২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ১২শ' ইসরাইলিকে হত্যা ও প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এর বিপরীতে ইসরাইলিদের হাতে প্রাণ দিতে হয় ৪৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় গাজা উপত্যকা। বাস্তুচ্যুত কয়েক লাখ মানুষ। যুদ্ধ ছড়িয়েছে ইরান, লেবানন, ইয়েমেনসহ গোটা মধ্যপ্রাচ্যে।
যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, যুদ্ধ শুরুর আগে হামাসের যোদ্ধা ছিল ২০ থেকে ২৫ হাজার। ইসরাইলের দাবি, এদের মধ্যে প্রায় ২০ হাজার হামাস সদস্যকে যুদ্ধে হত্যা করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ধারণা, গেল ১৫ মাসে যত হামাস যোদ্ধা নিহত হয়েছেন, সমানসংখ্যক সদস্য এরইমধ্যে সংগ্রহ করেছে সংগঠনটি।
বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, যুদ্ধবিরিত কার্যকর হলেও, প্রত্যাশিত ফল আসবে না। গাজার এই যুদ্ধ বা সংঘাত প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম পর্যন্ত প্রভাব ফেলবে।
চাথাম হাউসের সিনিয়র কনসালটিং ফেলো অধ্যাপক ইয়োসি মেকেলবার্গ বলেন, ‘পাল্টা প্রতিশোধ হিসেবে হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার যুক্তিসঙ্গত কারণ ছিল ইসরাইলের। এখন হামাস তরুণদের সংগঠনে নিয়োগ দিচ্ছে। নিরীহ ফিলিস্তিনিদের হতাহতের প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হামাস। তারা ইসরাইলের চেয়েও ভয়ঙ্কর রূপে পাল্টা প্রতিশোধ নিতে চায়। এভাবে প্রতিশোধের এই চক্র চলতে থাকবে। এই দুষ্টচক্র বন্ধ করতে উভয় পক্ষকে থামতে হবে।’
মার্কিন গোয়েন্দা সূত্র বলছে, হামাস নতুন করে আরও ১০ থেকে ১৫ হাজার যোদ্ধা নিয়োগ দিতে সক্ষম হয়েছে। যাদের মধ্যে অধিকাংশই তরুণ ও প্রশিক্ষণবিহীন। শুধু নিরাপত্তার জন্য তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে। ইসরাইলি সামরিক বাহিনী একদিকে তাদের অভিযান শেষ করে, অন্যদিকে হামাস পুনরায় সংগঠিত হয়। যার ফলে ইসরাইলকে একটা হুমকির মুখেই থাকতে হচ্ছে।
যুদ্ধবিরতির মধ্যে নিজেদের আরও সংগঠিত করেছে হামাস। অস্ত্রবিরতির চুক্তিকে নিজেদের সাফল্য হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন সংগঠনটির সামরিক শাখার এই মুখপাত্র।
হামাসের সামরিক শাখার মুখপাত্র আবু উবাইদা বলেন, ‘যুদ্ধ বন্ধ, বন্দী বিনিময়সহ চুক্তির সব শর্ত মেনে চলা নির্ভর করবে ইসরাইলিদের আচরণের ওপর। তারা কী ধরনের পদক্ষেপ নেয় সেটির ওপর আমরা নজর রাখছি। তারা চুক্তি ভঙ্গ করলে হামাসও ছেড়ে কথা বলবে না।’
ইসরাইল বলছে, হামাসের সদস্য সংখ্যা বাড়লেও, তাদের অস্ত্র ও প্রশিক্ষণের সুযোগ নেই। তারা ইসরাইলের বিরুদ্ধে কার্যত কিছুই করতে পারবে না। যুদ্ধে হামাসের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং প্রাণ হারিয়েছেন গোষ্ঠীর বেশিরভাগ সামরিক কমান্ডার। গাজার শাসনক্ষমতায় হামাসকে দেখতে চায় না ইসরাইলিরা।