ইউরোপ , এশিয়া
বিদেশে এখন
0

বিকল্প লেনদেন ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব ভ্লাদিমির পুতিনের

ব্যবহারযোগ্য মুদ্রা চালুতে অনেক পিছিয়ে ব্রিকস

যুক্তরাষ্ট্র যেন ডলারকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে, সে লক্ষ্যে ব্রিকস সদস্য দেশগুলোর জন্য বিকল্প লেনদেন ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। একে সদস্য দেশগুলো স্বাগত জানালেও ভারত, ব্রাজিলের মতো দেশগুলো ডলার বাদ দিয়ে চীন কিংবা পশ্চিমবিরোধী কোন লেনদেন ব্যবস্থায় যেতে চাইছে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, ডলারের বিকল্প হিসেবে ব্যবহারযোগ্য মুদ্রা ব্যবস্থা চালু থেকে এখনও অনেক পিছিয়ে ব্রিকস।

বিশ্বের আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আর বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সম্মেলনের আগেই চলছে ব্রিকস সম্মেলন। বিশ্বের আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থায় ডলারের আধিপত্যকে বুড়ো আঙুল দেখানোই মূলত এই সম্মেলনের মূল আলোচ্যসূচি।

দশকের পর দশক ধরে আন্তর্জাতিক লেনদেন ব্যবস্থায় একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে আছে ডলার। যে কারণে মতের অমিল হলে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় পড়লেই আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরিচালনায় বিপাকে পড়তে হয় অনেক দেশকে। এই পরিস্থিতি উত্তরণে বহু আগে থেকেই চেষ্টা চালিয়ে আসছে পশ্চিমা বিরোধী জোট ব্রিকস।

রাশিয়ার কাজানে ১০ সদস্যের এই জোটের ১৬ তম সম্মেলনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রস্তাব দিয়েছেন ডলারের বিকল্প আন্তর্জাতিক লেনদেন ব্যবস্থা চালুর। যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ডলারকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, এমন লেনদেন ব্যবস্থা চালু করতে হবে যেন ব্রিকসভুক্ত দেশগুলো সুফল পায়। ব্রিকসের নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংককে স্থানীয় মুদ্রায় লেনদেনকে উৎসাহিত করতে হবে।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, ‘উন্নত দেশগুলোতে ঋণের বোঝা বাড়ছে। অন্য দেশের ওপর তাদের নিষেধাজ্ঞার মাত্রাও বাড়ছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আর সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগে পিছিয়ে পড়ছি আমরা । আমাদের নতুন বিনিয়োগের প্লাটফর্ম তৈরি করতে হবে। যৌথ অর্থনৈতিক লেনদেন ব্যবস্থা চালু করতে হবে। ডলারকে অন্য দেশগুলোর ওপর রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে দেয়া যাবে না ।’

ব্রিকসভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে আর্থিক সম্পর্ক জোরদারে গুরুত্ব দেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিক অবকাঠামো দেশগুলোর আর্থিক নিরাপত্তার জন্য জরুরি হয়ে পড়েছে।’ নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক শক্তিশালী হচ্ছে, আন্তর্জাতিক লেনদেন ব্যবস্থায় জায়গা করে নিচ্ছে বলেও জানান তিনি।

চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, ‘অর্থনৈতিক অবকাঠামো তৈরিতে অতুলনীয় ভূমিকা রাখছে ব্রিকস। নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের আওতায় আমাদের একটি নিরাপদ আর্থিক ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। আন্তর্জাতিক লেনদেন ব্যবস্থাকে এমন পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে যেন বিশ্বের অর্থনৈতিক অবকাঠামোতে সেটা স্পষ্ট বোঝা যায়।’

এসময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘সদস্যদেশগুলোর মধ্যে নিজস্ব মুদ্রায় লেনদেন ব্যবস্থা চালু হলে ডলারের ওপর ব্রিকসভুক্ত দেশগুলোর নির্ভরশীলতা কমবে।’

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘ব্রিকসভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থাকে স্বাগত জানাই বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নীতি অনুযায়ী, চলতি বছর ব্রিকসভুক্ত দেশগুলো নিজেদেরও মধ্যে অর্থনৈতিক সমঝোতা বাড়াবে। রুশ নেতৃত্বে যেকোনো অংশীদারিত্ব চুক্তিকে আমরা স্বাগত জানাই ।’

যদিও বিশ্লেষকরা বলছেন, পুতিনের ডলারবিমুখতা আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থায় সাময়িকভাবে সাড়া দিলেও অস্বস্তিতে আছে ভারত, ব্রাজিলের মতো দেশগুলো। কারণ ডলার থেকে বেরিয়ে তারা নতুন করে চীনমুখী কিংবা পশ্চিমাবিমুখ কোন আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থায় যেতে আগ্রহী না। এমন লেনদেন ব্যবস্থা থেকে ব্রিকস সদস্যরাষ্ট্রগুলো এখনও অনেক দূরে বলেও জানান তারা।

আটলান্টিক কাউন্সিলের জ্যেষ্ঠ পরিচালক জশ লিপস্কি বলেন, ‘ব্রিকসের পুরোনো কিংবা নতুন সদস্য, সবগুলো দেশই ডলারের বিকল্প বের করা থেকে অনেক দূরে। এই প্রক্রিয়া খুব জটিল আর বাস্তবায়ন করা কঠিন। তাদের লক্ষ্য শুধু বিকল্প মুদ্রা নয়, বিকল্প লেনদেন ব্যবস্থা । ব্রিকস কারেন্সি নিয়ে এখানে কথা হচ্ছে না। কারণ সেটা সম্ভব না। তারা নিজস্ব মুদ্রায় বাণিজ্য করতে চ্যানেল তৈরি করতে পারবে। ডলার ব্যবহার করতে হবে না। নিজস্ব মুদ্রায় লেনদেন আর মুদ্রা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা এক বিষয় না। তবে পুতিনের পদক্ষেপে মনোযোগ দিতে হবে।’

ব্রিকস সদস্য দেশগুলোর ওপর বিশ্বের মোট আর্থিক প্রবৃদ্ধির ৩৫ শতাংশ নির্ভর করে। এই জোটের মূল লক্ষ্য, বিশ্বে এমন একটি ব্যবস্থা তৈরি করা যেখানে সব দেশকে সমানভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়। ২০২৫ সালে এই জোটের সম্মিলিত প্রবৃদ্ধি হবে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ।