ইউরোপ
বিদেশে এখন

বিশ্বের ২০ শতাংশ বিদ্যুৎ খরচ হয় এসি ও ফ্যানে

বাসাবাড়িতে এয়ারকন্ডিশনার ও বৈদ্যুতিক ফ্যান সচল রাখতে ব্যবহার হচ্ছে বিশ্বের ২০ শতাংশ বিদ্যুৎ। বিপুল এই শক্তি তৈরিতে একদিকে ব্যবহার হচ্ছে জীবাশ্ম জ্বালানি, অন্যদিকে বাড়ছে গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ। এ অবস্থায় কার্বন নিঃসরণ কমানো ও প্রতিকূল আবহাওয়ায় মানানসই বাড়ির মডেল উদ্ভাবনে জোর দিয়েছেন স্থপতিরা।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রতিনিয়তই পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ছে। ধরিত্রী আগুনের গোলায় পরিণত হচ্ছে। অসহনীয় আবহাওয়া থেকে মুক্তি পেতে এয়ার কন্ডিশনারের ব্যবহার বাড়ছে। এতে পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ছে গ্রিন হাউজ গ্যাস। বাড়িকে ঠাণ্ডা রাখতে বিভিন্ন পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি তৈরি হলেও ব্যয়বহুল হওয়ায় অনেক ভোক্তার নাগালের বাইরে থেকে যাচ্ছে তা।

বৈশ্বিক উষ্ণায়নের যুগে বাড়িকে সুরক্ষিত রাখতে উইপোকার শরণাপন্ন হয়েছেন এক সুইডিশ স্থপতি। ছোট্ট এই পতঙ্গের তৈরি করা ঢিবির আদলে মানুষের বাড়ি তৈরি করতে যাচ্ছেন স্থপতি ডেভিড আনদ্রিন।

বিশ্বজুড়ে উইপোকার প্রায় ২ হাজার ৮০০ প্রজাতি রয়েছে। উষ্ণ ও আর্দ্র অঞ্চলগুলোতে পাওয়া যায় এই পতঙ্গগুলোকে। ডাইনাসোরের সময়কার পতঙ্গ হলেও ঝরে পড়া পাতা, কাঠ ও ঘাসের সেলুলোজ খেয়ে জীবন ধারণ করায় এখনও টিকে আছে উইপোকা। বালি, মাটি কিংবা কাঠের মধ্যে ঢিবি তৈরি করায় পতঙ্গগুলো প্রতিকূল আবহাওয়ায় জীবনধারণ করতে পারে।

উইপোকার ঢিবিকে অনেকে শিল্পকর্মের সঙ্গে তুলনা করেন। জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঢিবিতে তৈরি করা হয় আন্ত:সম্পর্কিত টানেল, চ্যানেল ও চেম্বার। ফলে এর ভেতরে সবসময় বাতাসের প্রবাহ থাকে। সুইডেনের লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও স্থপতি ডেভিডকেও ভাবিয়ে তোলে উইপোকার ঢিবি গঠনের প্রক্রিয়া। ভারত ও নামিবিয়ায় ঘুরতে গিয়ে পর্যবেক্ষণ করেন উইপোকার ঢিবি। দেশে ফিরে লেগে পড়েন ঢিবির আদলে বাড়ি তৈরির কাজে।

ডেভিড আনদ্রিন বলেন, 'উইপোকার ঢিবির কারণে আমরা জটিল ও জ্যামিতিক আকৃতির বাড়ি কিভাবে তৈরি করা সম্ভব, তার ধারণা পেয়েছি। একইসঙ্গে বাড়ির মডেলও পাচ্ছি। তাই উইপোকার বাড়ি বানানোর প্রক্রিয়া গবেষণা করা চমকপ্রদ বিষয়।'

বিভিন্ন দেশ থেকে উইপোকার ঢিবির স্তূপ সংগ্রহ করে ডেভিড এগুলো পরীক্ষা করেন সিটি স্ক্যানারে। একসময় ত্রি-মাত্রিক প্রিন্টারের মাধ্যমে তৈরি করেন ঢিবির অনুরূপ মডেল, যেখানে আঠার বদলে প্রকোষ্ঠগুলো সংযুক্ত হয়ে আছে প্রাকৃতিক ছত্রাক বা মাইসেলিয়ামের মাধ্যমে।

ডেভিড আরও বলেন, 'থ্রিডি প্রিন্টারের মাধ্যমে কাঠ ও ফাঙ্গাস দিয়ে তৈরি করা মডেলের মধ্যে এটি অন্যতম। এখানে আঠা, প্লাস্টিক বা পলিমার ব্যবহার করা হয়নি। বরং এটি মাইসেলিয়ামের একটি নেটওয়ার্ক।'

আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থার তথ্য বলছে, বাসাবাড়িতে এয়ারকন্ডিশনার ও বৈদ্যুতিক ফ্যান সচল রাখতে ব্যবহার হচ্ছে বিশ্বের ২০ শতাংশ বিদ্যুৎ। যার অধিকাংশই আসছে তেল, গ্যাস ও কয়লার মতো জীবাশ্ম জ্বালানির মাধ্যমে। এতে হুমকির মুখে পড়ছে বৈশ্বিক জলবায়ু।

শুধু মডেল তৈরিতেই ক্ষান্ত নন ডেভিড, তৈরি করতে চান পরিবেশবান্ধব বাড়ি। সুইডিশ স্থপতির আশা, থ্রিডি প্রিন্টারের ক্রমাগত উন্নতির মাধ্যমে একদিন উইপোকার ঢিবির মতো বাড়ি চলে আসবে মানুষের হাতের নাগালে।

এমএসআরএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর