জাবালিয়ার উত্তরে বেইত লাহিয়া শহরের ওপর দিয়ে যাচ্ছে একটি ট্রাক। সেদিকে রুদ্ধশ্বাসে ছুটছে মানুষ। যে যেভাবে পারছেন ওঠার চেষ্টা করছে ট্রাকে। দেখে মনে হতে পারে কোনো মহাবিপদ থেকে বাঁচতে- ঐ ট্রাকে চড়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই এই মানুষগুলোর।
দৃশ্যটি আসলে একটি ত্রাণ বোঝাই ট্রাকের। ক্ষুধার সঙ্গে লড়তে না পারে যে যেভাবে পারছেন ঐ ট্রাক থেকে সামান্য আটা, শুকনো খাবার নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন পরিবারের কাছে। যদিও অধিকাংশ সময়ে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে তাদের।
গেল ১৩ দিন ধরে গোটা বিশ্বের নজর যখন ইসরাইল-ইরান সংঘাতের দিকে, তখন মধ্যপ্রাচ্যের আরেকটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত অঞ্চল ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় চূড়ান্ত বর্বরতা চালাচ্ছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। ত্রাণ আটকে রাখা, অপর্যাপ্ত সরবরাহ ব্যবস্থার সঙ্গে যোগ হয়েছে ত্রাণ নিতে যাওয়া মানুষের ওপর গোলাবর্ষণ। গৃহহীন ফিলিস্তিনিদের আর্তনাদ, যে সামান্য খাবারটুকু পোঁছাচ্ছে গাজাবাসী কাছে, তাতেও লেগে আছে প্রিয়জনের রক্ত।
২০২৩ এর অক্টোবরে যুদ্ধ শুরুর পর আইডিএফের হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয় গাজার স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো। অকার্যকর হয়ে পড়ে উপত্যকার ৯৪ শতাংশ হাসপাতাল। টিকে থাকা ৬ শতাংশ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এবার চিকিৎসা সরঞ্জাম প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে নেতানিয়াহু প্রশাসন। গেল সোমবার শিশু খাদ্যের অভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে এক ডজনেরও বেশি নবজাতক।
গাজার অধিকাংশ নবজাতকের আশ্রয় খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে মিলছে না কিউবেটর, শিশু খাদ্য ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম। বিশেষ করে ৬ মাসের কম বয়সী শিশু যারা খাদ্যগ্রহণে বেবি ফরমুলা ওয়ান ও টু'র ওপর নির্ভরশীল তাদের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগে আছেন নাসেরের স্বাস্থ্যকর্মীরা। ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ এই শিশু খাদ্যের সরবরাহ না বাড়ানো হলে পরিপাকতন্ত্র ও শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থতায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে দশ হাজারেরও বেশি নবজাতক- এমন আশঙ্কা জানিয়েছে অলাভজনক সংবাদমাধ্যম পর্যবেক্ষণ সংস্থা মিডল ইস্ট মনিটর।
গাজার এই নবজাতকদের মায়েরাও ভুগছেন পুষ্টিহীনতায়। বুকের দুধ খাওয়াতে পারছেন না শিশুকে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, শুধু পুষ্টিহীনতায় ভুগে এই নাসের হাসপাতালে প্রাণ গেছে অন্তত ৬০ নবজাতকের।
একই চিত্র আল শিফা হাসপাতালেরও। প্রতিদিন ত্রাণ নিয়ে ফেরার সময় যে পরিমাণ মানুষ আহত হচ্ছেন তাদের ন্যূনতম প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার সরঞ্জাম নেই হাসপাতালটিতে। এছাড়া, আইসিইউ কিংবা জরুরি বিভাগের বাইরে প্রতিদিন কত মানুষ মারা যাচ্ছেন সেই পরিসংখ্যান জানা নেই কারোরই।





