গাজায় আগ্রাসনের জেরে হামাস ছাড়াও ইসরাইলের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে বিভিন্ন দেশের ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীরাও। এরমধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে লেবাননের হিজবুল্লাহ। পরেই আছে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা। তাদের অধিকার আদায়ে দখলদার ইসরাইলের বিরুদ্ধে এ লড়াইয়ে রসদ যুগিয়ে যাচ্ছে ইরান।
এ অবস্থায় অস্তিত্বের হুমকিতে ইসরাইল। তাই নিজেদের শক্তি বাড়ানো পদক্ষেপ হিসেবে ইরান ও তাদের সমর্থিত সশস্ত্রগোষ্ঠীগুলোর শীর্ষ নেতাদের টার্গেট করতে শুরু করে তেল আবিব। প্রায় এক বছরের যুদ্ধ উত্তেজনার মধ্যে সব মিলিয়ে হামাস, হিজবুল্লাহ ও ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডসের ১০ জনের বেশি শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিকে হত্যাও করেছে। যারা প্রত্যেকেই ইসরাইলের বিরুদ্ধে চলমান লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন।
সবশেষ ইসরাইলে শিকার হলেন লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ। ঠিক এক সপ্তাহ আগে একই কায়দায় বিমান হামলা চালিয়ে হত্যা করা হয় হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডার ইব্রাহিম আকিলকে। তারও আগে গত জুলাইয়েই হত্যা করা হয় তিন তিনজন শীর্ষ নেতাকে। এর মধ্যে ছিলেন ৭ অক্টোবর ইসরাইলে আচমকা হামলা চালানোর অন্যতম মাস্টারমাইন্ড মোহাম্মদ দায়েফ। এরপর বৈরুতে হিজবুল্লাহ কমান্ডার ফুয়াদ শোকার ও ইরানে হামলা চালিয়ে হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাইল হানিয়াকে হত্যা করতে সক্ষম হয় ইসরাইল।
লেবাননে বিভিন্ন ডিভাইস বিস্ফোরণে বহু হতাহতের পর হিজবুল্লাহ-ইসরাইল সংঘাত উত্তেজনা চরম পর্যায় পৌঁছায়। এবার হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহকে হত্যায় সফল হওয়ায় নিজেদের জন্য 'ঐতিহাসিক পটপরিবর্তন' হিসেবে দেখছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু। নিউইয়র্কে থেকেই হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন বলেও নিশ্চিত করেন তিনি। এমনকি ইরান বা মধ্যপ্রাচ্যে যেকোনো দেশ হুমকি হয়ে দাঁড়াতে চাইলে সেখানেও ইসরাইল হামলা চালাতে সক্ষম বলে হুঁশিয়ারিও দেন নেতানিয়াহু।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমরা হাসান নাসরাল্লাহকে নির্মূল করেছে। আমরা এমন একজনের সাথে হিসাব নিষ্পত্তি করেছি যে অগণিত ইসরাইলি এবং কয়েকশ আমেরিকান ও বহু ফরাসিসহ বিভিন্ন দেশের অনেক নাগরিককে হত্যার জন্য দায়ী ছিলেন। তাই আমার নির্দেশেই নাসরাল্লাহকে টার্গেট করে হামলা চালানো হয়েছিলো। এতে আমরা সফলও হয়েছি।’
এমন যুদ্ধ উত্তেজনার মধ্যে হাসান নাসরাল্লাহর মৃত্যু হিজবুল্লাহ'র জন্য সবচেয়ে বড় ধাক্কা হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। কারণ ভয়াবহ ডিভাইস বিস্ফোরণের ঘটনার পর একদিকে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষায় দুর্বল হয়ে পরেছে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। সেই কাটিয়ে ওঠার আগেই হারালো প্রধান দিক নির্দেশককে। তবে এখনও অনেক দক্ষ কমান্ডার, অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র মজুত থাকায় হিজবুল্লাহ এই ক্ষত খুব দ্রুতই কাটিয়ে উঠতে পারবে বলে মনে করছেন সামরিক বিশ্লেষকরা। এমনকি নাসরাল্লাহ হত্যাকাণ্ডকে মধ্যপ্রাচ্যে একটি বড় সংঘাতের ট্রিগার পয়েন্ট হিসেবেও বর্ণনা করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
সামরিক বিশ্লেষক পল মুরক্রাফট বলেন, ‘এটি মধ্যপ্রাচ্যে একটি বড় সংঘর্ষের ট্রিগার পয়েন্ট হতে পারে। হিজবুল্লাহ অনেক শক্তিশালী ভালো বাহিনী। তারা ইরানের কাছ থেকে অনেক ভালো প্রশিক্ষণ পেয়েছে। মনোবলও অনেক শক্ত। আমি মনে করি তারা লড়াই থেকে পিছু হটবে না। তারা অবশ্যই নাসরাল্লাহ হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে একটি পদক্ষেপ নেবে।’
এমন কঠিন মুহূর্তে কীভাবে হিজবুল্লাহর পাশে দাঁড়াবে ইরান? কিংবা ইসরাইল-হিজবুল্লাহ'র মধ্যকার সংঘাত উত্তেজনার পারদ আর কতটুকু উপরে উঠলে তেহরান সরাসরি হস্তক্ষেপ করবে তা নিয়েও প্রশ্ন তুঙ্গে। তবে নাসরাল্লাহকে হত্যার জেরে ইসরাইলকে যে কঠিন জবাব দিতে ইরান যে পা বাড়াবে তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। কারণ এটি না করলে ইরান নিজেই অস্তিত্ব হুমকিতে পড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রশ্ন উঠবে সামরিক শক্তি সক্ষমতা নিয়েও।