মধ্যপ্রাচ্য
বিদেশে এখন
0

ফিলিস্তিনের রাজস্ব আয় আটকে দিয়েছে ইসরাইল

অর্থ সংকটে নাজেহাল ফিলিস্তিনের অর্থনীতি

নভেম্বর থেকে প্রতি মাসে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ১৮ কোটি ডলারের বেশি রাজস্ব আয় আটকে দিচ্ছে ইসরাইল। এসব অর্থ ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে না দিয়ে নরওয়ে ভিত্তিক একটি ট্রাস্ট অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হবে বলে জানিয়েছে তেল আবিব।

ফিলিস্তিনিদের ওপর শুধু নির্যাতনই নয় তাদের অর্থনীতিতে দশকের পর দশক ধরে হস্তক্ষেপ করে আসছে ইসরাইল।

ইতিহাস বলছে- শান্তির জন্য ১৯৯৩ সালের সেপ্টেম্বরে হোয়াইট হাউসে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী ইতজাক রাবিনের সঙ্গে দেখা করেন ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাত। তখনকার আলোচনার ভিত্তিতে ১৯৯৪ সালে ইসরাইল এবং ফিলিস্তিনি অঞ্চলগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক পরিচালনায় একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। যার অধীনে ইসরাইল ফিলিস্তিনি কর্মীদের পক্ষ থেকে কর ‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌সংগ্রহ করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর প্রতি মাসে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাতো।

চুক্তিটি পাঁচ বছর মেয়াদী হওয়ার কথা থাকলে ৩০ বছর ধরে ফিলিস্তিনিদের কর রাজস্ব নিয়ন্ত্রণে হস্তক্ষেপ করে আসছে ইসরাইল। ২০০৭ সালে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে হটিয়ে হামাসের হাতে গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ যাওয়ার পরও ভূখণ্ডটিতে এর ধারাবহিকতা অব্যাহত থাকে। আর এটিকে ফিলিস্তিনে রাজস্ব আয় সংগ্রহের ওপর একটি অসম প্রভাব হিসেবে দেখছে জাতিসংঘ। যা ফিলিস্তিনের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাবের জন্য অনেকাংশেই দায়ী মনে করা হয়।

গত বছরের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরাইলে হামাসের অতর্কিত আক্রমণের পর পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়। আগ্রাসনের মাত্রা বাড়ানোর পাশাপাশি নভেম্বর থেকে গাজায় কর্মরত ফিলিস্তিনি সরকারি কর্মকর্তাদের করের অর্থ জব্দ করতে শুরু করে ইসরাইল। প্রতি মাসে সেই পরিমাণ দাঁড়ায় ১৮ কোটি ডলারের ওপরে। যা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের মোট রাজস্বের ৬৪ শতাংশ।

ইসরাইলের আটকে দেয়া তহবিলের বড় অংশই পশ্চিম তীর এবং গাজায় কর্মরত দেড় লাখের বেশি ফিলিস্তিনি কর্মচারীর বেতন পরিশোধে ব্যয় হতো। যার ওপর গাজার নিয়ন্ত্রকদের কোনো হস্তক্ষেপ ছিলো না। তবুও বড় অংকের এ তহবিল ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর না করে তা নরওয়েতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় ইসরাইল।

প্যালেস্টাইন ইকোনমিক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্য বলছে- কর রাজস্বের কতটা গাজায় যায়, সে সম্পর্কে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছেও সঠিক হিসেব নেই। বিষয়টি অনেক বছর ধরেই অন্ধকারে রয়েছে। কখনও বলা হয় ৩০ শতাংশ, কখনও ৪০ আবার কখনও ৫০ শতাংশের দাবি করা হয়।

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে ব্ল্যাকমেইল এবং শাস্তি দেয়ার জন্য কর নিয়ন্ত্রণকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে আসছে ইসরাইল। ২০২৩ সালে দেশটিতে ডানপন্থী সরকার ক্ষমতায় আসলে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রায় ৪ কোটি ডলারের কর রাজস্ব বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে যার প্রমাণ মেলে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, কয়েক দশক ধরে দখলদারিত্বকে বৈধতা দিতে সব দিক থেকে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল।