আবারও বড় ধাক্কা লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর বহরে। রাজধানী বৈরুতে মঙ্গলবারের বিমান হামলায় প্রাণ হারান সংগঠনটির অন্যতম শীর্ষ নেতা ইব্রাহিম কুবাইসি, যার নেতৃত্বে চলছিল গোষ্ঠীটির ক্ষেপণাস্ত্র বাহিনী।
লেবাননে ইসরাইলের বিমান ও গুপ্ত হামলার জবাবে সীমান্তের ওপারে অব্যাহত হিজবুল্লাহ'র রকেট হামলাও। সময়ের সঙ্গে জোরালো হচ্ছে সংঘাত- যা পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে রূপ নেয়ার শঙ্কা। ওদিকে শুধু সোমবারের হামলায় মৃত্যুর মিছিল আরও দীর্ঘ হয়েছে, নিহতের তালিকায় নারী ও শিশুর সংখ্যা দেড়শ'; ইসরাইলি বোমাবর্ষণ থেকে প্রাণে বাঁচতে ঘর ছাড়ছেন লাখ লাখ মানুষ, জানিয়েছে জাতিসংঘ।
আমাদের অবস্থা হয়ে গেছে রাস্তায় পড়ে থাকা ময়লা-আবর্জনার মতো। হামলা চলছে, মাথার উপর বিমান উড়ছে। যুদ্ধের ধ্বংসলীলা চলছে। এক বছর ধরেই ভুগছিলাম। শেষ পর্যন্ত ঘরও ছাড়তে হলো।
নতুন করে ইসরাইলের হিজবুল্লাহ-বিরোধী অভিযানে শঙ্কা বাড়ছে, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় শাসকদল হামাসের সঙ্গেও ইসরাইলের যুদ্ধ আরও তীব্র হবে এবং অস্থিরতা ছড়াবে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে। এরই মধ্যে জাতিসংঘ মহাসচিবকে দেয়া চিঠিতে হামাস আর কোনো অস্ত্রবিরতির আলোচনায় অংশ নেবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। আলোচনা হলেই ইসরাইল আগ্রাসন ধামাচাপা দেয়ার সুযোগ পাবে বলেও অভিযোগে হামাসের।
এমন পরিস্থিতিতে লেবাননে অবস্থানরত ব্রিটিশ নাগরিকদের সরিয়ে নিতে তৎপরতা শুরু করেছে যুক্তরাজ্য; সেনা পাঠাচ্ছে সাইপ্রাসে। হিজবুল্লাহ-ইসরাইল সংঘাত চাইলেই থামাতে পারে যুক্তরাষ্ট্র, বলছে লেবানন। যদিও জাতিসংঘে বিশ্বনেতাদের উপস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা রক্ষার কথা বললেও লেবানন ইস্যুতে তেমন আশার বাণী শোনাননি ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ মিত্র মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা জোরদারে কাজ করছি আমরা। পুরো অঞ্চলে আরও বড় যুদ্ধ ঠেকানোর বিষয়ে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে কোনো পক্ষেরই কল্যাণ নেই। পরিস্থিতির অবনতি হলেও কূটনৈতিক সমাধানে পৌঁছানো এখনও সম্ভব। প্রকৃতপক্ষে স্থায়ী নিরাপত্তা নিশ্চিতের এটাই একমাত্র পথ।’
লেবাননের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দাল্লাহ বু হাবিব বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি পরিবর্তন এবং লেবানন ইস্যুতে ব্যবস্থা নিতে পারতো কেবল যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রই আমাদের মুক্তির চাবিকাঠি। যে ধরনের পরিস্থিতিতে আমরা আছি, এভাবে চলতে পারে না। অথচ এ বিষয়ে জো বাইডেন কোনো শক্ত কথা বলেননি, তার কথায় কোনো আশ্বাস ছিল না এবং এতে লেবাননের সমস্যার সমাধান হবে না।’
শান্তির জন্য বিশ্ব রাজনীতিতে সবচেয়ে প্রতাপশালী যুক্তরাষ্ট্রের দিকে তাকিয়ে থাকলেও, মার্কিন প্রশাসনের মদদেই গাজার পর লেবাননে আগ্রাসন চালানোর শক্তি পেয়েছে ইসরাইল, বলছেন বিশ্লেষকরা।
অতিরিক্ত অধ্যাপক, আমেরিকান ইউনিভার্সিটির অতিরিক্ত অধ্যাপক সাইদ আরিকাত বলেন, ‘আমার মনে হয় না যে এনিয়ে বিভ্রান্তি কিংবা স্ববিরোধী কথাবার্তার সুযোগ আছে। স্পষ্টভাবেই ইসরাইলের সমর্থন দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র সবুজ সংকেত না দিলে ইসরাইল কখনোই এ ধরনের হামলা চালাতে পারতো না।’
প্রায় এক বছর ধরে গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে গেলেও এখনও উপত্যকার বিভিন্ন সুড়ঙ্গ থেকে বেরিয়ে আসছে হামাস যোদ্ধারা, ইসরাইলি সেনাদের ওপর হামলা চালাচ্ছে এবং বন্দিদের আটকে রেখেছে। এ অবস্থায় নিজ দেশে জনগণের ব্যাপক তোপের মুখে থাকা ইসরাইলি রাজনীতিবিদদের দরকার একটি বিজয়।
তাই গাজায় ব্যর্থতার জেরে লেবাননে নতুন যুদ্ধের সূচনা করেছে ইসরাইল, উঠছে এমন অভিযোগও। বরাবরের মতোই সব সমালোচনা-অভিযোগ উপেক্ষা করে লেবানিজ ভূখণ্ডে আগ্রাসনও সময়সাপেক্ষ হতে পারে বলে জানিয়েছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী।