গাজার খান ইউনিসের একটি শরণার্থী শিবিরের বাইরে কিশোরীদের বক্সিং শেখাচ্ছেন ফিলিস্তিনের একজন প্রশিক্ষক।
গেল ৯ মাসে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে ফিলিস্তিনের এই বিশেষ অঞ্চলটি। জাতিসংঘ পরিচালিত প্রায় ৭০ শতাংশ স্কুল গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইসরাইলি সেনারা। গেল ১০ দিনে হামলা হয়েছে প্রায় ৮টি স্কুলে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে একাধিক অবকাঠামো, ইনডোর খেলার মাঠ ও প্রশিক্ষণের সরঞ্জাম। তবে এত কিছুর পরেও থামতে না নারাজ এই কিশোরী বক্সারের দল।
একজন কিশোরী বলেন, 'যখন বক্সিং শিখতে শুরু করি, তখন পরিস্থিতি এমন ছিল না। আমাদের ক্লাব ছিল, প্রশিক্ষণের সরঞ্জাম ছিল। ইসরাইলি সেনারা সব ধ্বংস করে ফেলেছে।'
প্রশিক্ষণে অংশ নেয়া কিশোরীরা মনে করে, বক্সিং শিখতে পারলে তাদের আত্মবিশ্বাস যেমন বাড়বে তেমনি লড়াই করার মনোবলও দৃঢ় হবে। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক বক্সিং টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার স্বপ্নও দেখছে তারা।
একজন বক্সার বলেন, 'আশা করি আমাদের কথা সবার কাছে পৌঁছাবে। বক্সিংয়ের সাথে প্যালেস্টিনিয়ান ফেডারেশনের সম্পর্ক অনেক পুরনো। আমরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার স্বপ্ন দেখি।'
খোলা আকাশের নিচে বক্সিং শেখার ঝুঁকি অনেক। গেল সপ্তাহে শরণার্থী শিবিরের বাইরে ফুটবল খেলার আয়োজন করে একদল ফিলিস্তিনি তরুণ। এ সময় ইসরাইলি মিসাইল কেড়ে নেয় ২৯ জন তরুণের প্রাণ। তবে হামলার ভয়ে ঘরে বসে থাকতে রাজি নন বক্সিং কোচ ওসামা আইয়ুব।
তিনি বলেন, 'মেয়েরা দারুণ খুশি। এতে ওদের পরিবারের সম্মতি আছে। প্রশিক্ষণ শুরুর পর থেকে মেয়েদের সাহস বেড়ে গেছে। রাতে ওরা একা একা চলাফেরা করে। যুদ্ধ সবাই ভয় পায়। কিন্তু আত্মরক্ষা জানা থাকলে সাহসের কোনো কমতি থাকে না।'
বক্সিং রিং তো দূরের কথা যে পাঞ্চিং ব্যাগে আঘাত করে হাত শক্ত করতে হয় সেটাও জোগাড় করতে পারেন নি কোচ ওসামা। দাঁতের ক্লিপ, হাতের গ্লাভস ছাড়া বিছানার তোশক বা বালিশে আঘাত করে চলছে মুষ্টিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ। তবে, এসবের উদ্দেশ্য আসলে বক্সিং শেখা নয়। ফিলিস্তিনের মেয়েরা যেনো শত্রুর মোকাবিলা করতে পিছপা না হয়, শত্রুর আঘাত প্রতিহত করতে পারে- এটুকু নিশ্চিত করতেই মাঠে নেমেছেন অভিজ্ঞ এই প্রশিক্ষক।
ওসামা বলেন, 'খেলাধুলার সমস্ত সরঞ্জাম ধ্বংস হয়ে গেছে। একসময় আমাদের সবকিছু ছিল। খেলার মাঠ ছিল, খেলোয়াড়দের বিশ্রাম নেয়ার জায়গা ছিল। বক্সিং, টেনিস, কারাতে সব কিছু ছিল। ইসরাইলি সেনারা সব শেষ করে দিয়েছে।'
ইসরাইল-হামাস সংঘাত শুরুর আগে, ৭ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশু ও কিশোরীদের নিয়ে নিয়মিত বক্সিং টুর্নামেন্টের আয়োজন হয়েছে গাজায়। বক্সিং ক্লাবে কিশোরী বক্সারদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। ২০২১ সালে কুয়েতে আয়োজিত বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপেও সুনাম কুড়িয়েছেন ফিলিস্তিনি নারীরা। তবে এই মুহূর্তে ফিলিস্তিনিদের সংগ্রাম কোনো ট্রফির জন্য নয়, বেঁচে থাকার তাগিদেই লড়াই করতে শিখছে কিশোরীর কোমল হাত।