্টর জে. উইলি বলেন, ‘পুরো বিষয়টি রাজনীতিকেন্দ্রিক বেশি, সহানুভূতি এখানে কমই কাজ করছে। সরকারগুলো একটি নতুন স্থিতাবস্থা তৈরি করতে চায়, এক ধরনের নতুন পরিস্থিতি যেন ইসরাইলকে নতুন ধরনের কোনো আলোচনার মাধ্যমে চাপ দেয়া যায়। সে লক্ষ্যে এটি কৌশলগত পদক্ষেপও। যেমনটা আমি বলেছি, গাজা গুরুত্বপূর্ণ, তবে এটি সম্ভবত একমাত্র উদ্দেশ্য নয়, বরং পেছনে আরও বড় উদ্দেশ্য আছে। আমি মনে করি, শেষ পর্যন্ত এ নিয়ে নির্বাচনী রাজনীতি দেখবো আমরা।’
অবশ্য ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে ইচ্ছুক দেশগুলো বলছে, গাজায় ইসরাইলের বিধ্বংসী আগ্রাসন এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরে নতুন ইহুদি বসতি নির্মাণ বন্ধ করতে, আর ফিলিস্তিনিদের সাথে শান্তি প্রক্রিয়ায় পুনরায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে চাপ প্রয়োগে এই পদক্ষেপ। ইসরাইলের ঘনিষ্ঠতম মিত্র আর বিশ্ব রাজনীতির মোড়ল যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপীয় মিত্রদের এ অবস্থানের ঘোর বিরোধী।





