যুক্তরাষ্ট্রকেও তোয়াক্কা করছে না নেতানিয়াহু

0

গাজার দক্ষিণাঞ্চলের খান ইউনিস শহর ও পশ্চিম তীরে হামলা জোরদার করেছে ইসরাইলি বাহিনী।

গাজার শরণার্থী শিবিরগুলো এখন লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে ইসরাইলিদের। গাজার দক্ষিণাঞ্চলের রাফাহ, জাবালিয়া ও আল-বুরেজ ক্যাম্পগুলো দাউ দাউ করে জ্বলছে। রাতভর বোমা ও বিমান হামলা চালিয়ে হত্যা করেছে শত শত ফিলিস্তিনিকে। পশ্চিম তীর ও খান ইউনিস শহরে একযোগে হামলা চালাচ্ছে ইসরাইলি সেনারা। গাজার অন্যতম উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইসরা বিশ্ববিদ্যালয় বোমা বিস্ফোরণে গুঁড়িয়ে গেছে। শঙ্কা দেখা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ নিয়ে।

গত এক সপ্তাহ ধরে বন্ধ আছে গাজা উপত্যকার টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা। উত্তরাঞ্চলে তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। হাসপাতালেও জায়গা হচ্ছে না আহতদের। ইউনিসেফ বলছে, গাজার মানবিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক পর্যায়ে নেই। নারী ও শিশুদের সুরক্ষায় অবিলম্বে মানবিক যুদ্ধবিরতি দরকার। বাস্তুচ্যুত ২৩ লাখ ফিলিস্তিনি খাদ্য, পানি ও ওষুধের জন্য প্রতিদিনই লড়াই চলছে।

এমন অবস্থায় ইসরাইলিদের থামানোর সব চেষ্টাই যেনো ব্যর্থ হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এমনকি ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের চাপকেও বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে নেতানিয়াহুর সরকার। নেতানিয়াহু আবারও জোর দিয়ে বলেন, তার পরিকল্পনায় স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের কোনো বিষয় নেই। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের চাপ তিনি গায়ে মাখছেন না। বাইডেনের সঙ্গে ফোনালাপ নিয়ে এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহু জানান, হামাস নিমূর্লের পরও গাজার ওপর ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে হবে।

জাতিসংঘ বলছে, ফিলিস্তিনি জনগণের নিজস্ব রাষ্ট্র গড়ার অধিকারে সবার স্বীকৃতি দেয়া উচিৎ। জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের শীর্ষ সম্মেলনে নেতানিয়াহুর বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানান সংস্থার মহাসচিব। ফিলিস্তিনি ইস্যু বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠেছে। সংস্থাটির ১২০ সদস্য দেশের নেতারা অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বানও জানান।

জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন,'দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানে অস্বীকৃতি ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকারকে অস্বীকার করা। যা অগ্রহণযোগ্য। যা সংঘাতকে আরও দীর্ঘায়িত করবে এবং বিশ্ব শান্তিকে হুমকির দিকে নিয়ে যাবে। ফিলিস্তিনি জনগণের আলাদা রাষ্ট্র গঠনের অধিকার আছে।'

গাজা উপত্যকায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ আরও একটি টানেল আবিষ্কারের দাবি করেছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। তাদের ধারণা, এই টানেলটি জিম্মিদের বন্দি করে রাখার জন্য ব্যবহার করেছিল হামাস। সুড়ঙ্গের প্রবেশদ্বার খান ইউনিস শহরের হামাস সদস্যের বাড়িতে ছিল।

ইসরাইলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বলেন, 'সুড়ঙ্গের ভেতরে ভয়ানক অন্ধকার ও বিস্ফোরক দ্রব্যে পরিপূর্ণ ছিল। এর ভেতরে নিঃশ্বাস নেয়া কঠিন। এমন ভয়ঙ্কর পরিবেশে প্রায় ২০ জন বন্দিকে আটকে রেখেছিল হামাস। এটি এমনভাবে তৈরি যেখানে সহজে কেউ প্রবেশ করতে পারবে না।'

বন্দিদের ফিরিয়ে আনতে ইসরাইলের রাজধানী তেল আবিবে বিক্ষোভ করেছে কয়েক হাজার মানুষ। তাদের অভিযোগ, জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার চেয়ে যুদ্ধের দিকে বেশি মনোযোগ দিয়েছে নেতানিয়াহু সরকার।

এদিকে, ইসরাইলি হামলায় আরও ১৬৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এ নিয়ে মোট প্রাণহানি প্রায় ২৫ হাজারে দাঁড়িয়েছে।