আক্ষরিক অর্থে গাজায় ৫৭ দিনের অস্ত্রবিরতি পালন করেছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। শুরু থেকেই যার বিরোধিতা করছিল ইসরাইলি যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা। মধ্যস্ততাকারীদের পক্ষ থেকে বারবার গাজায় স্থায়ী অস্ত্রবিরতির সমাধান প্রস্তাব করা হলেও তা এড়িয়ে গেছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু।
যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে তেল আবিবের যেকোনো আগ্রহই ছিল না তা পরিষ্কার হয়েছে গেল দু'দিনে। অস্ত্রবিরতি অগ্রাহ্য করে ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে ৫শ'র বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরাইলি সেনারা। প্রাণ গেছে ২০০ শিশুর।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্ষমতায় টিকে থাকতে মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত চালিয়ে যাওয়ার কোনো বিকল্প নেই ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর। তবে নেতানিয়াহুর উদ্দেশ্য স্পষ্ট হলেও ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলি বর্বরতার জেরে আরব নেতাদের প্রতিক্রিয়া শুধু বিবৃতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ কেন? সে প্রশ্নের জবাব মিলছে না।
গাজায় নেতানিয়াহু বাহিনী অস্ত্রবিরতি অমান্য করে আবারও অভিযান শুরুর পর বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) সকালে ইসরাইলি বিমানবন্দর লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে ইয়েমেনের হুতিরা। একই দিনে তেল আবিবে রকেট হামলা চালিয়েছে হামাস। কিন্তু এত কিছুর পর হিজবুল্লাহ, হুতি বা হামাসের মতো অক্ষশক্তির পেছনে থাকা ইরানের নীরবতার কারণ বুঝতে পারছেন না আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।
মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হিসেবে পরমাণু সক্ষমতা আছে পাকিস্তানের। কিন্তু ফিলিস্তিনের সাথে দেশটির ভৌগোলিক দূরত্ব অনেক। সেই ক্ষমতা ইরানের থাকলেও গাজায় সাম্প্রতিক হামলা নিয়ে এখনও মুখ খোলেননি দেশটির সর্বোচ্চ নেতা।
মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষকরা মনে করেন, সক্ষমতার বিচারে তেল আবিবের টক্কর দিতে পারে একমাত্র তেহরানই। জেরুজালেম পোস্টের দাবি, গাজা ও ইয়েমেনে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক হামলা প্রমাণ করে, অক্ষশক্তিকে রক্ষা করতে না পারলে, সক্ষমতার বদলে ইরানের দায়বদ্ধতায় পরিণত হবে হুতি কিংবা হামাস।
এর আগে তেহরানকে হুঁশিয়ারি দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ইরানের কোনো অক্ষশক্তি যদি যুক্তরাষ্ট্র বা তার মিত্র দেশের ওপর হামলা করে- সেই দায় পুরোটাই নিতে হবে ইরানকে।
তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, ইরানের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া না আসার আরেকটি বড় কারণ ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে পরমাণু সক্ষমতা বিষয়ক আলোচনা। ইরান যেখানে পরমাণু স্থাপনা অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর সুযোগ খুঁজছে, সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তাৎক্ষণিক দ্বন্দ্বে জড়ানো বোকামি হবে।
টিবিএনের মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ মাতি সশানি বলেন, ‘তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, ইরানের অক্ষশক্তি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে গুলি ছুঁড়লে ধরে নেয়া হবে এই গুলি ইরান নিজেই ছুঁড়েছে। এর কয়েকদিন আগে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে তেহরানের পরমাণু সক্ষমতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ইরানকে এই নিউক্লিয়ার প্রোগ্রাম অন্যত্র সরিয়ে নিতে চাপ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র আর এর বিনিময়ে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা থেকে বের হতে চায় ইরান। এরপর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রকে যুদ্ধবিরতির আলোচনায় আগ্রাসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে দেখা যাচ্ছে।’
বিশ্লেষকরা আরো বলছেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের মতো পরাশক্তির বিপক্ষে যাওয়ার ঝুঁকি অনেক। সমগ্র মুসলিম বিশ্ব গাজাবাসী ওপর চলমান নৃশংসতার ঘোর বিরোধী হলেও ইসরাইলের বিরুদ্ধে সরাসরি অস্ত্র ধরতে চান না কেউই। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ফিলিস্তিনের হয়ে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইলের সাথে টক্কর দিতে হলে জাতীয় নিরাপত্তা নিয়েও ভাবতে হবে আরব জোট বা মুসলিম বিশ্বের।